দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজধানীর হাতিরঝিল লেকে অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএর বহুতল ভবন থেকে মালামাল সরিতে নিতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মালামাল সরাতে ব্যর্থ হলে ভবন সিলগালা করে দেয়া হবে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) খন্দকার ওলিউর রহমান।

মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি জানান, বিজিএমইএ বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করে। রাজউক প্রথমে দুই ঘন্টা সময় দেয়। পরে আরও এক ঘন্টা সময় দেয়া মালামাল সরিয়ে নিতে।পরে মালামাল সরিয়ে নিতে আরও কিছু সময়ের আবেদন করে বিজিএমইএ। রাউউকের পক্ষ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে মালামাল সরাতে ব্যর্থ হলে ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হবে।

খন্দকার ওলিউর রহমান বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই আমরা বিজিএমইএ ভবনের অফিস অপসারণের কাজ শুরু করেছি। আমরা যে ভবন অপসারণ শুরু করেছি এটাও ভবন ভাঙার অংশ। তাছাড়া এখানে টেকনিক্যাল ও ম্যানেজমেন্টের বিষয় আছে এগুলো শেষ হলেই আমরা ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবো। এই বড় ভবনের নানা বিষয় দেখতে হচ্ছে, এখানে অনেকগুলো ব্যাংক আছে সেটাও দেখতে হচ্ছে।

এর আগে ভবনটি থেকে বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজিএমইএকে দুই ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় রাজউক।

ওই সময় অলিউর রহমান জানান, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজে সার্বিকভাবে প্রস্তুত আছে রাজউক। ভবন ভাঙার জন্য বুলডজারসহ অন্যান্য যন্ত্রাদি ভবনের সামনে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই ভবনে ব্যাংকসহ অন্যান্য অফিস আছে। তারা মামলাল সরিয়ে নিতে দুই ঘণ্টা সময় চেয়েছেন, আমরা সেই সময়টুকু তাদের দিয়েছি।

দুই ঘন্টা সময় শেষ হওয়ার আগেই সব মালামাল সরাতে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় চায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।পরে রাজউক তখন এক ঘন্টা সময় বাড়িয়ে দেয়।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ভবনের সামনে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। পাশাপাশি ভবন ভাঙার গাড়ি প্রস্তুত রাখা হয়।

সবশেষ ১২ এপ্রিলের মধ্যে ভবনটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন আদালত। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নামছে রাজউক।

এ বিষয়ে রাজউক সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙতে বিজিএমইএকে দেয়া সময় পার হওয়ার পরই এটি ভাঙার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভবনটি ভাঙতে রাজউক সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে বিজিএমইএ ভবনের সামনে উপস্থিত রাজউকের কর্মকর্তারা সকালেই জানান।

এর আগে সোমবার গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার থেকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ আইনি জটিলতার অবসান শেষে আমরা উচ্চ আদালত কর্তৃক নতুন করে কোনো প্রকার সময় বৃদ্ধি বা ভবন ভাঙা কার্যক্রম স্থগিত রাখতে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় বিজিএমইএ ভবনটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করছি।

‘বিজিএমইএ ভবন’ অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয়েছে গত ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে তৈরি পোশাক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএকে এক বছর ১০ দিন সময় দেন।

রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আদালত যদি আর সময় না দেন, তা হলে আমরা ভবনটি ভেঙে ফেলব। এ বিষয়ে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

এ বিষয়ে করা রিটের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, হাতিরঝিলে খালের ওপর নির্মিত বহুতল ভবন অপসারণে বিজিএমইএকে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয়েছে গত শুক্রবার। ইতিমধ্যে বিজিএমইএ ভবন থেকে তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বলে শুনেছি।

জলাধার আইন ভেঙে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে ‘একটি ক্যান্সার’ বলেছিলেন হাইকোর্ট। ওই ভবন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আপিলেও বহাল থাকে। পরে বিজিএমইএ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। ভবনটি টিকিয়ে রাখতে বিজিএমইএ নেতারা বহু চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘ আট বছর মামলা লড়ে পরাজিত হন তারা।

ভবনটি সরাতে একাধিকবার সময় নেয় বিজিএমইএ। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫০ শতাংশ কমমূল্যে উত্তরার ১৭নং সেক্টরে ১১০ কাঠা জমির ওপর ১৩তলা ভবন নির্মিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে নতুন এই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৬ তলার নির্মাণকাজ শেষ হওয়া ভবনটির পুরো কাজ শেষ হতে পারে ২০২০ সালের জুনে। তবে কয়েকটি তলার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় ও আদালতের বাধ্যবাধকতা থাকায় চলতি মাসেই বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় উত্তরায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এপ্রিল ১৬, ২০১৯)