ঢাকা প্রতিনিধি : বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির দুই ছাত্রীকে উদ্দেশ করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করার অভিযোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামকে ঢাবিতে মারধর করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এ ঘটনা ঘটে। মারধরের ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের উল্টো থানায় দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী সুমনের বিরুদ্ধে। সুমনের বাড়িও বাঁশখালী উপজেলায়।

জানা গেছে, অভিযুক্ত তাজুল ইসলাম বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, সোমবার দুপুরে আমরা আমাদের এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। ওই বন্ধুর আসতে দেরি হচ্ছিল দেখে তিন বন্ধু টিএসসিতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ আমরা দেখতে পাই মাঝ বয়সী এক লোক আমাদের দেখে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি (মাস্টারবেশন) করছেন। তখন আমরা তার পরিচয় জানতে চেয়ে এমন করছে কেন জানতে চাই। অন্যদিকে আমাদের সঙ্গে থাকা এক বন্ধু টিএসসির মামাদের কাছে এ লোক কোথাকার জানতে চায়। এরই মধ্যে বন্ধুকে দূরে দেখে দৌড়ে পালাতে চায় ওই ব্যক্তি। তখন আমরা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলি। কয়েকটি চড়-থাপ্পড় দেই। এর মধ্যে ওই লোকের পক্ষ হয়ে কিছু লোক এসে আমাদের নানাভাবে হেনস্থা করে ও বিভিন্ন অভিযোগ দিতে থাকে। পরে ওখানকার এক লোকের নির্দেশে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে পুলিশ আমাদের থানায় নিয়ে আসে। ওসি আসার পর তিনি জানতে চান আমরা অভিযোগ দেব কিনা। কিন্তু আমরা চাইনি বিষয়টি নিয়ে আর ঝামেলা পোহাতে। যেখানে আমরা ভুক্তভোগী হয়েও প্রথমে হেনস্থার শিকার হয়েছি!

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পর তাজুল ইসলাম তার পরিচিত ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী সুমনকে জানান। কিছুক্ষণ পর সুমন কয়েকজন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। এর আগে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। তারা তাজুল ইসলাম ও ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে রিয়াজ উদ্দিন সুমনও ওই দুই ছাত্রীর থেকে ঘটনাটি শোনেন। ঘটনাটি শুনে তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ওই তিন শিক্ষার্থীকে থানায় দিতে বলেন। এরপর প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তাদের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে নিয়ে যান। সুমনের নির্দেশে ওই তিন শিক্ষার্থীকে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেন। এরপর সুমন ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামকে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত তাজুল ইসলাম বলেন, 'আমি টিএসসিতে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত রেখে ফোনে কথা বলতেছি। কথা শেষে আমি টিএসসির বাইরের দিকে আগালে তারা পিছন থেকে আমাকে ডেকে মারধর করেন। তারা আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছেন তা সত্য নয়।'

ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী সুমন বলেন, 'ওই লোক আমার এলাকার। তিনি একজন চেয়ারম্যান, সম্মানিত ব্যক্তি। তার নামে বহিরাগত ওই তিন শিক্ষার্থী যে অভিযোগ করেছে তার সত্য-মিথ্যা কতটুকু জানি না! তারা তাকে ব্যাপক মারধর করেছে। এটা খুবই খারাপ করেছে তারা। এজন্যই তাদের পুলিশে দেওয়া হয়েছে।'

এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী সবাইকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, 'সবাই বহিরাগত হওয়ায় তাদের থানায় দেয়া হয়েছে। থানা তাদের বিষয়টি মীমাংসা করবে। যেন তারা ক্যাম্পাসে এসে ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড না করে।'

শাহবাগ থানার ওসি (তদন্ত) আরিফুর রহমান জানান, আমরা ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। ঢাবি প্রক্টরিয়াল বডি আমাদের ফোন করে দু'জন শিক্ষার্থীকে পাঠিয়ে দেয়। আমরা তাদের কাছে জানতে চাই আপনাদের কোনো অভিযোগ আছে কি-না। তারা কোনো অভিযোগ জানাননি। এরপর আমরা ঢাবি কর্তৃপক্ষকে ফোন দিয়ে এ কথা জানালে তারা জানান অভিভাবক ডেকে তাদের ছেড়ে দিতে।

এরপর অভিভাবক ডেকে ওই শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/এপ্রিল ২২,২০১৯)