থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়াদের মধ্যে আরও ৪জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এরপর সোমবারের অভিযান শেষ করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত গুহা থেকে মোট ৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। গুহায় এখনও রয়েছে ৪ কিশোর ও তাদের কোচ। তবে  ৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে তা জানানো হচ্ছে না। একই ভাবে তাদের বাবা মাকেও হাসপাতালে দেখা করতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। 


থাইল্যান্ড থেকে বিবিসির জোনাথন হেড বলছেন, এটা বিস্ময়কর যে রবিবার উদ্ধার হওয়া কিশোরের বাবা-মাকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।
স্বজনরাও নিশ্চিত নন যে ঠিক কাদের বের করে আনা হয়েছে।
আটকে পড়া এক কিশোরের এক বাবা বার্তা সংস্থা রয়টরসকে বলেছেন, "কোন বাচ্চাদের বের করা হয়েছে, তা আমাদের জানানো হয়নি, আমরা হাসপাতালেও যেতে পারছি না।"
এসব অভাব-অভিযোগ স্বত্বেও সরকার চুপ। তাদের পক্ষ থেকে শুধু বলা হচ্ছে - উদ্ধার হওয়া প্রথম চারজন হাসপাতালে ভালো আছে, সুস্থ আছে।
চ্যাং রাই প্রদেশের গভর্নর নারংসাক অসোতানাকর্ন, যিনি এই উদ্ধার তৎপরতার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আজ (সোমবার) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, "তারা (চারজন) বেশ উৎফুল্ল। সকালে জানিয়েছিল তাদের খিদে লেগেছে, তারা বাসিল দিয়ে রান্না ভাত খেতে চেয়েছে।"
বাসিল পাতা এবং মাংস দিয়ে রান্না ফ্রাইড রাইসকে থাইল্যান্ডে বলা হয় 'প্যাড ক্রাপাও'। গভর্নর ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালে বাচ্চাগুলো প্যাড ক্রাপাও খেতে চেয়েছে।
কেন উদ্ধারকৃতদের বাবা-মায়েদেরও আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হচ্ছেনা - সেই প্রশ্ন করা হলে, গভর্নর অসোতানাকর্ন বলেন, সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
"সেই ঝুঁকি কাটলেই এ ব্যাপারে ডাক্তারারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তখন বাবা-মায়েদের জানালার কাঁচের বাইরে থেকে তাদের ছেলেদের দেখতে দেওয়া হবে।"
কেন নাম-পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে - এই প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও সিংহভাগ বাচ্চাই গুহার ভেতরে আটকে আছে। এ অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার নাম-পরিচয় বলা যথার্থ নয়। "নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে।"
কী ধরণের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে?
দু সপ্তাহ ধরে পাহাড়ের গুহার গভীরে প্রায় অন্ধকারে আটকা পড়ে আছে এই কিশোর দলটি। অক্সিজেনের সমস্যা রয়েছে। ছয়দিন আগে সন্ধানের আগ পর্যন্ত প্রায় অনাহারেই ছিল তারা।
এই অবস্থায় কোন ধরণের সংক্রমণের ঝুঁকিতে তারা পড়তে পারে?
ব্রিটেনের চিকিৎসক ড অ্যালেক্স রো, যিনি অভিযাত্রীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিষয়ে অভিজ্ঞ, বিবিসিকে বলেন, ঐ ১২ জন কিশোর দু ধরণের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবে।
এক, গুহার ভেতরের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া এবং বাদুর জাতীয় প্রাণীর শরীর থেকে ছড়ানো জীবাণু থেকে ফুসফুসে বিপজ্জনক সংক্রমণ হতে পারে। সেটা হলে শ্বাসকষ্ট হয়।
দুই, গুহার ভেতরে সাধারণত ইঁদুরের উপদ্রব থাকে। ইঁদুরের প্রস্রাব থেকে ছড়ানো জীবাণুর কারণে জন্ডিস এবং লিভারের সমস্যা হতে পারে।
সাংবাদিকদের প্রতি বিরক্তি
এই উদ্ধার তৎপরতার খবরাখবর দিতে সারা পৃথিবী প্রায় হাজার-খানেক সাংবাদিক গিয়ে হাজির হয়েছেন থাইল্যান্ডে। এই বাচ্চাদের এবং তাদের পরিবারের প্রতি "সম্মান" দেখানোর জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেছেন গভর্নর অসোতানাকর্ন।
কিছু সাংবাদিকের আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেছেন থাই কর্মকর্তারা। কোনো কোনা সাংবাদিক উদ্ধার-কর্মীদের ওয়ারলেস কথোপকথনে গোপনে আড়ি পাতছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারো কারো বিরুদ্ধে ভুল খবর দেওয়ার কথাও উঠেছে।
সাংবাদিকদের ড্রোন ব্যবহারের কারণে উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হেলিকপ্টার ওঠা-নামায় অসুবিধা হচ্ছে - এমন অভিযোগও কর্মকর্তারা করেছেন। দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/ ৯ জুলাই ২০১৮