দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি জটিলতা রোধে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ খেলাপিদের বিচারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাশাপাশি উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগও বন্ধ করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে জেল-জরিমানাসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এতে ধরা পড়বে সব রাঘববোয়াল। বুধবার নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের খেলাপি ঋণ আদায়ে আইন সংশোধনের ঘোষণা প্রসঙ্গে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞ বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থঋণ আদালত কার্যকর করতে না পারলে কোনো লাভ হবে না। এটি কার্যকর করতে হলে ঋণখেলাপি ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। যার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। খেলাপি ঋণ আদায়ে সদিচ্ছা থাকলে প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণখেলাপিকে ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে বিচার করা হোক। এর মাধ্যমে অর্থঋণ আদালত কার্যকর হবে। উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ দেয়া যাবে না। রায়ের সঙ্গে সঙ্গে জেল-জরিমানা এবং সংশ্লিষ্টদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এতে রাঘববোয়াল সবাই ধরা পড়বে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ও ৪৭ ধারা দ্রুত সংশোধন করতে হবে। ৪৬ ধারা অনুযায়ী অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা হয়।

আর ৪৭ ধারায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়। কিন্তু উভয় ধারা শুধু বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সরকারি ব্যাংক নয়। এটি সংশোধন করে ধারা দুটি দিয়ে সরকারি ব্যাংককে ধরার ক্ষমতা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।

তবে খেলাপি ঋণ হওয়ার ক্ষেত্রে যত না আইন, তার চেয়ে দুর্নীতি বেশি দায়ী। দুর্নীতি বন্ধ না করে খেলাপি ঋণ বন্ধ করা যাবে না। এ ছাড়া উচ্চ আদালতে কয়েকটি বেঞ্চ রাখতে হবে, যেখানে শুধু খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তি হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রধান সমস্যা আইনি জটিলতা। বিশেষ করে অর্থঋণ আদালত কার্যকর করা। ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করলে গ্রাহক উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। এটি বছরের পর বছর চলতে থাকে। এ ছাড়া আইনে সর্বোচ্চ তিনবার ঋণ পুনঃতফসিল করার কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে চলছে ১০-১২ বার। তবে প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে এ হার আরও বেশি। ঋণ অবলোপনেও চলে নানা ছলচাতুরী। এর বাইরে ২০১৫ সালে ঋণ পুনর্গঠনের মাধ্যমে বেশ কিছু খারাপ গ্রাহক ঋণ সুবিধা নিয়েছেন। যারা পরে ঋণ পরিশোধ করেননি।

অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ব্যাংকে চেক দিলে তা ডিজঅনার হলে ওই ব্যাংকের ঋণখেলাপির কাছে তা পাঠাতে হবে। সে দিতে না পারলে জেলে যাবে। এ আইনটি করা খুবই জরুরি। উন্নত অনেক রাষ্ট্রে এ আইন চালু রয়েছে। এ ছাড়া ঋণ আদায়ে ব্যাংক মামলা করলে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে তা বছরের পর বছর ঝুলে রাখা হয়। এটি বন্ধ করার আইন করতে হবে। এ দুটি আইন প্রণয়ন এবং কার্যকর করতে পারলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যাবে।

জানতে চাইলে ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন অর্থমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যে কোনো মূল্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাংকিং আইন ও বিচারিক সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি সুশাসন নিশ্চিত করতেও বলেছেন।

বুধবার সচিবালয়ে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান ব্যাংকিং খাতে কিছু আইন আছে, যেগুলো খুবই দুর্বল। যে কারণে ঋণ আদায় পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। আইনের যেসব জায়গায় দুর্বলতা আছে, তা চিহ্নিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে শিগগির প্রচলিত আইন পরিবর্তন করা হবে। তার মতে, উচ্চ আদালতে রিটের কারণে আদায় ব্যাহত হচ্ছে। জনগণের টাকা বেহাত হোক- এটা সরকার চায় না। যে ঋণ নেবে, তাকে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে আইন সংশোধন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জানুয়ারি ১১, ২০১৯)