দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : গত মাসে শুরু হওয়া ভারত-পাকিস্তান সংঘাত আপাতত কিছুটা থিতিয়ে গেলেও ভারতের জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন এয়ার ইন্ডিয়াকে এখনও তার চড়া মাশুল গুনে যেতে হচ্ছে।

গত তিন সপ্তাহ ধরেই পাকিস্তানের আকাশসীমা ভারতীয় বিমানের জন্য নিষিদ্ধ। ফলে এয়ার ইন্ডিয়ার ইউরোপ বা আমেরিকাগামী বিমানগুলোকে এখন অনেক ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। খবর বিবিসির।

বাড়তি সময়, জ্বালানি এবং রিফিউয়েলিং স্টপেজের কারণে এয়ার ইন্ডিয়ার ইতিমধ্যেই প্রায় দশ মিলিয়ন ডলারের মতো বাড়তি খরচ হয়েছে এবং এই অঙ্কটা রোজই বেড়ে চলেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, অচিরেই এই পরিস্থিতি হয়তো আবার স্বাভাবিক হতে পারে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে বালাকোটে হামলা চালিয়েছিল ভারতের যুদ্ধবিমান - আর তার পরদিন থেকেই এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানি এয়ারস্পেস।

ফলে দিল্লি থেকে তাদের ইউরোপ বা আমেরিকাগামী বিমানগুলোকে এখন প্রথমে দক্ষিণমুখী হয়ে গুজরাট যেতে হচ্ছে - তারপর আরব সাগর ও পার্সিয়ান গাল্ফ পাড়ি দিয়ে উড়তে হচ্ছে গন্তব্যের দিকে।

এয়ার ইন্ডিয়া এমনিতেই আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে দীর্ঘদিন ধরে, নতুন এই পরিস্থিতিতে তাদের সমস্যা আরও অনেকগুণ বেড়ে গেছে।

সংস্থার সাবেক জেনারেল ম্যানেজার অশোক শর্মা বলেন, "যেহেতু ঘুরপথে যেতে হচ্ছে তাই খরচ তো বাড়বেই। তা ছাড়া জার্নির সময়ও বাড়ছে স্বাভাবিকভাবেই।"

"আর বেশি লম্বা রুট মানেই বেশি জ্বালানি, যার পুরোটা একবারে ভরে নিয়ে যাত্রা শুরু করাও সব সময় সম্ভব নয় - ফলে রাস্তায় কোনও একটা ট্রানজিট পয়েন্টে নতুন করে তেল ভরার জন্য রিফিউয়েলিং স্টপও নিতে হচ্ছে।"

দিল্লি থেকে এতদিন এয়ার ইন্ডিয়ার যে ফ্লাইটগুলো সরাসরি নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, ওয়াশিংটন ডিসি বা শিকাগোতে যেত - সেগুলোকেই এখন জ্বালানি ভরার জন্য থামতে হচ্ছে আমিরাতের শারজা বা অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, আর তাতে খরচও প্রচুর বেড়ে গেছে।

এমন কী, লন্ডন বা প্যারিস থেকে এয়ার ইন্ডিয়ায় চেপে দিল্লি আসতে বাড়তি দু-তিনঘন্টা সময় লাগছে।

এ সপ্তাহেই যেমন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে চেপে লন্ডন থেকে দিল্লিতে এসেছেন বিবিসির সাংবাদিক কুমার মালহোত্রা।

তিনি বলছিলেন, "ইউরোপ পেরিয়ে তুরস্কে ঢোকার পরই দেখলাম বিমানটা সোজা দক্ষিণে টার্ন করছে - আর ইরাক, ইরান পেরিয়ে ঢুকে পড়ছে পারস্য উপসাগরে। পরিষ্কার বোঝা গেল, পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়াতেই ওই রাস্তা নেওয়া হল।"

"তারপর বাঁয়ে ঘুরে গুজরাট দিয়ে ঢুকে আমরা অবশেষে দিল্লি এলাম। যে ফ্লাইটটা সাত থেকে আট ঘন্টা লাগার কথা, সেটায় নয় ঘন্টার ওপর সময় লাগল।"

কিন্তু এটা কি তাহলে এয়ার ইন্ডিয়ার জন্য একটা স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হল?

ভারতের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব সালমান হায়দার অবশ্য মনে করেন, পরিস্থিতিটা পাকিস্তানকেও অসুবিধায় ফেলছে - কাজেই একটা সমাধান হয়তো শিগগিরি বেরোবে।

মি হায়দার বলেন, "পাকিস্তান যখন পূর্ব আর পশ্চিম, দুভাগে বিভক্ত ছিল তখন ভারত তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিলেই তারা বিরাট বিপদে পড়ত।"

"বাংলাদেশ সৃষ্টির পর সমস্যাটা সেভাবে নেই ঠিকই, কিন্তু আজ ভারতও যখন তাদের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করে দিচ্ছে - সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া তাদের কাছে বহু দূরের পথ হয়ে যাচ্ছে।"

"ফলে আমি নিশ্চিত দুদেশের উত্তেজনা আরও একটু প্রশমিত হলেই এই পরিস্থিতির একটা সমাধান হবে।"

এর আগেও একাত্তরের যুদ্ধের সময়-সহ বহুবারই ভারত-পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা পরস্পরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে।

কিন্তু এখন এয়ার ইন্ডিয়ার যত বিমান রোজ ইউরোপ-আমেরিকায় যায় ততটা আগে কখনওই ছিল না - ফলে আর্থিক চাপটাও পড়ছে নজিরবিহীন।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/মার্চ ১৯,২০১৯)