দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বড় সমাবেশে সংবর্ধনা দিয়েছেন কওমী মাদ্রাসাগুলোর হাজার হাজার শিক্ষক এবং ছাত্র। তার সঙ্গে একই মঞ্চে এই অনুষ্ঠানে ছিলেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনগুলোর তরফ থেকে এই সংবর্ধনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা বিতর্ক চলছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে যখন ব্লগার এবং অনলাইন এক্টিভিস্টরা ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তখন আহমদ শফীর নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়ে শাপলা চত্বর অবস্থান নিয়েছিলো তারা - যাতে সমর্থন জানিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

শেখ হাসিনার সরকার তখন কঠোরভাবে হেফাজতে ইসলামকে দমন করেছিল।

কিন্তু পাঁচ বছর পর রোববার ঢাকায় আহমদ শফীর সঙ্গে এক মঞ্চে বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সংবর্ধনা গ্রহণকে সেদিনের আন্দোলনকারী ব্লগাররা কিভাবে দেখছেন? ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বাংলা এনিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সেকুলারদের সাথে।

ব্লগার আইরিন সুলতানা বিবিসিকে বলেছেন, "রাজনৈতিকভাবে এটা হয়তো একটা কৌশল হতে পারে, কিন্তু এটা অনেকভাবেই আমাদের আশাহত করে। কারণ ব্লগাররা অতীতে নানা রকম উস্কানির শিকার হয়েছেন, অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন।"

এটি কি নির্বাচনের আগে কট্টরপন্থী ধর্মীয় দলগুলোর কাছ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের একটি চেষ্টা?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডীন এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সাদেকা হালিম বলেন, এটা একটা জটিল প্রশ্ন।

"২০১৩-র ৫ই মে হেফাজতের যে তান্ডব আমরা দেখেছি, নারীদের নিয়ে তারা অনেক অবমাননাকর কথা বলেছেন, নারীদের লেখাপড়া, সম্পত্তির অধিকার বন্ধ করে দিতে বলেছেন - তার সাথে আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা সাময়িক লাভ এনে দিলেও, এর সুদূর প্রসারী পরিণতি কি হবে তা আমরা জানিনা" - বলছিলেন তিনি।

"আওয়ামী লীগ একটি পুরোনো দল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অনেক গভীর। তিনি নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। এসব ক্ষেত্রে তিনি তার প্রজ্ঞা দিয়ে এর পরিণতি কি হতে পারে তা ভাববেন।"

হেফাজতের সাথে এই মৈত্রীর পরে আওয়ামী লীগ কি আর তাদের সমর্থন পাবে - যারা সাধারণত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দলকেই সমর্থন করতে চান?

জবাবে ব্লগার আইরিন সুলতানা বলছিলেন, "সেই চ্যালেঞ্জটা আসলে আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে, এই অনিশ্চয়তার জায়গাটাও তাকে অনুভব করতে হবে। ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে ঢল নেমেছিল, সেই বিশ্বাস তারা রেখেছে কিন্তু অনেক আশাহত হবার মতো ব্যাপারও ঘটেছে, অনেকগুলো ধাক্কাও গেছে। আমি চাইবো আওয়ামী লীগ ব্যাপারটা অনুভব করুক, বুঝুক সে এটা এত সহজ ব্যাপার না।"

সাদেকা হালিম বলেন, "বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক বা ধর্মনিরপেক্ষতার রেটিংএ এখনো আওয়ামী লীগই এগিয়ে আছে। যারা অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল বা ধর্মনিরপেক্ষ - তাদের বেছে নেবার মত দল খুব সীমিত, তাদের কাছে আওয়ামী লীগই এখনো শেষ ভরসা।"

আইরিন সুলতানা বলেন, "কিছু কৌশল করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাটাই সফলতা নয়। সচেতনভাবে কেউ বারবার আওয়ামী লীগকে বেছে না-ও নিতে পারে। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সে চ্যালেঞ্জটার মুখোমুখি হওয়া উচিৎ।

সাদেকা হালিমের কথায়, হেফাজত ও আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা তাদের সাময়িক ফল এনে দিতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে।

"আমরা মনে করি আজকের এই হেফাজত-আওয়ামী রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা - এর পরিণতিতে ভবিষ্যতে তারা যদি আরো বেশি কিছু দাবি করে বসেন এবং তা যদি নারীদের অধিকারের বিপক্ষে যায় - সেখানে নারীরা অবশ্যই সোচ্চার হবেন।"

প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এগুলো মনে রেখেছেন, বলেন সাদেকা হালিম।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ০৫,২০১৮)