দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সহায়তা বাড়াতে একমত হয়েছেন বাংলাদেশ ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী।

চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে কাঠমান্ডু সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির বৈঠকে এই সম্মতি এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এ খবর জানিয়েছে সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ও এই ইস্যুতে একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

হোটেল সোয়ালতে ক্রাউন প্লাজায় দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে জোর দেওয়া ছাড়াও তারা জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সহায়তা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।’

ইহসানুল করিম বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি এবং এই ইস্যুতে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেপালের সমর্থন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং জানান, নেপালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে ঢাকা। উভয় দেশের জন্য দুই প্রতিবেশীর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, এই অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য দূর করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আমরা শুধু আমাদের দেশের উন্নতি চাই না, আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশীরাও উন্নত হোক।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নেপালকে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেন। এছাড়া কাঠমান্ডুর সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা বিনিময়েরও প্রস্তাব দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন খাতে দুই দেশের সহায়তার সুযোগ বাড়ানো উচিত। অলির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আরও যোগাযোগ বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ও নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসফি বিনতে শামস দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময়ে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাওয়াল, পররাষ্ট্র সচিব শঙ্কর দাস বৈরাগিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

পরে ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো তাসেরিং ওয়াংচুকের সঙ্গেও একই স্থানে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব।

ওই বৈঠকে ভুটানের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন ভুটানের প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভুটানের সংবিধান মোতাবেক আমাদের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে আর নতুন সরকার আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে শপথ নেবে।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন দুই নেতা। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও জোরালো করারও আশা প্রকাশ করেন তারা। বৈঠকে বাংলাদেশের বিক্রমপুর সফরের কথা স্মরণ করেন ভুটানের প্রধান উপদেষ্টা।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বৈঠকের সময় উপস্থিত ছিলেন।

চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) কাঠমান্ডু পৌঁছান শেখ হাসিনা। নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর তিনটায় (বাংলাদেশ সময় সোয়া তিনটা) বিমসটেক সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) সাতটি দেশের আঞ্চলিক জোট। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করা। এই উপ-আঞ্চলিক সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ৫টি দক্ষিণ এশিয়ার। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা। অন্য দুটি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/আগস্ট ৩০, ২০১৮)