দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সারাদেশে সড়ক ও রেলপথের দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন।

রবিবার দেশের পাচজেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, কুষ্টিয়া ও মাগুরায় এসব দুর্ঘটনায় মারা যান যথাক্রমে পাঁচজন, চারজন, চারজন, দুইজন ও একজন।

এদের মধ্যে নওগাঁ, কিশোরগঞ্জ ও মাগুরায় ১০ জন নিহত হন সড়ক দুর্ঘটনায়। জামালপুর ও কুষ্টিয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হন ছয়জন।

প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ-

নওগাঁয় নিহত ৫

নওগাঁর পোরশায় বাসের ধাক্কায় অটোরিকশা উল্টে এক নারীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও তিনজন। এছাড়া পোরশা উপজেলায় ট্রাক চাপায় নিহত হন এক পথচারী।

পোরশা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, দুপুরে উপজেলার সরাইগাছী থেকে একটি অটোরিকশা কসনার দিকে যাচ্ছিল। পথে কুসরপাড়ায় পোরশাগামী একটি বাস পেছন থেকে ধাক্কা দিলে অটোরিকশাটি উল্টে ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন।
আহত পাঁচজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও দুইজনের মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।

নিহতদের মধ্যে উপজেলার কসনা গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল সালাম (৫০), একই গ্রামের মোসলেমের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৪২) ও হীরা বেগমের (৬০) পরিচয় জানা গেছে।

আহতদের পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

পত্নীতলা থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টার দিকে নজিপুরে রাস্তা পার হওয়ার সময় মাছবাহী একটি ট্রাকের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যান পথচারী রমজান আলী (৫০)।

কিশোরগঞ্জে দুই দুর্ঘটনায় নিহত ৪

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় দুই দুর্ঘটনায় চারজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে।

কুলিয়ারচরে নিহতরা হলেন অটোরিকশা চালক লালন মিয়া (৩৫), যাত্রী শাহীন (২২) ও করিম (২৮) এবং পাকুন্দিয়ায় নিহত হয় উপজেলার বাহাদিয়া এলাকার শরীফুল ইসলামের মেয়ে সাবিহা (৬)।

আহতদের মধ্যে দুইজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কুলিয়ারচর থানার ওসি মো. নান্নু মোল্লা জানান, বাজিতপুর থেকে ভৈরবগামী অটোরিকশার সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক্টরের সংঘর্ষ হলে চালকসহ চার যাত্রী আহত হন।

“তাদের বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর শাহীন ও করিম মারা যান। আর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান চালক লালন মিয়া।”

পাকুন্দিয়া থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, সাবিহা বাবা-মায়ের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে কিশোরগঞ্জ শহরে যাচ্ছিল। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বরাটিয়া চৌরাস্তায় ঢাকাগামী অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোর সময় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের নিচে পড়ে যায় সাবিহা।

“এতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।”

চট্টগ্রামে দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে প্রাইভেট কারের সঙ্গে সঙ্গে সংঘর্ষে মোটর সাইকেল আরোহী এক যুবক নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন।

শনিবার দুপুরে উপজেলার নয়াবাজার এলাকায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়।

নিহত আব্দুল্লাহ আল বাকী (২৪) ধুরং ইউনিয়নের পাইন্দং এলাকার বাসিন্দা আফসার উদ্দিনের ছেলে। আহত মো. শারুন (২৩) একই এলাকার মো. শাহজাহানের ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, বাকী ও তার বন্ধু শারুন মোটর সাইকেলে করে যাওয়ার পথে বিপরীত দিক থেকে আসা প্রাইভেট কারের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

“গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক বাকীকে মৃত ঘোষণা করেন।”

বাকী মোটর সাইকেল চালাচ্ছিলেন বলে জানান এএসআই আলাউদ্দিন।

মাগুরায় কারের ধাক্কায় সাইকেল আরোহী নিহত

মাগুরা সদরে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় নিহত হন বাইসাইকেল আরোহী শমসের মোল্যা (৫৫)।

তিনি ইছাখাদা গ্রামের লতিফ মোল্যার ছেলে।

রবিবার বিকালে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের ইছাখাদা ছোটব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মাগুরা সদর থানার এসআই রফিক জানান, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শমসের মোল্যা মাগুরা শহর থেকে ইছাখাদা যাচ্ছিলেন। “ছোট ব্রিজ এলাকায় পিছন থেকে একটি প্রাইভেটকার তার বাইসাইকেলকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।”

এ ব্যাপারে মাগুরা সদর থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

জামালপুর কমিউটার টঙ্গীতে দুর্ঘটনায়, নিহত ৪

জামালপুর থেকে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন টঙ্গীতে দুর্ঘটনায় পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

এর ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া সারা দেশের ট্রেন চলাচল পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।

জামালপুর থেকে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার রোববার বেলা সোয়া ১২টার দিকে টঙ্গীর নতুনবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনায় পড়লে চারজন নিহত ও অন্তত ২৬ যাত্রী আহত হন।

জয়দেবপুর রেলওয়ে ফাঁড়ির এসআই রাকিবুল হক জানান, টঙ্গী জংশন ছাড়ার পরপরই নতুনবাজার এলাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে জামালপুর কমিউটার।

“ট্রেনটির পেছনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হলেও গতির কারণে ওই অবস্থায় ট্রেনটি কয়েকশ গজ এগিয়ে যায়। এক পর্যায়ে একটি বগি কাত হয়ে যায়।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি মো. ইয়াসিন জানান, ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার পর ছাদে থাকা যাত্রীরা লাফিয়ে পড়লে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয় এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হন।

আহতদের মধ্যে সাতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মো. শাহাদাত (৩৮) নামে আরও একজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন বলে মেডিকেল ফাঁড়ির এএসআই বাবুল মিয়া জানান।

ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি বাকি ছয়জন হলেন, বাদল (২৮), সবুজ (৪০), ইসরাফিল (১২),আলমগীর (৩২), বাদল (৫০) ও মো. শরিফ (২৮)। তাদের শরীরে বিভিন্নস্থানে জখম রয়েছে।

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. ইরাম শাহরিয়ার জানান, ওই দুর্ঘটনায় আহত মোট ২৬ জন বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। তাদের মধ্যে আটজনকে তিনি ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে রেল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তবে ওই তিনজনের পরিচয় জানা যায়নি।

কুষ্টিয়ায় ট্রেনের ধাক্কায় ২ স্কুলছাত্র নিহত

কুষ্টিয়ার পোড়াদহের একটি লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে।

রবিবার দুপুরে পোড়াদহ রেলওয়ে জংশনের লেভেল ক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে পোড়াদহ রেলওয়ের থানার এসআই আবুল হোসেন খন্দকার জানান।
নিহতরা হলেন মিরপুর উপজেলার আইলচারা গ্রামের ছাইদুল ইসলামের ছেলে আয়াতুল্লাহ এবং অপরজন একই গ্রামের সাইদুল হোসেনের ছেলে মুবিন হোসেন।

দুজনেই আইলচারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।

পোড়াদহ স্টেশন মাস্টার শরিফুল ইসলাম বলেন, দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পোড়াদহ পর্যন্ত চলাচলাকারী ৫০৬ শ্যাটল ট্রেনের ইঞ্জিন ঘোরানো হচ্ছিল। লেভেল ক্রসিংয়ের গেইট বন্ধ থাকলেও মোটরসাইকেল নিয়ে পাশ দিয়ে বেরিয়ে ক্রসিং পার হওয়ার চেষ্টা করে দুই স্কুলছাত্র।

এ সময় ইঞ্জিনের নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই একজন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরেকজনের মৃত্যু হয় বলে জানান তিনি।
দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/১৫ এপ্রিল,২০১৮