বিশেষ প্রতিনিধি, বাগেরহাট থেকে ফিরে : রূপালী ব্যাংক খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার অশোক কুমার সিংহ বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্যাংকে মানি লন্ডারিং ট্যাস্ক ফোর্সের বৈঠকে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের আমানত সংগ্রহের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাগেরহাট জেলার সরকারি/বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজারদের অভিযোগ-বাগেরহাটের কোনো ব্যাংকই আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না। কারণ বেশি টাকা পাবার আশায় সবাই নিউ বসুন্ধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডে টাকা আমানত দিচ্ছে।

খুলনার একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার ব্যাংকে একজন অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষকের ২৫ লাখ টাকার এফডিআর ছিল। তিনি সেই টাকা ভাঙ্গিয়ে নিউ বসুন্ধাধারা রিয়েল এস্টেটে জমা করবেন বলে ব্যাংকে এসে ছিলেন। তাকে যুবক-ডেসটিনির কথা বলে নিবৃত্ত করা হয়েছিল। কিন্তু দুই দিন পর নিউ বসুন্ধধারা গ্রুপের কথিত ফিল্ড অফিসার এসে ম্যানেজারকে শাসিয়ে যান। পরে সেই এফডিআর ভাঙ্গিয়ে টাকা বসুন্ধধারায় জমা দেওয়া হয়। কিন্তু চাহিদা মত টাকা না পাওয়াই সেই শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে তার ওয়ারেশরা টাকা উঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

একই অভিযোগ খুলনা সোনালী ব্যাংকের জোনাল জেনারেল ম্যানেজার আমির হোসেন মিয়া ও জনতা ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার মুর্শেদুল কবীরের।

ঢাকা ব্যাংকের খুলনার ভাইস প্রেসিডেন্ট আরিফুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ব্যাংক ছাড়া অন্য কারো এভাবে আমনত সংগ্রহ করা বেআইনী কাজ।

বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনার নির্বাহী পরিচালক মো: ইস্কান্দার মিয়া স্বীকার করেন সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে তাদের টাস্ক ফোর্স বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, যুবক, ডেসটিনি এবং ঝিনাইদহ জেলার কোটচাদঁপুরের হুন্ডি কাজল আর বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধধারা রিয়েল এস্টেট একই পদ্ধতিতে অবৈধভাবে আমানত সংগ্রহ করছে। ব্যাংকিং অনুমতি না থাকায় এই আমানত সংগ্রহ বেআইনী।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচার হলে তাদের কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হয়। কারণ এসব অবৈধ লেনদেনকারীর পেছনে সব সময়ই প্রভাবশালীদের হাত থাকে। তাদের টাস্কফোর্সের বৈঠকের সিদ্ধান্ত ঢাকায় জানানো হয়েছে।

মান্নান তালুকদার যা বলেন

এদিকে মান্নান তালুকদার বলেন, সাধারণ মানুষের যে পরিমাণ টাকা তার কাছে আমানত রয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি তার সম্পদ বা জমি রয়েছে।

আমনত সংগ্রহে শরিয়াহর বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, তাদের একটি শরিয়াহ বোর্ড রয়েছে। বোর্ডের প্রধান খুলনা গোয়ালখালী মাদরাসার মুহতামিম খলিফা আব্দুল আউয়াল। এছাড়া মুফতি ওয়াক্কাস আলী, চরমোনাই পীরপন্থি আলেমরা এই বোর্ডে রয়েছেন।

আব্দুল মান্নান বলেন, বাগেরহাটের সব ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি লেনদেন করেন। তবে আমানত রাখেন না। টাকা জমা হলেই তা দিয়ে তিনি জমি কিনে ফেলেন। তাদের কাছে সব মিলিয়ে ৪০ হাজার গ্রাহকের প্রায় ২ শ কোটি টাকা জামানত রয়েছে। তবে খুলনার ম্যানেজার ২ হাজার কোটি টাকা জমা আছে বলে জানিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি নিরব থেকে বলেন, খুলনা বাগেরহাট মিলিয়ে তাদের যে পরিমাণ জমি আছে তার মূল্য দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হবে।

এ্যাজাক্স জুট মিলের চেয়ারম্যান কাওসার জামান বাবলাকে দেওয়া চেক পাশ হয়নি এবং তিনি চেক প্রতারণার মামলা করেছেন-এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে বলেন,একটু সমস্যা হয়েছিল তবে সব মিটি যাবে।

এদিকে জানা গেছে, উর্ধ্বতন মহলের নির্দেশে পিবিআইয়ের (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)বাগেরহাট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: মোজাম্মেল হক বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছেন। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে নিউ বসুন্ধধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের হিসাব লিয়েন রাখা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/অক্টোবর ০৫, ২০১৮)