দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বর্তমান প্রেসিডেন্ট পেট্রো পোরোশেংকোকে বিপুল ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন ভলোদিমিয়ের জিয়েলইয়েনস্কি৷ ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল' নামের টিভি শো-তে প্রেসিডেন্টের ভূমিকায় কৌতুক অভিনয় করে জনপ্রিয় হন তিনি৷

রোববারের দ্বিতীয় দফার ভোটে বেশ বড় ব্যবধানেই পোরোশেংকোকে হারিয়েছেন তিনি৷ দুটি বুথফেরত জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৭৩ শাতংশ ভোট পেয়েছেন জিয়েলইয়েনস্কি৷ খবর ডয়চে ভেলের


পোরোশেংকো সঙ্গে সঙ্গেই পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং কৌতুক অভিনেতা থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া জিয়েলইয়েনস্কিকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন৷ পোরোশেংকো বলেন, নির্বাচনের ফল তাঁর কাছে এরই মধ্যে ‘পরিষ্কার' হয়ে গেছে৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি অফিস ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু জোর দিয়ে বলতে চাই, রাজনীতি ছাড়ছি না৷''

অন্যদিকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এক ভাষণে জিয়েলইয়েনস্কি বলেছেন, ‘‘এ সাফল্য আমরা একসঙ্গে অর্জন করেছি৷ সোভিয়েত-পরবর্তী দেশগুলোর নাগরিকদের বলতে চাই, আমাদের দেখুন! সবকিছুই সম্ভব৷''

কিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশিওলজি অ্যান্ড দ্য রাজুমকভ সেন্টার এই বুথফেরত জরিপ পরিচালনা করেছে৷ ৩০০ কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার ভোটারের মত নেয়া হয়েছে এতে৷ এ জরিপ ৩ শতাংশের বেশি কখনো হেরফের হয় না বলে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি৷

রুশ-ইউক্রেন সম্পর্ক

পূর্ব ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ইউরোপ-সমর্থিত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জিয়েলইয়েনস্কি৷

রাশিয়ায় আটক ইউক্রেনের সৈনিকদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি৷ জিয়েলইয়েনস্কি বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে আমি সবকিছু করবো৷''

বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া

জিয়েলইয়েনস্কির বিজয়ে ক্রিমিয়া দখল ও পূর্ব ইউক্রেনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উত্থানের ঘটনার পর রাশিয়া-ইইউ দ্বন্দ্বের মধ্যে নতুন এক চরিত্র পাওয়া গেল৷

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ‘‘বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনের জনগণ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছে৷ এখন নতুন নেতৃত্বকে ভোটারদের আশার কথা বুঝতে হবে৷ অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক, দুই ক্ষেত্রেই এ কথা সত্য৷''

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক জিয়েলইয়েনস্কির বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷ এক টুইটে তিনি বলেন, ‘‘ইইউ তার সমর্থন চালিয়ে যাবে৷''

ন্যাটোর প্রধান ইয়েন্স স্টোলটেনবার্গও টুইটে জিয়েলইয়েনস্কিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ইউক্রেন ন্যাটোর এক সম্মানিত অংশীদার, এবং ন্যাটো তার সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে৷''

গল্প থেকে বাস্তব

ইউক্রেনের জনপ্রিয় টিভিশো ‘সার্ভেন্ট অব দি পিপল'৷ এর কেন্দ্রীয় চরিত্র ভাসিলি হলোবরোদকো ইতিহাসের একজন শিক্ষক৷ তাঁর দুর্নীতিবিরোধী বক্তৃতা একসময় বেশ ভাইরাল হয়ে ওঠে, যার পথ ধরে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট বনে যান৷

কৌতুকধর্মী চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন ভলোদিমিয়ের জিয়েলইয়েনস্কি৷ এর আগে রাজনীতির সাথে তাঁর কোনো পরিচয়ই ছিল না৷ ইউক্রেনজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় তাঁর অভিনীত টিভি শো-টি, জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ভলোদিমিয়েরও৷ সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল নামে তিনি একটি রাজনৈতিক দলই গঠন করে ফেলেন৷ অংশ নেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে৷

জিয়েলইয়েনস্কির নির্বাচনি প্রচারের ওয়েবসাইটে ব্রিফকেস হাতে তাঁর যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়, সেটিও সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল-এর হলোবরোদকো চরিত্রটির একটি মুহূর্ত থেকে নেয়া৷ একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে প্রার্থীর ফেসবুক পেজেও৷

নির্বাচনি প্রচারণায় ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল' কথাটি প্রচুর ব্যবহার করা হয়েছে৷ নির্বাচনের আগে টিভি চ্যানেলে শো-টি পুনঃপ্রচারিতও হয়৷ আর এর সবশেষ তৃতীয় সিজনটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয় মার্চে, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার আগেই৷

ইউক্রেনের জনপ্রিয় একটি টেলিভেশন শো ‘সার্ভেন্টস অব দ্যা পিপল’৷ ভলোদিমিয়ের জিয়েলইয়েনস্কি সেখানে শিক্ষকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি বনে যান৷ পর্দার এই ঘটনাকেই এবার বাস্তবের মঞ্চে রূপ দিতে যাচ্ছেন জিয়েলইয়েনস্কি৷ প্রথম দফার নির্বাচনে তিনি রাষ্ট্রপতির দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন৷ দেশব্যাপী জনপ্রিয় এই অভিনেতা নির্বাচনি প্রচারে নিজেকে ক্লাউন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন৷

শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিয়েলইয়েনস্কির অংশ নেয়ার ঘোষণা অনেকেই তাঁর আরেকটি কৌতুক হিসেবেই নিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরবর্তীতে দেশে নানা ধরনের সংস্কার নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি এবং সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে তাঁর হুঙ্কার মন গলাতে পেরেছে সাড়ে চার কোটি ভোটারের৷

পোরোশেংকো অবশ্য নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তেও ফেসবুকে ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, ‘‘পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হওয়া কোনো কমেডি নয়, মজা না লাগলে ইচ্ছে করলেই তা বন্ধ করে দেয়া যাবে না৷''

তবে তাতে যে কোনো কাজ হয়নি, রোববারের নির্বাচনের ফলেই তা পরিষ্কার হয়ে গেল৷


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এপ্রিল ২২,২০১৯)