দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ঈদের আগে বেড়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ। মে মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪৮ কোটি ২৮ লাখ ডলারেরও বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। 

যা একক মাস হিসাবে গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর ২০১৭ সালের মে মাসে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। যা ২০১৭ সালের একই সময়ের চেয়ে ২১ কোটি ডলারেরও বেশি। এদিকে, এই বছরের এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৩২ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। সেই হিসাবে তারা এপ্রিলের চেয়ে মে মাসে প্রায় ১৬ কোটি ডলার বেশি রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী—২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। মার্চ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১২৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বেশি রেমিটেন্স এসেছে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন এক হাজার ৩৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়েও ৮১ কোটি ডলার বেশি।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের (২০১৫-১৬) চেয়ে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম রেমিটেন্স আসে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা মাত্র ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠান। রেমিটেন্স প্রবাহের মাস হিসেবে গত ছয় বছরের মধ্যে এটিই ছিল সর্বনিম্ন। শুধু সেপ্টেম্বরই নয়, বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে রেমিটেন্স বাড়াতে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নানামুখী উদ্যোগের কারণে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে রেমিটেন্স প্রবাহ ইতিবাচক ধারায় ফেরে। অক্টোবর মাসে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা গত সেপ্টেম্বর মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি।

রেমিটেন্স বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ার কারণে একদিকে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন, অন্যদিকে পণ্য আমদানি বাড়ায় ডলারের সংকট কাটাতে ব্যাংকগুলো নিজেদের প্রয়োজনে রেমিটেন্স আনতে বেশি উৎসাহী হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী—প্রবাসীরা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাইয়ে পাঠিয়েছেন ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। আগস্টে পাঠান ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার ও নভেম্বর মাসে ১২১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

মে মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দু’টি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে এককোটি ২২ লাখ ডলার এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার এসেছে।

বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৮ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার ও জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ কোটি ৬৭ ডলার এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা একহাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা এর আগের ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল একহাজার ৪৯২ কোটি ৬২ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স কমেছে ২১৬ কোটি ১৭ কোটি ডলার বা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ০৩, ২০১৮)