দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল সংবাদ সংগ্রহের বিষয়ে নিষিদ্ধসহ নানা কড়াকড়ি আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য একটি নীতিমালাও জারি করা হয়েছে।

নীতিমালায় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং তথ্য সংগ্রহ করতে পারার কথা বলা আছে। তবে একসঙ্গে একাধিক সাংবাদিক একই ভোটকেন্দ্রের একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচার বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরাসির প্রচার করা যাবে না।

এসব অমান্য করলে বা ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন, বিধি ও কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়।

নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ শাখা) এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই নীতিমালা ২১ ডিসেম্বর জারি করা হয়। নীতিমালায় সাংবাদিকদের এক ডজনের বেশি দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নীতিমালাটি ইতোমধ্যে সংসদ নির্বাচনের সব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটগ্রহণের দিনসহ বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকরা যাতে সহজে নির্বিঘ্নে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে পারেন সেজন্য সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন আছে, তবে তা অবশ্যই নির্বাচনের সময়, ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনার সময় প্রযোজ্য বিধি-নিষেধ মেনে করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। এ জন্য ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে সাংবাদিকদের বিশেষ কার্ড সরবরাহ করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার কার্ড দেবেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সাংবাদিকদের কার্ড প্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে যেসব সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ করতে যাবেন, তাদের কার্ড নির্বাচন কমিশন থেকে দেয়া হবে। সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত এবং অনুমোদন সূচক স্টিকারযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন। মোটরসাইকেল ব্যবহার করার জন্য কোনও স্টিকার ইস্যু করা হবে না।

সাংবাদিকদের মোটরসাইকেলের স্টিকার না দেয়ার বিষয়টি এবারই প্রথম। তবে অন্য যানবাহন ব্যবহার করলে স্টিকার দেয়া হবে।

ভোটের সময় মোটরসাইকেল চালনার ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ক্ষেত্র বিশেষ আরও অধিককাল মোটরসাইকেল বা অনুরূপ যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে-পরে মোট চারদিন সাংবাদিকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে পারছেন না।

সাধারণত ভোটের দিন ঢাকা থেকে গণমাধ্যগুলোর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট করেসপন্ডেন্টদের (প্রতিনিধি) নিয়ে মোটরসাইকেলে করেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের খবর সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু এবার তা করা যাবে না।

নীতিমালা অনুযায়ী যা যা করা যাবে এবং যাবে না

- নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিক সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।

- ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের পর প্রিজাইডিং অফিসারকে অবহিত করে ভোটগ্রহণ কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ, ছবি তোলা এবং ভিডিও ধারণ করতে পারবেন। তবে কোনোক্রমেই গোপন কক্ষের ছবি সংগ্রহ কিংবা ধারণ করতে পারবেন না।

- একইসঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।

- ভোট কক্ষের ভেতর হতে কোনোভাবেই সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না।

- ভোট কেন্দ্রের ভেতর হতে সরাসরি সম্প্রচার করতে হলে ভোটকক্ষ হতে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে করতে হবে।

- কোনোক্রমেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করা যাবে না।

- সাংবাদিকরা ভোট গণনা কক্ষে ভোট গণনা দেখতে পারবেন, তবে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।

- ভোটকক্ষ হতে ফেসবুকসহ যে কোনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি প্রচার করা যাবে না।

- ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকবেন।

- ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকরা প্রিজাইডিং অফিসারের আইনানুগ নির্দেশ মেনে চলবেন।

- নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না।

- কোনও প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করতে পারবেন না।

- নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহের সময় প্রার্থী বা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোনও ধরনের প্রচারণা বা বিদ্বেষমূলক প্রচারণা হতে বিরত থাকবেন।

- নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮)