দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ফারমার্স ব্যাংকের পর এবার নতুন প্রজন্মের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকও নাম বদলাতে চায়। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নাম পরিবর্তনের আবেদনও করেছে ব্যাংকটি। এর আগে আলোচিত ফারমার্স ব্যাংক এ বছরই নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক নামে কার্যক্রম শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে করা আবেদনে ‘এনআরবি’ শব্দ বাদ দিয়ে ‘গ্লোবাল ব্যাংক অব বাংলাদেশ’ নামে কার্যক্রম চালাতে চাচ্ছে ব্যাংকটি।

এ প্রসঙ্গে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাবিব হাসনাত বলেন, এনআরবি নামে দেশে তিনটি ব্যাংক রয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে এক ধরনের কনফিউশন তৈরি হয়েছে। এতে আমরা গ্রাহকও হারাচ্ছি। যে কারণে আমাদের ব্যাংকের নাম থেকে এনআরবি শব্দটুকু বাদ দেওয়ার কথা ভাবা হয়। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদনও করা হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল বেশ কিছু দিক বিবেচনা করে। এখন ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করার যে আবেদন করেছে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। ব্যাংকটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ডসভায় সিদ্ধান্ত হবে।

জানা গেছে, প্রবাসীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গঠনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান এবং তাদের দেশে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১২ সালে এই ব্যাংকের লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। নীতিমালায় এনআরবি শব্দ যুক্ত করে বিশেষ কিছু শর্তারোপ করা হয়। যাতে বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স আহরণেও এসব ব্যাংক বিশেষ অবদান রাখতে পারে। কিন্তু এসব উদ্দেশ্যের কোনোটিই প্রত্যাশা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে পারেনি। প্রথাগত ব্যাংকিংয়ের মধ্যেই কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে প্রবাসীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক।

২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের মধ্যে তিনটি এনআরবি। প্রবাসীদের উদ্যোগে গঠিত ব্যাংক তিনটি হলো- এনআরবি কমার্শিয়াল, এনআরবি গ্লোবাল ও এনআরবি ব্যাংক। ৩০টি শর্ত দিয়ে আগ্রহপত্র দেওয়া হয় তাদের। বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স আহরণে ভূমিকা রাখার শর্তসাপেক্ষে লাইসেন্স পায় ব্যাংক তিনটি। ২০১৩ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর ধাপে ধাপে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে তারা।

উল্লেখ্য, ব্যাংক খাতে ব্র্যান্ডিং ইস্যুতে নাম ও লোগো বদলের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে। বেসরকারি ব্যাংক অনেক সময় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অথবা এগিয়ে যাওয়ার জন্য লোগো বা নাম বদলানোর মতো কৌশল হাতে নেয়। এর আগে ২০০৬ সালে দেউলিয়া হওয়া ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে করা হয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। ১৯৯২ সালে ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) বিলুপ্ত করে ইস্টার্ন ব্যাংক নাম দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, নাম ও 'লোগো বদল করা ব্যাংকের এক ধরনের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। গ্রাহকদের মনোযোগ আকর্ষণ করাই এর লক্ষ্য। তিনি ফারমার্স ব্যাংকের উদাহরণ দিয়ে বলেন, 'নাম বদল করাতে ওই ব্যাংকটি (ফারমার্স) এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’

এর আগে ফারমার্স ব্যাংক গত ১৬ মার্চ থেকে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ওইদিন নতুন লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় পদ্মা ব্যাংকের। নাম ও লোগো বদলাতে খুব বেশি টাকা খরচ না হলেও ব্যাংকটি এখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। লেনদেনও বাড়ছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এপ্রিল ২১, ২০১৯)