দ্য রিপোর্ট ডেস্ক :  বাণিজ্যিকভিত্তিতে মৌমাছি চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন মাগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামের রমজান শেখের ছেলে মৌচাষি মখলেছুর রহমান। এ মৌসুমে প্রায় ১০০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। যার মূল্য প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবকই মৌ চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।
১৯৯০ সালে মৌমাছি চাষ শুরু করেন তিনি।

বাসস জানায়, বর্তমানে তার রয়েছে ১০৮টি বাক্স। তার দেয়া তথ্য মতে মাগুরা জেলায় মৌ খামারীর সংখ্যা অন্তত ৩০ জন। এটি খুব লাভজনক। স্বল্প পুঁজি নিয়ে যে কেউ মৌ চাষ শুরু করতে পারেন। মৌমাছি চাষ যেখানে ভাল হয় সেখানে পরাগায়নও যেমন ভাল হয় তেমনি ক্ষেতের ফসলও ভাল হয়। পাশাপাশি ক্ষেতে পোকামাকড়ও কম লাগে।
এ বছর তিনি মাগুরা সদর উপজেলার কালিশংকরপর ও আঙ্গারদাহ একালাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করছেন। মখলেছুর রহমান জানান, কালিশংকরপুরে তিনি একটি জমিতে মাছিসহ ১০৮টি বাক্স বসিয়েছেন। ‘মা’ মৌ খামার নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মখলেছুর রহমান কেবল মৌচাষি নন তিনি একজন প্রশিক্ষকও বটে। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ঈমাম। এ পর্যন্ত ৪৭টি ব্যাচে চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার খামারে এপিস মিলিসিরা জাতের মৌমাছি চাষ করা হয়। তিনি ২০১০ সালে মাগুরা সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। তার মতে জেলার শালিখা উপজেলা ও মাগুরা সদরের হাজরাপুর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে মৌমাছি চাষ করা হয়। সাধারণত কালজিরা, পেঁয়াজ, সূর্যমুখী, ধনে, বরই, সজিনা, খেসাড়ী, সরিষা, লিচু এবং সুন্দরবনের ক্যাওড়া, খালিসা, হরকাচা, বরুন, বাইন ও পশুর ফুল থেকে প্রতিবছরের এ সময়টিতে মধু সংগ্রহ করা হয়। ১ তলার একটি বাক্সে ফ্রেম থাকে ৫-১০টা যা তৈরি করতে খরচ হয় ১ হাজার টাকার বেশি। অপরদিকে ২-৩ তলার একটি বাক্সে ফেম থাকে ১৫-১৮ টা। যা তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। মাগুরাতে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য কোন মেশিন নেই, নেই কোন গবেষণাগার। যেহেতু এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত সেকারণে জরুরী ভিত্তিতে এগুলো গড়ে ওঠা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
কথা প্রসঙ্গে মখলেছুর রহমান আরও জানান, মৌ চাষের মাধ্যমে এখন তিনি স্বাবলম্বী। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক মৌচাষে আগ্রহী হচ্ছে। এ কাজের জন্য ২০১১ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ মৌ খামারী হিসাবে পুরষ্কার পেয়েছেন। তার মতে লেখাপড়া শিখে কেবল চাকরির পিছনে না ছুটে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে মৌমাছি চাষসহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে সহজেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আমি মনে করি, মৌসুমী এ মৌচাষের মাধ্যমে কিছুটা হলেও বেকারত্বের সংখ্যা কমবে।
এ বিষয়ে মাগুরা শিল্প সহায়ক কেন্দ্র (বিসিক)’র উপ-ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম জানান, মাগুরা থেকে এ বছর ২শ টন মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র আছে। আশা করছি এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। এছাড়া মৌ খামারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মৌ চাষ কৃষির সাথে সম্পর্ক যুক্ত বিধায় কৃষকরা যাতে সরিষা ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করেন সেজন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মধু প্রসেসিং সেন্টার স্থাপন করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া বিসিক’র পক্ষ থেকে মৌচাষ করণের আওতায় এ পর্যন্ত ৭০ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ এবং ২৪ জন চাষির প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা হারে ঋণ দেয়া করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জানুয়ারি ১১, ২০১৯)