ধীরে ধীরে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যাচ্ছে আমেরিকা ও পাকিস্তান। পরিস্থিতি যেখানে গিয়ে ঠেকেছে তাতে এখন আর মনে হয় না এ অবস্থান থেকে সরে আসতে পারবে ‘সাবেক মিত্র দুই দেশ’। আমেরিকা পাকিস্তানকে কঠোর বার্তা দিচ্ছে আর পকিস্তান উল্টো সে বার্তার জবাব দিচ্ছে; মাথা নত করে মেনে নিচ্ছে না। উপায়ান্তর না দেখে মার্কিন প্রশাসন শুক্রবার যা বলেছে তার সরল অর্থ হলো- “পাকিস্তান কথা না শুনলে ওয়াশিংটন ভিন্ন পথ বেছে নেবে।” কী সেই পথ এখনই তা বলছে না মার্কিন সরকার। তবে পাকিস্তানও ঠিক আগের অবস্থানে নেই; পাক কর্মকর্তারা এখন আর এসব হুমকি ধমকিতে টলছেন না।

গত ২৪ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্র রেক্স টিলারসন পাকিস্তান সফর করেছেন। সেখান থেকে তিনি ভারতেও যান। এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস। এখানে একটু উল্লেখ করে রাখি যে, গত ২১ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগান নীতি ঘোষণার সময় পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের জন্য অভয়ারণ্য হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন। বিপরীতে ট্রাম্প সন্ত্রাস-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য ভারতের ব্যাপক প্রশংসা করেন। এর পরপরই এলিস ওয়েলসের পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়া সফর করার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্পের বক্তব্যে পাকিস্তান ক্ষুব্ধ হয়ে এলিস ওয়েলসের সে সফর স্থগিত করে দেয়।

একই সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুত সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যেগ নেয় পাকিস্তান। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আফগান নীতি ঘোষণার মাধ্যমে পাক সরকারকে নতুন মিত্র বেছে নিতে বাধ্য করেন। ট্রাম্পের বক্তব্যের পর খুব দ্রুত পাকিস্তানের পাশে ছুটে এসেছে পুতিনের রাশিয়া। ট্রাম্পের আফগান নীতির বিষয়েও মস্কো নিজের রিজার্ভশনের কথা জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ার করে মস্কো বলেছে, পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে মারাত্মক আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে যা আফগানিস্তানের জন্য নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনবে। মূলত এরপরই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতিতে রাশিয়া মুখী অবস্থান পরিস্কার হতে শুরু করে। এরপরই আমেরিকার বিষয়ে মাথা না নোয়ানোর নীতি গ্রহণে সাহসী হয়ে ওঠে পাক সরকার।

গত কয়েক বছর ধরে ইসলামাবাদ ও মস্কোর মধ্যে ধীরে ধীরে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে দুই দেশ শীতল যুদ্ধের সময়কার মতপার্থক্যের কবরদিয়েছে এবং পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে নিজেদের ভুলত্রুটি সংশোধন করে এক কাতারে ঠাঁই করে নিচ্ছে।এমন সময় এ সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে যখন আঞ্চলিক রাজনীতিতে পাকিস্তান অনেকটা কোণঠাসা এবং আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের দ্বারা সমালোচিত। ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন চাপ মোকাবেলার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে এমন উষ্ণ সম্পর্ক তৈরিরচেষ্টা করে আসছিল। সে কারণে মার্কিন চাপ সত্ত্বেও সিরিয়া যুদ্ধে কথিত আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দেয় নি ইসলামাবাদ; সৌদি চাপে যোগ দেয় নি ইয়েমেন যুদ্ধে।

এ বিষয়ে গত ৪ অক্টোবর দ্য রিপোর্টে ‘ কীভাবে এবং কেন পাকিস্তানের সাহায্যে এগিয়ে এল রাশিয়া?’ শিরোনামে কলাম লিখেছিলাম।

রেক্স টিলারসন ২৪ অক্টোবর পাকিস্তান সফরে যাওয়ার আগে তিনি আফগানিস্তানে যান এবং সেখানে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তিনি পাকিস্তানের জন্য কঠোর বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন। ওই সফরে টিলারসন রাজধানী ইসলামাবাদে না নেমে বরং তিনি গ্যারিসন শহর রাওয়ালপিন্ডির একটি বিমানঘাঁটিতে নামেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনেকটা নিচু পর্যায়ে স্বাগত জানানো হয়েছে। রাওয়ালপিন্ডিতে তাকে স্বাগত জানান পাক পররাষ্ট্র দপ্তরের মধ্যম পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা। মার্কিন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য পাকিস্তান সাধারণত যে ধরনের অভ্যর্থনার ব্যবস্থা করে থাকে এটা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।

রাওয়ালপিন্ডি থেকে টিলারসনকে গাড়িতে করে ইসলামবাদের মার্কিন দূতাবাসে নেওয়া হয়। পরে তিনি পাক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহীদ খাকান আব্বাসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা মুহাম্মাদ আসিফ এবং সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াসহ দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

ওই বৈঠকে টিলারসন বলেছেন, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ও পাকিস্তানের ভেতরে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলা উগ্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ইসলামাবাদকে সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। জবাবে পাক প্রধানমন্ত্রী আব্বাসি বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লড়াইয়ে আমরা ফলাফল দিয়েছি এবং আমেরিকার সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক চাই। আমেরিকা এ বিষয়ে ইসলামাবাদের ওপর আস্থা রাখতে পারে।"

পরে টিলারসনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পাকিস্তান সিনেটকে ব্রিফ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি সিনেটকে জানান, টিলারসনের সঙ্গে বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, “আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে ১৬ বছরের যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী পরাজিত হয়েছে এবং এ পরাজয় মেনে নেওয়া উচিত। কিন্তু তারা তা মেনে নিতে নারাজ। অথচ আফগান যুদ্ধে পরাজয় মেনে নিলেই কেবল দেশটির সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব।” এখানে খেয়াল করার বিষয় হলো- ড্রোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আফগান পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আরো কয়েক হাজার সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার ঠিক বিপরীত উচ্চারণ হচ্ছে পাক প্রধানমন্ত্রী আব্বাসির বক্তব্য।

টিলারসনের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্যরা পরিষ্কার করে আরো বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে ইসলামাবাদ নিজের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখেই ওয়াশিংটনকে সহযোগিতা করবে। আফগানিস্তানে যেহেতু সামরিক সমাধান ব্যর্থ হয়েছে সে কারণে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা নয় বরং রাজনৈতিক নীতি নির্ধারকদেরকে এখন নীতি ঠিক করতে হবে। পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানে মার্কিনদের ১৬ বছরের ব্যর্থতা তাদের সামনেই রয়েছে। আফগান পরিস্থিতি উন্নয়নের এখন একটাই পথ আর তা হলো আফগানিস্তানে আমেরিকার পরাজয় মেনে নেওয়া।

টিলারসনের সঙ্গে বৈঠকে পাক প্রতিনিধিদল মার্কিন সরকারকে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে যে, চাইলেই ইসলামাবাদ এখন আর আমেরিকার ডাকে সাড়া দেবে না এবং কারো বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ করবে না। এ বিষয়ে খাজা আসিফ সিনেটকে বলেছেন, “আমেরিকা থেকে পাকিস্তান সামান্য পরিমাণ অর্থনৈতিক সহযোগিতা পায় কিন্তু কোনো ধরনের সামরিক সহায়তা পায় না। অতীতে আমেরিকার হয়ে প্রক্সি যুদ্ধ করেছি তবে আমরা আর এখন তেমনটা নেই। পাকিস্তান কখনোই আমেরিকার আধিপত্যকামী মনোভাবের সামনে নতজানু হবে না এবং ওয়াশিংটনের হয়ে অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না।”

পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে হামলা চালাচ্ছে বলে আমেরিকা যে অভিযোগ করছে- তারও কাটকাট জবাব দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটি বলেছে, “পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের কোনো অভয়ারণ্য নেই। তালেবানের পাকিস্তানের ভুখণ্ড ব্যবহারের দরকার নেই কারণ তাদের সরাসরি দখলে রয়েছে আফগানিস্তানের শতকরা ৪০ ভাগ এলাকা। সেই ভূখণ্ড ব্যবহার করে তালেবান তাদের তৎপরতা চালাতে পারছে স্বাভাবিকভাবেই। শুধু তাই নয়, আফগান সহিংসতার অবসান না ঘটানোর জন্য পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ আমেরিকা ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন।

এ বিষয়ে বিবিসি’র কাছে খাজা আসিফ খোলসা করে বলেছেন, “আফগান পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তান ও আমেরিকার মধ্যে আস্থার বিশাল ঘাটতি রয়েছে।”

টিলারসনের পাকিস্তান সফরটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে- এ সফরের ভেতর দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের মনোভাব ও অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছেন। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস দেশে ফিরে বলেছেন, পাকিস্তানসন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে আমেরিকা সঙ্গে কাজ করবে কিনা সে বিষয়ে ইসলামাবাদকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, আমেরিকা দেখতে চায় আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বক্তব্যের পর আমেরিকার অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে। ওয়াশিংটন খুব কঠোর অবস্থান নিয়েছে তা আর বলা অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু পাকিস্তানও নরম হচ্ছে না। টিলারসনের সঙ্গে বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী লড়াইয়ে ইসলামাবাদ নিজের সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখেই ওয়াশিংটনকে সহযোগিতা করবে। তবে আফগানিস্তানে মার্কিনিদের ১৬ বছরের ব্যর্থতা তাদের সামনেই রয়েছে। আফগান পরিস্থিতি উন্নয়নের এখন একটাই পথ আর তা হলো আফগানিস্তানে আমেরিকার পরাজয় মেনে নেওয়া।”

টিলারসনকে পাক কর্মকর্তারা আরো বলেছেন, আমেরিকার কাছ থেকে পাকিস্তান কোনো রকমের সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক সহায়তা কিংবা অন্য বস্তুগত সুবিধা চায় না। পাকিস্তান শুধু পারস্পরিক সমতা ও সম্মানের ভিত্তিতে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক চায়। এ কথার সুস্পষ্ট অর্থ হচ্ছে- মার্কিন সরকার তার মিত্রদের সঙ্গে বিশেষ করে কথিত তৃতীয় বিশ্বের মিত্রদের সঙ্গে যে প্রভুর মতো আচরণ করে পাকিস্তান তা আর মানবে না। পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের এইসব কথাবার্তা থেকে এটাও পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, আমেরিকার সঙ্গে খুব বেশি দিন আর পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে না। এর ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। ভারতকে আমেরিকা ড্রোন সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না- সেসব ড্রোন পাকিস্তান সীমান্তে এমনকী পাকিস্তানের আকাশেও ওড়াবে; পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরিতে ব্যবহার করবে ভারত যা পাকিস্তানের জন্য অস্বস্তির কারণ। এরইমধ্যে পাকিস্তান বলেছে, দিল্লিকে ড্রোন দিলে দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হবে।

ইসলামাবাদ সফরের সময় টিলারসন পাকিস্তান সরকারের কাছে ৭৫ জন ‘ওয়ান্টেড’ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছে। জবাবে ইসলামাবাদ দিয়েছে ১০০ অপরাধীর তালিকা যারা আমেরিকায় আশ্রয় নিয়েছে।

এসব ঘটনার পর পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র সাবেক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসাদ দুররানি সম্প্রতি ইরানের তাসনিম বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মার্কিন সরকার আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করার জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, মার্কিন সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আফগানিস্তানে নিজের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে চায়। জেনারেল দুররানি বলেন,“আমেরিকা পাকিস্তানকে শত শত কোটি ডলার অর্থ সাহায্য দেয় বলে যে কথা প্রচলিত রয়েছে তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই এবং আমেরিকার প্রতি পাকিস্তানের নির্ভরশীলতার যুগ শেষ হয়ে গেছে।”

পাকিস্তানের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের এসব শক্ত কথার পরও জনমনে যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে তা হচ্ছে- শেষ পর্যন্ত এমন শক্ত অবস্থান টিকে থাকতে পারবে তো পাকিস্তান? আমেরিকা যদি পাকিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাহলে কী করবে দেশটি? এর জবাব জেনারেল আসাদ দুররানির কথাতেই রয়েছে। যদিও তিনি তা বিস্তারিত বলেন নি তবে ধারণা করা যায়- পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলে পাকিস্তানও আমেরিকা ও ন্যাটো সেনাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। আর সেটা হচ্ছে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের জন্য পাকিস্তানের ভূখণ্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেবে ইসলামাবাদ। এ ব্যবস্থা নিলে আফগানিস্তানে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করা কঠিন হবে আমেরিকা জন্য।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় কথিত সন্ত্রাসী হামলা দোহাই দিয়ে আফগানিস্তানে যে আগ্রাসন চালিয়েছিল আমেরিকা তাতে কৌশলে ও চাপ প্রয়োগ করে পাকিস্তানকে জড়িয়ে নানা রকম সুবিধা নিয়েছে আমেরিকা। বিপরীতে পাকিস্তানের আর্থিক ক্ষতি তো বটেই; আফগান সংকটের পর নানা সন্ত্রাসী ও মার্কিন ড্রোন হামলায় পাকিস্তানের ৬৫ হাজারের বেশি সামরিক ও বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। উল্টো এখন সেই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে; পাশাপাশি পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ স্বর্গ হয়ে উঠেছে বলে আমেরিকা অভিযোগ করে আসছে। আমেরিকার পক্ষ থেকে বাড়তি চাপ প্রয়োগের কারণে পাকিস্তান দিনে দিনে এই শক্ত অবস্থানে চলে গেছে। এছাড়া, সারা বিশ্বে যে অন্যায় ও বর্বর যুদ্ধ এবং সাম্রাজ্যবাদী নীতি চাপিয়ে দেয় আমেরিকা তা থেকে হয়ত পাকিস্তান দূরে সরে যেতে চাইছে। এই অবস্থান যদি পাকিস্তান ধরে রাখতে পারে এবং মার্কিন বলয় থেকে বেরিয়ে আসে তাহলে তা যেমন নিজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে তেমনি দক্ষিণ এশিয়া ও ইরানসহ অনেক মুসলিম দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে। মার্কিন বলয় থেকে বের হতে পারলেই মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের বড় রকমের উন্নতি বে বলে আশা করা যায়। এ অঞ্চলে মার্কিন বিরোধী প্রধান দেশ ও শক্তি হচ্ছে ইরান। পাকিস্তান যদি সেই শিবিরে যোগ দেয় তাহলে এ অঞ্চলে মার্কিন বিরোধী শক্তি অনেক বেশি জোরদার হবে।

মার্কিন যুদ্ধবাজ নেতা ও রিপাবলিকান দলের সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমেরিকাকে বের করে দেবে ইরান। পাকিস্তান ও ইরানের সম্ভাব্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনিদের ক্ষয়িষ্ণু প্রভাবের এই বিষয়টা আঁচ করে কী তিনি এমন মন্তব্য করেছেন?

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, রেডিও তেহরান।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ২৯, ২০১৭)