চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের ১৬ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান ও জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন। সভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টির কথা জানালেও নানা অভিযোগ তুলে ধরেন বিএনপির প্রার্থীরা।

সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সার্কিট হাউস ও জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে চলে মতবিনিময় সভা। সভায় সব দলের প্রার্থীদের নানা অভিযোগ শোনার পর সবার প্রতি সমান আচরণ করার কথা জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক।

সভায় আবদুল মান্নান বলেন, 'সব দলের অংশগ্রহণের কারণে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা এমন উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। একচোখা নয়; সবার প্রতি সমান আচরণ করা হচ্ছে। দেশের অন্য এলাকার চেয়ে চট্টগ্রামের নির্বাচনী পরিবেশ এখনও অনেক ভালো। আগামীতেও এটা বজায় রাখতে সব দলের প্রার্থীদের সহযোগিতা প্রয়োজন।'

জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি ফোন করে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের খুবই খারাপ ভাষায় হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও নানাভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ কাজ যারা করছেন, তারা ঠিক করছেন না। আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি। অনেক প্রার্থী প্রচারণায় নানা সমস্যার কথা জানিয়েছেন। কে কোন দলের প্রার্থী, সেটা আমাদের কাছে বড় নয়। সব প্রার্থী যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রচারণা চালাতে পারেন, সে জন্য সবার প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।'

চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজ বলেন, 'পুলিশ কারও প্রতিপক্ষ নয়। আমরা সব দলের প্রার্থীর ও সাধারণ মানুষের। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এবং যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, কেবল তাদেরই পুলিশ গ্রেফতার করছে। দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবেই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে।'

প্রার্থীদের উদ্দেশে পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, 'পুলিশকে মেরে জোর-জবরদস্তি করার দিন শেষ। কোনো রকম উস্কানিমূলক বার্তা দেবেন না। আপনারা সঠিক পথে থাকলে আপনাদের সমর্থকরাও খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।'

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, 'গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে চাই।'

প্রার্থীদের যত অভিযোগ: চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনের বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিজয় দিবসের র্যালিতে নগরের নয়াবাজারে তাকে গুলি করার জন্য উদ্যত হয়েছিল। হামলার ছবি তার কাছে আছে। সে সময় তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য আবেদন করেছিলেন। এক ঘণ্টা পর পুলিশ এসে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পাশাপাশি পুলিশও ধানের শীষের প্রার্থীর পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না।

বিএনপির অপর প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের আগের এই মুহূর্তে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে; গ্রেফতারও করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের বিএনপি প্রার্থী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা ও পোস্টার-ব্যানার লাগাতে প্রতিনিয়ত বাধা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নানাভাবে তাকে ও কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে। নৌকার প্রার্থী ও তার সমর্থকরা প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, প্রতিদিন রাতে নেতাকর্মীদের বাসায় যাচ্ছে পুলিশ। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে মামলাসহ নানাভাবে ভয়ও দেখানো হচ্ছে। তাদের জন্য এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তবে চট্টগ্রাম-৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারণা শুরুর পর থেকেই ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি থাকার কথা বলছেন। অথচ তিনি ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখেছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপিসহ সব দলের প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার আছে।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট যে তাণ্ডব চালিয়েছিল, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, সেসব বিষয়ে মানুষের মধ্যে ভয় আছে। তবে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করে আমীর খসরু বলেন, 'এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য। এটা রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার জায়গা নয়।'

এ সময় নওফেল বলেন, 'আপনারা রাজনৈতিক অভিযোগ আনতে পারলে আমরা কেন পারব না?' নৌকার প্রার্থী মইনউদ্দিন খান বাদল বলেন, মতের ভিন্নতা আছে বলেই সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিসহ সব প্রার্থীকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন সাহা, স্থানীয় সরকারের বিভাগীয় পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মমিনুর রশিদ, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজিসহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ডিসেম্বর ১৭,২০১৮)