দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ২০১৮ সাল সিনেমা মুক্তি আরও কমে যাওয়ার বছর। সেই সময়েও তার সিনেমা সবচেয়ে বেশি মুক্তি পেয়েছে।

আগের চেয়ে সাফল্য কম পেলেও তার সিনেমাই বছর শেষে লগ্নি ফিরিয়ে এনেছে বেশি। এক যুগ ধরে বাংলা সিনেমা ঘুরে যেন শাকিব খান। আর কেউ নেই! কেউ কেউ ধূমকেতুর মতো মাঝে মধ্যে এসেছে আবার হারিয়েও যেতে বসেছে। কারও মতে, তার কূটকৌশলেই অন্যরা দাঁড়াতে পারছে না। কেন অপিরহার্য শাকিব খান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে? আদৌ কি অপরিহার্য তিনি। প্রযোজক নির্মাতারাও কি দায়ী নন এ জন্য! নাকি নিজের যোগ্যতা দিয়েই অপরিহার্যতা তৈরি করেছেন কিংবা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের 'ভাইজান', 'শিকারী', 'চালবাজ' কিংবা 'সুপারহিরো' অথবা 'ক্যাপ্টেন খান'।

পরিচালক, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, শাকিব খান নিশ্চয়ই তার যোগ্যতা দিয়ে অপরিহার্যতা তৈরি করেছেন। তবে কোনো অপরিহার্যতাই স্থায়ী নয়। এ বছর কিন্তু নতুন সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে। তবে সেই সম্ভাবনা পরিপকস্ফ হতে সময় দিতে হবে, বিনিয়োগ করতে হবে। আর বিনিয়োগ করতে হলে সিনেমার হল থাকতে হবে। হল থাকতে হলে সিনেমা থাকতে হবে। আর সিনেমা হতে হলে যেসব প্রশাসনিক বাধা আছে, সেগুলো দূর করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে গত বছর ৪১টি দেশি ছবি রিলিজ পেয়েছে। আগামী বছর হয়তো ১৪টিও থাকবে না। এ মুহূর্তে নিশ্চিতভাবেই ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাণ্ডারি চিত্রনায়ক শাকিব খান। তার হাতেই ছবির সংখ্যা বেশি।

২০১৮ সালেও সর্বাধিক ছবির নায়ক শাকিব খান। শুধু তাই নয়, সর্বাধিক ব্যবসা সফল ছবির নায়কও তিনি। যদিও ব্যর্থতার মুখও ভালোভাবেই দেখেছেন তিনি। তাকে নিয়ে হয়েছে রাজনীতি, নিষিদ্ধ, বয়কটসহ কত রকম খেলা। সবকিছু পাশ কাটিয়ে শাকিব খান ঠিকই কাণ্ডারির ভূমিকায় রয়ে গেছেন। গত বছর তার অভিনীত আটটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। গত দুই দশক ধরে ঢালিউড শাকিব খানের উত্থান হলেও গত বছর তার ছবি আলো-আঁধারির মাঝে

অবস্থান করেছে। আটটি ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। এর মধ্যে একটি যৌথ প্রযোজনার, বাকি দুটি পশ্চিম বাংলার ছবি। দেশীয় প্রযোজনায় পাঁচটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি; যা এই সুপারস্টারের ক্যারিয়ারের বিগত কয়েক বছরের চেয়ে কম। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক এবং বুকিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, এই ছবিগুলোর মধ্যে 'ভাইজান এলো রে' গাঁটের টাকা খরচ করে মানুষ দেখেছে। আরেক আমদানিকৃত সিনেমা 'চালবাজ' নিয়ে আলোচনা ছিল ভালোই। এ দুটি সিনেমা দেশের নয়। শাকিব খান অভিনীত দেশের চলচ্চিত্রগুলোর ব্যবসা ছিল গড়পড়তা। কয়েকটি সিনেমা দর্শকশূন্যতায়ও ভুগেছে। মানে ফ্লপের খাতায় নাম লিখিয়েছে।

দেশীয় প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে- 'আমি নেতা হবো', 'চিটাগাংইয়া পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া', 'পাঙ্কু জামাই', 'সুপারহিরো' ও 'ক্যাপ্টেন খান'।

তার অভিনীত ভারতীয় ছবি হিসেবে আমদানি করা হয়েছে- 'চালবাজ', 'ভাইজান এলো রে' ও 'নাকাব'। এর মধ্যে সুপার হিট ছিল 'সুপার হিরো'। বেশ ভালো ব্যবসা করেছে 'ক্যাপ্টেন খান'ও। শাকিবকে সমালোচিত করেছে 'চিটাগাংইয়া পোয়া নোয়াখাইল্লা মাইয়া' ও 'পাঙ্কু জামাই' ছবি দুটি। একইভাবে শাকিব দর্শকদের হতাশ করেছেন যৌথ প্রযোজনার 'নাকাব' দিয়ে। তবে সাফটায় আমদানি হওয়া কলকাতার দুই ছবি 'চালবাজ' ও 'ভাইজান এলো রে' দিয়ে বাজিমাত করেছেন তিনি। দুটি ছবিই বাংলাদেশে খুব ভালো ব্যবসা করেছে।

শুধু সিনেমা দিয়েই নয়, পারিবারিক কারণেও গত বছর আলোচনায় ছিলেন শাকিব খান। অপু বিশ্বাস এবং বুবলি প্রসঙ্গ ও সন্তান জয়ের বিষয় নিয়ে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। বছর শেষে বাংলালিংকের একটি বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েও বেশ আলোচনায় আসেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শাকিব খান বলেন, নানা বাধা পেরিয়ে আমাকে পথ চলতে হয়েছে। এখনও চলছি। আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি টিকে থাকতে হলে নিজের যোগ্যতাতেই টিকতে হবে। কষ্ট করে টিকে থাকতে হবে। নিজের কাজ করে যেতে হবে শত সমালোচনা সত্ত্বেও। রাখতে হবে নিজের ওপর বিশ্বাস।

কিছুটা চুপ থেকে 'ফুল নেবে না অশ্রু নেবে'-এর নায়ক শাকিব খান বলেন, চলচ্চিত্রের রাজনীতির কথা বলছেন তো- দেখেন আমিই কিন্তু সবচেয়ে বেশি রাজনীতির শিকার হয়েছি চলচ্চিত্রে। আমাকে বয়কট বা নিষিদ্ধ করেছে অন্যায়ভাবে। আমি কিন্তু আমার কাজটাকে ভালোবেসে নিজের মতো করে এগিয়েছি। সামনের দিকে তাকিয়েছি। নিজেকে বদলাতে চেয়েছি। ভালোকে গ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। কেউ কিন্তু আটকে রাখতে পারেনি। মান্না ভাইয়ের সময় কি রাজনীতি ছিল না? সালমান শাহর সময় রাজনীতি ছিল কি? মূল কথা কী জানেন, গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হলে কোনো রাজনীতিই আটকে রাখতে পারে না।

নিজের পরে কার সম্ভাবনা দেখেন কিংবা কাউকে নিজের সিংহাসনে পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনে করেন- প্রশ্নে শাকিব বলেন, এটা অহঙ্কারের মতোই লাগবে কিন্তু সেরাদের কিছু অহঙ্কারও জরুরি। আমার পরে আমি কাউকে দেখি না। আর যে যার মতো। শুভ ভালো করছে কিংবা সিয়াম খুব ভালো করছে। তারা তাদের দুনিয়া সাজিয়ে নেবে তাদের যোগ্যতায়। যোগ্যতা না থাকলে ঝরে যাবে। এটা প্রতিমুহূর্তের সংগ্রাম। দর্শক ভালোবাসলে সিংহাসন এমনিতে তৈরি হয়ে যায়। সেটা ধরে রাখাটাই সবচেয়ে বড় সংগ্রাম।

শাকিব খানের শীর্ষস্থান কিংবা তার পরবর্তী সিংহাসনের দাবিদার প্রসঙ্গে 'দহন'-এর নায়ক সিয়াম বলেন, শাকিব ভাই বিনা প্রশ্নে বাংলাদেশের সেরা। তিনি একাই নিজের কাঁধে বাংলাদেশের সিনেমাকে টেনেছেন। খারাপ সময়ে লড়াই করেছেন। তিনি ব্যবসা দিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে। এটা অস্বীকার করবে যে সে বোকা। আর সিংহাসন বলে কিছু নেই। আর শাকিব ভাইয়ের জায়গায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখি না। ওটা বেয়াদবি। অগ্রজদের সম্মান দিলে নিজের সম্মান মেলে। আমি মনে করি, প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো। ভালো কাজ করলে দর্শককে সম্মান করে কাজ করলে জায়গা তৈরি হবেই। আর নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে জায়গা তৈরি হবেই। সেটা কারও সিংহাসন দখলের মানসিকতা দিয়ে হয় না।'

নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, 'সত্যি কথা বলতে কি শাকিব খান আজকের এই অবস্থানে এসেছেন তার পরিশ্রম দিয়েই। তবে এটাও ঠিক যে একজনের ওপর ভর করে কিন্তু একটি শিল্প বাঁচতে পারে না।'

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জানুয়ারি ০৩, ২০১৯)