দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অবশেষে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা বুধবার (১০ অক্টোবর)। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। এ ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলাগুলো একসঙ্গে তদন্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পৃথক দুটি চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয়া হয়। ভয়াবহ সেই ঘটনার ১৪ বছর এক মাস ২০ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ দুটি মামলার রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।

এদিকে এই রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, অপরাধ জগতের ইতিহাসে গ্রেনেড হামলার ঘটনা একটি জঘন্যতম অপরাধ। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ২৪ জনকে হত্যা করার অপরাধকে কেন্দ্র করে দুটি মামলা হয়। একটি হত্যা ও অপরটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা। জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে দুটো মামলাই তদন্তে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলা অধিকতর তদন্তে যায়। ৫২ জন আসামির মধ্যে তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় বর্তমানে আসামি ৪৯ জন। ওই হামলার অর্থের জোগান ও প্রশাসনিক সহায়তায় ছিল চারদলীয় জোট তথা বিএনপি-জামায়াত সরকার।

এ দুটো মামলায় একজনকেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আসামি করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

রেজাউর রহমান আরও বলেন, সারা দেশের বিচরপ্রার্থী মানুষ এ রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আইনের বিধান অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি। ২২৫ জন সাক্ষীর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

অপরদিকে আসামিপক্ষে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং সাবেক দুই আইজিপি- মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হকের আইনজীবী এম নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে আসামি করা হয়েছে।

কিন্তু মুফতি হান্নানের সেই জবানবন্দি সঠিক মর্মে প্রমাণ হয়নি। এ দু’জনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। প্রথম দফায় দাখিল করা চার্জশিটে ওই তিনজন আসামি ছিলেন না। সম্পূরক চার্জশিটে ওই তিনজনকেই আসামি করা হয়েছে। নির্দোষ দাবি করে আসামিরা বেকসুর খালাস পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক চার্জশিটে (অভিযোগপত্র) বলা হয়েছে, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ইন্ধনে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশসহ (হুজি) তিনটি জঙ্গি সংগঠন ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংস ও বর্বরোচিত ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। হামলায় আহত হন কয়েকশ’ নেতাকর্মী। আর অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এ মামলায় সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে রাষ্ট্রপক্ষ। মোট ৪৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আর আসামি পক্ষে ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলায় ১৪৪টি আলামত ও ৫৫টি বস্তু প্রদর্শন করা হয়েছে। গত বছরের ৩০ মে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। আর গত বছরের ১২ জুন মামলায় ৩১ আসামির আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও আনসার ও ভিডিপির সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিনসহ ১৮ আসামি পলাতক থাকায় তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি। পলাতক আসামিদের মধ্যে ১৪ জনের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর এ মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হয়। ১১৯তম কার্যদিবস ধরে চলে এ যুক্তিতর্ক। যার মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ৩০ ও আসামিপক্ষ ৮৯ কার্যদিবস ব্যয় করেছে। মামলার মোট ৪৯ জন আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এনএসআইয়ের (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা) সাবেক দুই ডিজি- মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক তিন আইজিপি- মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউকসহ ৩১ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন : গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন জোট সরকার ঘটনা তদন্তে ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনকে চেয়ারম্যান করে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে। এক মাস ১০ দিনের মাথায় ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দিয়ে কমিশন বলে, সংগৃহীত তথ্যপ্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে ইঙ্গিত করে এ হামলার পেছনে একটি শক্তিশালী বিদেশি শক্তি জড়িত। তবে প্রতিবেদনে বিদেশি শক্তির নাম নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

তদন্তের সহায়তায় এফবিআই ও ইন্টারপোল : হামলার পর তদন্তে সহায়তার জন্য ২০০৪ সালের ২৯ আগস্ট ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) দুই কর্মকর্তা জ্যাকুলিন ও জেফ্রি আইলস ঢাকায় আসেন। এছাড়া ১ সেপ্টেম্বর তদন্তে সহায়তার জন্য ইন্টারপোলের কর্মকর্তা এইচ ডব্লিউ সিন, মারাস ভুসিনাস ও উইসন গিবসন ঢাকায় আসেন। দেশীয় তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি ইন্টারপোল ও এফবিআই তদন্ত কার্যক্রম চালায়। বিদেশি দুই সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আলামত পর্যালোচনা করেন এবং কিছু আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ইন্টারপোল কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে নিয়ে যান। আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে একটি রিপোর্ট প্রদান করা হয়, যা মামলার নথিতে সংযুক্ত আছে।

একাধিক তদন্ত ও চার্জশিট : গ্রেনেড হামলার ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক চারটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল থানায় এসআই ফারুক আহমেদ, শেখ হাসিনার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব সাবের হোসেন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিল বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।

ওই বছরের ২০ অক্টোবর একই থানায় আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাদী হয়ে অপর মামলাটি দায়ের করেন। এরপর মামলাগুলো একত্রে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগের ওপর। সাজানো হয় ‘জজ মিয়া’ নাটক। বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ায় মামলার কার্যক্রম থেমে যায়।

পরে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন সিআইডির সিনিয়র এএসপি ফজলুল করিম। এতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর প্রথম দফায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন আদালত।

ওই বছরের ১৭ নভেম্বর প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ২০০৯ সালের ৯ জুন ৬১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। এরপর ২০০৯ সালের ২৫ জুন এ মামলায় অধিকতর তদন্তের আবেদন করা হয়। আদালত ওই বছরের ৩ আগস্ট অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।

২০১১ সালের ৩ জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ৩০ জনকে নতুন আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ। এরপর ২০১২ সালের ১৮ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় চার্জ গঠন করেন আদালত।

‘জজ মিয়া’ নাটকের অবসান : ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বহুল আলোচিত সাক্ষী জজ মিয়া আদালতে সাক্ষ্য দেন। তিনি তার সাক্ষ্যে বলেন, ২০০৫ সালে প্রথমে আমাকে সেনবাগ (নোয়াখালী) থানায় ধরে নেয়া হয়েছিল। চোরাচালানের মামলা রয়েছে জানিয়ে থানায় নেয়ার পর নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আমার সঙ্গে কথা বলেন। মারধরের পর চোখ বেঁধে আমাকে ঢাকায় আনা হয়। এ সময় থানায় জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়। তারা আমাকে এই বলে হুমকি দেয়, ‘তুই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিলি। যদি এটা স্বীকার না করিস, তাহলে অন্য মামলায় আসামি করে তোকে ক্রসফায়ারে দিয়ে দেব। আমরা যেভাবে বলি তোকে সেভাবে শুনতে হবে। আমাদের কথা শুনলে তুই বেঁচে যাবি। তখন জজ মিয়া বলেন, ‘স্যার, তাহলে কীভাবে বাঁচাবেন? তারা বলে, তোকে রাজসাক্ষী রাখা হয়েছে।’

জজ মিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, তৎকালীন সিআইডি কর্মকর্তা রুহুল আমিন তখন জজ মিয়াকে বলেছিলেন, ‘আমাদের কিছু করার নেই, এটা ওপরের নির্দেশ।’

জজ মিয়া আদালতকে আরও জানান, স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ার পর শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার অনেক ভিডিও দেখানো হয়েছিল তাকে।

সিআইডি কর্মকর্তা জজ মিয়াকে বলেন, আমরা যা শেখাব, আদালতে তাই বলবি। জজ মিয়া বলেন, সিআইডি অফিসে আমাকে রেখে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে অনেক ঘটনা মুখস্থ করানো হয়।

হামলায় যারা নিহত : আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ কর্মী রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগমসহ ২৪ জন নিহত হন।

যারা আহত : বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ কয়েকশ’ মানুষ আহত হন।

দায় স্বীকার : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আট আসামি। তারা হলেন- জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, আরিফ হাসান সুমন ও রফিকুল ইসলাম সবুজ।

যারা কারাগারে : মোট ৩১ জন আসামি কারাগারে আছেন। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, এনএসআইয়ের (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা) সাবেক দুই মহাপরিচালক (ডিজি)- মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক তিন আইজিপি- মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আবদুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম, শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু উমর আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে ওভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার।

এছাড়া যুদ্ধাপরাধসহ অন্য মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের আসামি তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

যারা পলাতক : এ মামলায় ১৮ আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, আনসারের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান (তৎকালীন ডিসি পূর্ব), সাবেক পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান খান (তৎকালীন ডিসি দক্ষিণ), হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, আলহাজ মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিম ওরফে মোরসালিন, মো. খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর, মো. ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু। আসামিদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।

পলাতক আসামিদের অবস্থান : আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন। আর জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও সাবেক পুলিশ সুপার ওবায়দুর রহমান খান পাকিস্তান রয়েছেন। এছাড়া গ্রেনেড হামলায় সরাসরি জড়িত আসামি ফরিদপুরের আনিসুর মুরসালিন ও তার ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন দীর্ঘদিন ভারতের নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে আছেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/অক্টোবর ১০, ২০১৮)