দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ত্যাগ ও আনন্দের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। সারাদেশে ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ ও সকল মুসলিম উম্মাহর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা হয়। একই সঙ্গে দেশে বন্যা কবলিত মানুষের জন্য এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের হেফাজত করতে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করা হয়।

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলিমরা তাদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন। তবে শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীবাসীর ঈদের খুশিতে বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি। সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

শনিবার সকাল ৮টায় রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টায় ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের হায়াত বৃদ্ধি চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন মাওলানা মুফতি মো. মিজানুর রহমান। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ ছাড়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং মেয়র সাঈদ খোকনের বাবা ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের জন্য দোয়া চাওয়া হয়।

শনিবার যারা পশু কোরবানি দেবেন তাদের কোরবানি গ্রহণ করতে এবং সকলের পাপ মোচনের জন্যও নামজ শেষে দোয়া চাওয়া হয়। বর্তমানে দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হচ্ছে উল্লেখ করে এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানানো হয় প্রধান জামাত থেকে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে দেশবাসীকে হেফাজত করতে সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়।

হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে থেকে শুরু হয় কোরবানির এ প্রচলন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হজরত ইবরাহীম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওই অনন্য ঘটনার স্মরণেই ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির এ রেওয়াজ চালু হয়।

মহান আল্লাহপাকের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ, তার সন্তুষ্টি অর্জন এবং তারই রাস্তায় সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এ ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিকতায় মুসলিম বিশ্বে কোরবানি ও ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে।

মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঈদুল আজাহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।

ঈদের দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

মুসলিমদের ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পবিত্র এ দিনটিতে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
পবিত্র এ উৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনে ১৭ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৭)