বিশেষ প্রতিনিধি : কিছুদিন শান্ত থাকার পর আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া। ২ মার্চ রাতে কাঞ্চনা ইউনিয়নে স্থানীয় যুবলীগকর্মী হাসানকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার করার পর একই রাতে স্থানীয় ১৭টি বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এখন পুরো উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

রবিবার রাতে ফুলতলা সিএনজি স্টেশনে একটি ওষুধের দোকানে অড্ডা দেওয়ার সময় একদল মুখোশধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী প্রথমে হাসানকে কুপিয়ে জখম করে। তারপর তাকে গুলি করে ফেলে রেখে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে সাতকানিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চমেক হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তাদের মতে, বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে শক্ত দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোর কারণে তারা হাসানকে নির্মমভাবে খুন করেছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম রহমান ও মেম্বার আব্দুল মান্নান বলেন, জামায়াত-শিবিরের খুনিরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

তবে এ ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে উপজেলা জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতারা বিবৃতি দিয়েছেন।

এদিকে, হাসান খুনের পর একই রাত ১১টার পর থেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী স্থানীয় জামায়াত-শিবির সমর্থক বিভিন্নজনের বাড়িতে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি হামলা চালিয়েছে বলে উপজেলা শিবিরের সভাপতি তৌফিক এলাহী জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, রাতে স্থানীয় দেইজন আওয়ামী লীগ সমর্থক ইউপি মেম্বার ও একজন সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর নেতৃত্বে শতাধিক আওয়ামী-যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডার স্থানীয় জামায়াত-শিবির সমর্থকদের ১৪টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও তিনটি বাড়ি ভাঙচুর করেছে। একটি পরিবারের মহিলাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, রাতে সশস্ত্র ক্যাড়াররা লতাপীর বাজার এলাকার আজগর আলীর পাড়ার ভেট্রা মিয়া, ছগির আহমদ, আব্দুল মোমেন, আবু তাহের, আব্দুছ ছাত্তার, আলী আহমদ, খলিল আহমদ, আব্দুল গণি, আব্দুল কাদের, আব্দুর রহিম, নজির আহমদ, ছিদ্দিক আহমদ, ফুল মিয়া ও ফরিদ আহমদের বাড়ি এবং কাঞ্চনা মাদরাসাসংলগ্ন আতর আলীর পাড়ার রিফাতের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়াও গুরুগুরি গ্রামের হাজীর পাড়ার আব্দুর রহমান মিকার, মৌজার বড়বাড়ির শেখ আহমদ ও কামাল উদ্দিনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

হাসান খুনের ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে থানা সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে, এ সব ঘটনা ও পাল্টা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাতকানিয়া আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে করে আগামী ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ হোসেন দ্য রিপোর্টকে জানান, যারা এই জনপদকে অশান্ত করার চেষ্টা করবে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কাউকে রেহাই দেবে না। হাসান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জামায়াত-শিবির জড়িত। আর বাড়িঘরে হামলার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএইচ/এএস/এজেড/মার্চ ০৪, ২০১৪)