দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মহান মে দিবস আজ বুধবার (১ মে)। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের ইতিহাস গড়ার দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে সকল শ্রমিক দৃঢ় প্রত্যয়ে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের দিন আজ।

শ্রমিক-মালিকের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, কর্মক্ষেত্রে শান্তি ও সুষ্ঠু কর্মপরিবেশের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে বাংলাদেশে এ বছর মে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘শ্রমিক মালিক ঐক্য গড়ি, উন্নয়নের শপথ করি।’

দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান মে দিবস পালিত হবে।

বুধবার (১ মে) এ উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করা হয়েছে যা দৈনিক বাংলা মোড়ে শ্রম ভবনের সামনে থেকে সকাল ৭টায় শুরু হয়ে রাজউক, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও জিরো পয়েন্ট দিয়ে সচিবালয়ের সামনের সড়ক হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে শেষ হবে। দিবসটি পালনে বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ সাজানো হয়েছে। দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে স্মরণিকা প্রকাশিত হয়। বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেল ৩টায় ‘কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের অধিকার ও সুরক্ষা প্রতিষ্ঠায় মালিক, শ্রমিক ও সরকারের ভূমিকা’ শীর্ষক একটি সেমিনার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হবে।দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত শ্রম অধিদফতর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের যৌথ সমন্বয়ে এবং জেলা প্রশাসকদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে মে দিবসকে শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তিনি দেশের মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বাস্তবায়ন, কমপ্লায়েন্স ও পারস্পরিক সম্পর্কের আইনগত ভিত্তি সুদৃঢ় করা, উৎপাদনশীতা বৃদ্ধি, দক্ষতার উন্নয়ন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে গত অক্টোবরে আমরা বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করেছি। এতে মোট ৮৭টি ধারা উপ-ধারায় সংশোধনী আনা হয়েছে। এ সংশোধনের মাধ্যমে শ্রম আইনে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি সহজ করা হয়েছে এবং শ্রমিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও কারখানার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় শ্রম অধিদফতরের ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকে শ্রমিকরা শ্রম দফতরে না এসেও ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির আবেদন করতে পারছেন। ফলে কাজের গতিশীলতা যেমন বেড়েছে তেমনি শ্রমিক ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার হারও বেড়েছে।

শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার রক্ষায় এ সম্পর্কিত প্রদেয় সেবার তথ্য প্রাপ্তির সহজলভ্যতায় শ্রম অধিদফতর ‘পাবলিকলি এক্সেসিবল ডাটাবেইজ’ চালু করেছে।’
সারা দেশে ২০১৮ সাল হতে মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৩৫২টি ট্রেড ইউনিয়নকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/টিআইএম/০১ মে,২০১৯)