দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : শেষ পর্য়ন্ত 'পেহরেদার পিয়া কি' নামক সিরিয়ালটি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের সনি টিভি। সনি এনটাইরটেইনমেন্ট টেলিভিশন ঘোষণা দিয়েছে, তারা এর প্রচার বন্ধ করে দিচ্ছে। যদিও এটি বন্ধ করার বিষয়ে কোনো কারণ উল্লেখ করে নি কর্তৃপক্ষ।

সনি টিভিতে চলতি বছর জুলাই থেকে দেখানো হচ্ছিল এই সিরিয়াল। কিন্তু শুরু থেকেই এটি ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কারণ, নাটকটিতে অসম বয়সের প্রেম দেখানো হচ্ছিল, যা শালীনতার মাত্রাও ছাড়িয়ে যাচ্ছিল অনেক সময়।

সিরিয়ালটির কাহিনী অনেকটা বাংলা লোককাহিনী রূপবানের মতো।

রাজপরিবারের সুন্দরী রাজকুমারী দিয়া। প্রথম দর্শনেই তার প্রেমে পড়েছে নয় বছরের বালক রতন কানওয়ার। রাজকুমারী দিয়ার পিছু পিছু ঘুরে বেড়ায় রতন। তার ছবি তোলে। তাকে 'তেলাপোকা'র কবল থেকে বাঁচায়। তরুণী রাজকুমারী তার নয় বছরের 'প্রেমিকের' গাল টিপে দেয়, চুমু খায়। প্রেমিকের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে রসিকতা করে। এর মধ্যে রাজপ্রাসাদে চলে নানা ষড়যন্ত্র। দুষ্টু আত্মীয়দের ষড়যন্ত্রে নিহত হন রতনের মা, গুরুতর আহত হন তার বাবা। মৃত্যুশয্যায় রতনের বাবা রাজকুমারী দিয়ার কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেন তার ছেলেকেই যেন বিয়ে করে সে।

কিন্তু এই অসম প্রেমের কাহিনী টিভিতে দেখানো নিয়ে শুরু থেকেই তীব্র আপত্তি উঠে। এটিতে বাল্যবিয়েকে মহিমান্বিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন অনেকে।

মুম্বাই ভিত্তিক একটি এনজিও ‘জয় হো ফাউন্ডেশন’ শুরু থেকেই এটি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছিল। তাদের দাবি, এটি শিশুদের জন্য মোটেই উপযোগী নয়। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এটির সমালোচনা চলছিল।

মেঘা মাথুর নামের একজন ভারতীয় সাংবাদিকের মতে, এই টিভি সিরিয়ালটির প্রথম কয়েকটি পর্ব যখন দেখানো হয়, তখনো পর্যন্ত জনমত ছিল বিভক্ত। নয় বছরের শিশুটি ১৮ বছরের তরুণীর পেছনে লেগেছে বলে সমালোচনা করছিলেন অনেকে। কিন্তু অন্য অনেকে আবার এটি পছন্দ করছিলেন। কিন্তু পঞ্চম পর্বে যখন ছেলেটি একজন পরিণত প্রেমিকের মতো আচরণ শুরু করলো, তখন আর অনেকে এটা মেনে নিতে পারছিলেন না।

এর বিরুদ্ধে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানীর কাছে অনেক অভিযোগ আসতে থাকে। জয় হো ফাউন্ডেশন এক চিঠিতে বলে, ‘একটি শিশু তার দ্বিগুণ বয়সের এক তরুণীকে আলিঙ্গন করছে, তার পেছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে এক ধরণের যৌন সম্পর্ক তৈরি করছে- একটি শিশুকে এখানে অত্যন্ত অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।’

অনলাইনে এটির বিরুদ্ধে এক আবেদনে সই করেন এক লাখের বেশি মানুষ। এরপর সম্প্রচার মন্ত্রী ভারতের ব্রডকাস্টিং কনটেন্ট কমপ্লেইন্ট কাউন্সিলের (বিসিসিসি) কাছে চিঠি লিখেন।

বিসিসিসি এরপর নির্দেশ দেয় টিভি সিরিয়ালটি যেন রাত সাড়ে আটটার পরিবর্তে রাত সাড়ে দশটার পরে দেখানো হয় এবং টিভি সিরিয়ালটির শেষে 'আমরা বাল্য বিয়ে সমর্থন করি না' এমন একটি বার্তা প্রদর্শনেরও নির্দেশ দেয়। কিন্তু এতেও কাজ হয়নি। টিভি সিরিয়ালটির সমালোচনা বাড়তেই থাকে।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/আগস্ট ৩০, ২০১৭)