ডা. মো. শাহিনুর রহমান: মানবদেহে জটিল ও কঠিন রোগের মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম।

মহান সৃষ্টিকর্তা মানুষকে তৈরি করে শরীরের ভেতর ও বাহিরে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট কাজ নির্ধারণ করে রেখেছেন। প্রতিদিনের চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির নির্দিষ্ট জীবন আচরণে অনিয়ম হলেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানুষ বহুকোষী প্রাণী। অসংখ্য কোষের সমন্বয়ে মানবদেহ গঠিত হয়। প্রতিটি কোষের একটি নির্ধারিত আয়ুষ্কাল আছে। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে শরীরে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে হলে শরীরে মাংসের দলা বা চাকা সৃষ্টি হয়। এটিই টিউমার নামে পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রে টিউমার ক্ষতিকর হয় না। কেবল ফুলে থাকে, এটি ‘বেনাইন টিউমার’ নামে পরিচিত। ক্ষতিকর টিউমারগুলো ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার নামে পরিচিত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তনালীর মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে এতে অকাল মৃত্যু হয়ে থাকে।

ক্যান্সার কোনোভাবেই সংক্রামক নয়। অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয় না।

ক্যান্সারের কারণ

জীবনযাপন প্রণালী, পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস, ভৌগোলিক অবস্থান, বয়স, বংশানুক্রম ইত্যাদি বিষয় ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। সাধারণত জীবাণু দ্বারা ক্যান্সার হয় না, তবে পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারসহ কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুর প্রভাব রয়েছে ক্যান্সার সৃষ্টিতে।

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার

প্রায় ২০০ রকমের ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়েছে এ পর্যন্ত। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে চিকিৎসার ধরনও বিভিন্ন। চামড়া, হাড়, অস্থিমজ্জা, প্রেস্টেট, ব্রেস্ট, জরায়ু, কণ্ঠ, যকৃত, ফুসফুস প্রভৃতি অঙ্গে ক্যান্সার হতে পারে। সব বয়সী নারী-পুরুষেরই ক্যান্সার হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্যান্সার কোনো একটি বিশেষ বয়সে হয়।

ক্যান্সারের লক্ষণ

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো, শরীরে ক্লান্তি বোধ হওয়া, ক্ষুধা কমে যাওয়া, শরীরের যে কোনো জায়গায় চাকা বা দলা দেখা দেয়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি বা গলা ভাঙা, হজমে সমস্যা হওয়া, মলত্যাগে পরিবর্তন আসা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলের সাথে রক্ত যাওয়া, জ্বর, রাতে ঠাণ্ডা লাগা বা ঘেমে যাওয়া, অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমা, অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, ত্বকের পরিবর্তন দেখা দেওয়া, সহজে সারছে না এমন ক্ষত, গিলতে অসুবিধা হওয়া, তিল বা আঁচিলের সুস্পষ্ট পরিবর্তন।

তবে এসব লক্ষণ দেখা দেয়ার অর্থই ক্যান্সার নয়। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসককে দেখানো প্রয়োজন।

যেসব ক্যান্সার এখানে বেশি দেখা যায়: ফুসফুস, স্বরযন্ত্র, মুখগহ্বর, গলনালী, আগ্নাশয়, বৃক্ক, মূত্রাশয়, জরায়ু মুখ, স্তন, পাকস্থলী, বৃহদন্ত্র, মলাশয় এবং যকৃত।

ক্যান্সার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাবার:

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন রঙিন শাকসবজি, ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

বীজ বা মূল যেমন শুকনো মটর, মটরশুঁটি, শস্যজাত খাদ্য, আলু এসব খাবার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এছাড়া শাকসবজি, শস্যজাত খাবার ও ফল বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত।

বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম ইত্যাদি পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার ক্যান্সার সৃষ্টিতে বাধা দেয়। ভিটামিন সি এবং ই এন্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন। তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন পেয়ারা, আমলকি, জাম্বুরা; ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার সবজির তেল, শস্যজাত খাবার, ডিম ইত্যাদি ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য উপকারী।

চর্বিযুক্ত মাংস, ঘি, মাখন, বনস্পতি ইত্যাদির পরিবর্তে সয়াবিন তেল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। কৃত্রিম রং ক্যান্সারের একটি কারণ তাই এটি পরিহার করা উচিত।

মুখগহ্বরের ক্যান্সার এড়ানোর জন্য তামাক, পান-সুপারি ইত্যাদি বর্জন করা উচিত।

ক্যান্সারের চিকিৎসা

মানবজীবনে যত দুরারোগ্য ব্যাধি আছে ক্যান্সার তার একটি। তবে ধর্মীয় নিয়মনীতি মেনে চললে ও জীবন চলায় স্বাস্থ্য বিধি মানলে এ রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যান্সারের চিকিৎসা করাটা সহজ। শরীরের যে অংশে ক্যান্সার ধরা পড়ে সেখান থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু হোমিও ওষুধের মাধ্যমে অপসারণের চিকিৎসা দেয়া হয়। এ রোগ বেড়ে গিয়ে অনেক সময় জটিল ও কঠিন আকার ধারণ করতে পারে। এতে জীবননাশের সম্ভাবনাও দেখা দেয়।

একুশ শতকের পৃথিবীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে হোমিও চিকিৎসাও ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। উন্নত হয়েছে হোমিও ওষুধের গুণগতমান। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ প্রয়োগ করলে হোমিও চিকিৎসায় দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিও মেডিসিন কার্যকর। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে ইনশাল্লাহ আপনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনার সমস্যার জন্য আজই অভিজ্ঞ হোমিও ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।

ডা. মো. শাহিনুর রহমান

বিএ অনার্স এম এ (ইতিহাস)

ডিএইচএমএস-ঢাকা

শেখ বদরুদ্দীন হোমিও চেম্বার

৪২/২ ঢালকানগর লেন, গেণ্ডারিয়া ঢাকা-১২০৪

মোবাইল-০১৭১১-১৩৮-১৩৫