খুলনাব্যুরো: বাগেরহাটের উমেদার এম এ মান্নান তালুকদারের মালিকানাধিন নিউ বসুন্ধধার রিয়েল এস্টেটলি অবৈধ প্রক্রিয়াই প্রতারণার মাধ্যমে আমনত সংগ্রহের বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তা জানতে চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়সহ আইন শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের ওপর রুল জারি করেছে হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চ । সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুজা আল ফারুকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৯ অক্টোবর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরূী এবং বিচারপতি আশরাফুল কামাল এই রুল দেন।

আইনজীবী সুজা আল ফারুক জানান, গত ৮ আগস্ট দৈনিক বনিক বার্তা, ৭ সেপ্টেম্বর কালের কন্ঠ এবং ৬ অক্টোবর দ্যা রিপোর্ট ২৪ ডট কম অন লাইনে বাগেরহাট ডিসি অফিসের স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়া উমেদার মান্নান তালুকদার প্রতারণা করে ২ হাজার কোটি টাকার মালিক শিরোনামে অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ হয় । এই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে তিনি হাইকেটে একটি রীট আবেদন করেন। রীটের শুনানী শেষে ২৯ অক্টোবর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন ।

রুলে পক্ষভুক্ত করা হয়েছে- ১. বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব ব্যাংকিং, অর্থ মন্ত্রনালয়, ২ বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর, ৩, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন ৪, চেয়ারম্যান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড,৫, জেলা প্রশাসক খুলনা,৬ , জেলা প্রশাসক বাগেরহাট, ৭ পুলিশ সুপার খুলনা, ৮, পুলিশ সুপার বাগেহাট, ৯, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাগেরহাট থানা।

বিবাদীর ১০ নং তালিকায় নাম রয়েছে এস এম আব্দুল মান্নান তালূকদার উরফে উমেদার মান্নান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিউ বসুন্ধধারা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, প্রধান কার্যালয় কে আলী রোড় মিঠাপুকুর বাগেহাট । উচ্চআদালত তাকেও শো-কস করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী এড মো: সুজু আল ফারুখ আরো জানান ,এই রীট করার আগে তিনি নিউ বসুন্ধধার রিয়েল এস্টেট লি প্রতিষ্ঠানের কাছে আইনী নোটিশ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জবাব দিতে বলে ছিলেন। কিন্তু তিনি কোন জবাব না দেওয়াই এই রীট আবেদন করা হয়।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থ বছর থেকে সরকারি ও বেসকারি ব্যাংকে আমানত রাখলে বছরে সর্বোচ্চ ৬শতাংশ থেকে ৯শতাংশ হারে অর্থ মুনাফা প্রদান করে। সেখানে নিউ বসুন্ধধার রিয়েল এস্টেটে এক লাখটাকা এক বছর মেয়াদে বিনিয়োগ করলে ৩০ শতাংশ, ২ বছরে ৩৫ শতাংশ ৩ বছরে ৪০ শতাংশ চার বছরে দ্বিগুন অর্থ প্রদান ১০০ শতাংশ প্রদানের প্রলোভন দিয়ে এই অর্থ সংগ্রহ করছে। অর্থাৎ এক লাখ টাকা বিনিয়োগে চার বছরে দ্বিগুন দুই লাখ টাকা । এই প্রলোভন দিয়ে খুলনা বাগেরহাট ,পিরোজপুর, সাতক্ষীরা থেকে প্রায় দুইহাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে নিউ বসুন্ধধার রিয়েল এস্টেট।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউ রিয়েল এস্টেট বসুন্ধধার মূলত এলাকা ভিত্তিক মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জিনদের এজেন্ট এবং তাদের ভাষায় ফিল্ড অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেন। শর্ত আমানত টাকা আনতে পারলে তাদের ৫ শতাংশ হারে কমিশন দেয়া হয় । এসব ফিল্ড অফিসার সাধারণত বয়স্ক অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা/ কর্মচারী লক্ষ্য নির্ধারণ করে এই প্রলোভনের ফাঁদে ফেলেন।

বাগেরহাট জেলার মনিগঞ্জ এলাকার বর্তমান ভ্যান চালক ইশারত সরদার। তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা মিলে প্রায় লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করেছেন এই প্রতিষ্ঠানে। চার বছর পূর্ণ হয়েছে বছর খানেক আগে। এখন টাকা আনতে গেলে শুধু তারিখের পর তারিখ দেয়া হয় । কোথাও অভিযোগ করতে হয় তা তিনি জানেন না । বলেন এমডি মান্নান তালূকদারের সাথে একাধিক বার দেখা করতে চেয়ে তিনি সুযোগ পাননি। তবে ভ্যান চালক ইশরাত সরদার জানান, তার এফ ও (ফিল্ড অফিসার) বারবার বলেছে কোথাও অফিযোগ করলে টাকা খোয়া যাবে বলে হুমকী দিয়েছেন। তিনি জানান তার পরিবার প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট অংকের টাক জমা দিতেন। এখন আসল বা লাভ কোন টাকাই পাচ্ছেন না ।

বাগেরহাট সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা খান মুজিবর রহমান । তিনি এই নিউ বসুন্ধধারা রিয়েল এস্টেট সম্পর্কে জানান, প্রতিষ্ঠানটির দৃশ্যমান ব্যবসা বলে কিছু নাই । তারা মুসলিমদের কাছ থেকে এক লাখে দুই হাজার আর হিন্দুদের কাছে থেকে লাখে তিন হাজার টাকা মাসে লাভ্যাংশ দেবে বলে অর্থ সংগ্রহ করছে । তিনি উপজেলার নিজস্ব কার্যালয়ে জাতীয় এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সামনে বলেন, খুব দ্রুত বাগেরহাটে ৫ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবে। কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, আব্দুল মান্নান তালুকদার খুব দ্রুত দেশ ছেড়ে মালোয়েশিয়া বা দুবাই চলে যাবেন। আর সর্বস্ব জমা দেয়া ব্যক্তিদের তখন আত্মহত্যা কর ছাড়া আর কোন গত্যান্তর থাকবে না । তিনি বলেন ধুরন্ধর আব্দুল মান্নান তালুকদার এসব আমনাত সংগ্রহ করেছে একটু নিরীহ শান্ত এবং বয়স্ক লোকদের কাছ থেকে । তাদের প্রতিরোধ করার জন্য মান্নান একটা বাহিনী পুষে রেখেছে । ফলে এসব নিরিহ লোকদের আর আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন গত্যান্তর থাকবে না ।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর ০৭,২০১৮)