দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ফেনীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ৭২ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়ে সাংবাদিক  নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা চিহ্নিত। তাদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। টালবাহানা না করে ৭২ ঘন্টার মধ্যে তাদের আইনের আওতায় আনুন। তা না হলে দেশের সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করে সন্ত্রাসের গডফাদারদের সমুচিত জবাব দেবে।

 

শনিবার ফেনী ও মীরসরাইতে সাংবাদিকদের গাড়িতে ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০জন সাংবাদিককে আহত করার প্রতিবাদে এবং নিখোঁজ সাংবাদিক উৎপল দাসকে অবিলম্বে খুঁজে বের করার দাবিতে বাংলাদেশ  ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ।

 

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রবিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ। ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসনাতের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজে সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, ফটো জার্নালিস্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসীন, বিএফইউজের সাবেক সহসভাপতি নূরুল আমিন রোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ডিইউজের সহসভাপতি মুহাম্মদ খুরশিদ আলম, সাংবাদিক নেতা জাকির হোসেন, আসাদুজ্জামান আসাদ, ইরফানুল হক নাহিদ, শামসুদ্দিন আহমেদ, শাখাওয়াত ইবনে মইন চৌধুরী, এম এম জসিম উদ্দিন, আবুল কালাম মানিক, জসিম মেহেদী, জি এম হিরু প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার আবারও প্রমাণ করেছে তারা স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করে না । সাংবাদিক হত্যা, হামলা-মামলা করে সরকার গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করছে। তিনি বলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের ওপর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে যে হামলা হয়েছে তা হামলাকারিরাই বলেছে। সাংবাদিকদের খাবার পর্যন্ত খেতে দেয়নি। তিনি হামলাকারি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ৭২ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান।

শওকত মাহমুদ বলেন, শুধু গণমাধ্যম নয়, সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় ও স্বাধীন মত প্রকাশ সহ্য করতে পারে না। যে কারণে তারা প্রধান বিচারপতিকে ক্যান্সারের রোগী বানিয়ে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। এর আগে আরেকজন বিচারক তারেক রহমানের মামলায় সঠিক বিচার করে দেশত্যাগ করতে হয়েছে।

শওকত মাহমুদ আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা ও ভাঙচুর পরিকল্পিত সন্ত্রাস। এক নেত্রী যখন ঘরে বসে আছেন আরেকজন তখন মানবতার পাশে দাঁড়াচ্ছেন এটা তারা সহ্য করতে পারছে না।

বিএফইউজে মহাসচিব এম আবদুল্লাহ বলেন, ফেনীতে সাংবাদিকদের গাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে তারা ফেনীর সন্ত্রাসের নব্য গডফাদারের লালিত ক্যাডার। হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি রিয়েল। ফেসবুকের ছবিতে তাকে দেখা গেছে স্থানীয় শাসক দলীয় এমপি নিজাম হাজারীর ঘনিষ্ঠ। তার পরও যারা হামলাকারিদের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা জ্ঞানপাপী। এসব করে লাভ হবে না। সাংবাদিক নির্যাতন ও হামলা মামলা করে অতীতে কেউ রক্ষা পায়নি। আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এম আবদুল্লাহ অবিলম্বে সন্ত্রাসীদেও গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, যে পেট্রল পাম্প থেকে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে তার মালিকের কাছে জানতে চাই- আপনার স্টার লাইন পরিবহনের বাস কি রাস্তায় চলবে না? সাংবাদিকের গাড়ির মত আপনার বাস ভাঙচুর হলে কী করবেন?

এম এ আজিজ বলেন, এত বিপুল সংখ্যক সাংবাদিককে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় এভাবে 'গরু পেটা' করতে আমার জীবনে আর দেখিনি। অথচ কোন কোন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমে সন্ত্রাসীদের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে দেখা গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পর্যন্ত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় জড়িত। এত সাংবাদিকের ওপর এমন জঘন্য হামলা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। ফেনীর সন্ত্রাসের নায়ক নিজাম হাজারী ও পৌর মেয়র আলাউদ্দিন এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। অতীতে সাংবাদিক নির্যাতনকারীরা রেহাই পায়নি। এরাও পাবে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বাত্মক লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, অবৈধ সরকার সাংবাদিক নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। সাংবাদিক সমাজ শাসক দলের সন্ত্রাসীদের চিনতে পেরেছে। তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। সাংবাদিক উত্পল দাসকে অবিলম্বে খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/অক্টোবর ২৯, ২০১৭)