ডা. মো. শাহিনুর রহমান

মানুষ সহ সকল স্তন্যপায়ী, পাখি সরীসৃপ প্রাণীর শুক্রাশয়ে টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন হয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পুরুষের শুক্রাশয় এবং নারীর ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়,যদিও স্বল্প পরিমাণ অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়। টেস্টোস্টেরন পুরুষত্বের জন্য দায়ী প্রধান স্টেরয়েড হরমোন যা এন্ড্রোজেন গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত| এটি প্রধান পুরুষ হরমোন যা শুক্রাশয়ের লিডিগ কোষ (Leydig Cell) থেকে উৎপন্ন হয়।

পুরুষের জন্য টেস্টোস্টেরন প্রজনন অঙ্গ যেমন শুক্রাশয় (Testis) বর্ধনের পাশাপাশি গৌণ বৈশিষ্ট্য যেমন মাংসপেশি,শরীরের লোম বৃদ্ধি করে। পুরুষদের মাঝে টেস্টোস্টেরন বিপাক হার নারীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি। স্বাস্থ্যগত প্রভাব সাধারণত এন্ড্রোজেন প্রোটিন সংশ্লেষণ করে এবং এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর সংবলিত টিস্যুর বৃদ্ধি সাধন করে।টেস্টোস্টেরনের প্রভাবকে লিঙ্গিক(virilizing) এবং অ্যানাবলিক (Anabolic) এই দু ভাগে ভাগ করা যায়।মাংসপেশি বৃদ্ধি,হাড়ের ঘনত্ব(density)বৃদ্ধি,হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তিতে উদ্দীপনা করা -এসব অ্যানাবলিক কাজ।যৌন অঙ্গের পূর্ণতা প্রদান করা, বিশেষ করে ফিটাসের শিশ্ন এবং শুক্রথলি তৈরি এবং বয়ঃসন্ধিকালে কণ্ঠস্বর গাঢ় হওয়া, দাড়ি এবং বগলের চুল বৃদ্ধি - এসব এন্ড্রোজেনিক কাজ।

এসবের অনেক কিছুই পুরুষের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য। বয়ঃসন্ধির পূর্বে শৈশবের পরে এন্ড্রোজেন লেভেল বৃদ্ধির লক্ষণীয় প্রভাব দেখা যায় ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই।যেমন- বয়স্ক-টাইপ শরীরের গন্ধ। শ্রোণীদেশে চুল। বগলে চুল। উচ্চতায় বৃদ্ধি। গোঁফ গজান। বয়ঃসন্ধিকালে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর এন্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি হলে বয়ঃসন্ধিকালিন প্রভাব দেখা যায়। ছেলেদের এই প্রভাব সচরাচর একটু দেরিতে হয় কিন্তু মেয়েদের রক্তে মুক্ত টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ অনেক দিন থেকে বেশি মাত্রায় থাকলে এমনটি দেখা যায়। সিবেসিয়াস গ্রন্থি বেড়ে যাওয়া। এটি ব্রণের কারণ হতে পারে। ভগাংকুর (Clitoris) বর্ধিত হওয়া। শ্রোণীদেশের চুল নিচে উরু এবং উপরে নাভী পর্যন্ত বিস্তৃত।

মুখমণ্ডলে চুল (জুল্পি, গোঁফ, দাঁড়ি)। মাথার চুল কমে যাওয়া। বুকে,বৃন্তের চারপাশে,নিতম্বের চারপাশে লোম। পায়ে পশম। বগলে চুল। মুখের উপরস্থ ফ্যাট কমে যাওয়া। পেশি বৃদ্ধি। গাঢ় কণ্ঠস্বর। পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি। কাঁধ প্রসারিত, বুকের পাঁজর ফুলে যাওয়া। হাড়ের পূর্ণতা প্রাপ্তি এবং বৃদ্ধি রোহিত হওয়া। প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর প্রভাব টেস্টোস্টেরনের প্রভাব বয়স্ক নারীর তুলনায় বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আরো পরিষ্কারভাবে প্রমাণযোগ্য , কিন্তু উভয়ের জন্যই দরকারি।

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের পরে হ্রাস পাওয়ায় এইসবের কিছু প্রভাব প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে। স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য টেস্টোস্টেরন ভুমিকা রাখে। এটি সারটলি কোষ এর জিনকে সক্রিয় করে।শারীরিক শক্তি নিয়ন্ত্রক।পেশী গঠন করে।তবে এর সন্তোষজনক মাত্রায় থাকা শুধু সাবালকত্ব প্রাপ্তি বা যৌবন কালের জন্যই নয়, সব সময়ের জন্য; এমনকি বৃদ্ধ বয়সের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সাবালকত্ব প্রাপ্তি ছাড়াও সাধারণ স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ, শরীর গঠন, যৌনক্রিয়া, এবং অন্য সকল শারীরিক কর্মকাণ্ডের জন্য শরীরে পরিমিত মাত্রায় টেসটোসটেরন হরমোন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, আপনার টেস্টোরেনের মাত্রা বৃদ্ধি হতে পারে দ্রুত মাংসপেশি এবং জীবনীশক্তি লাভের কারণ; যা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হতে পারে।মজার ব্যাপার হলো, এটি নারীদের সুস্বাস্থ্য এবং যৌনতার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।গবেষকরা বেশ জোরালোভাবেই এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, নারী-পুরুষ উভয়ের শরীরেই পরিমিত মাত্রায় টেস্টোরেন থাকা উচিত ।বিশেষ করে ১৩ বছর বয়সে তো এটি অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

২৫-৩০ বছর বয়স থেকেই একজন মানুষের টেসটোসটেরনের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমতে শুরু করে। এটা একটা সমস্যা। কারণ, গবেষণায় এটা জোরালোভাবে দেখা গেছে যে, স্বল্প মাত্রার টেসটোস্টেরনের সাথে স্থূলতা বা মেদবাহুল্য, রোগের ঝুঁকিবৃদ্ধি এবং অকালমৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় আরো পাওয়া যায়, এটি এমনকি নারীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ; তাদের অন্যান্য প্রধান হরমোন যেমন এস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের পাশাপাশি টেসটোস্টেরনের লেভেলও যথেষ্ট মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। সুতরাং প্রত্যেকেরই উচিত টসটোস্টেরনের লেভেল সর্বোচ্চ মাত্রায় রাখতে তাদের জীবনধারায় বা লাইফস্টাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।

পুরুষ হরমোন বৃদ্ধি করে যেসব খাবার

ডিমের কুসুম, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল, সেলারি, লাল মাংস, কড লিভার তেল, ব্লুবেরি, অ্যাভোকাডো, লাল আঙ্গুর, ঝিনুক বা শুক্তিসমূহ, গোমাংস যকৃত, কুমড়ো বীজ, মটরশুটি, অ্যাসপারাগাস, Chia বীজ, ডুমুর, আনারস, ওটমিল, পোল্ট্রি, Brussel অঙ্কুরিত , কাঁচা চকলেট, ব্রাজিল বাদাম, কলা, রসুন, ব্রকোলি, পেঁয়াজ, আদা, ডালিম, পার্সলে, গোলমরিচ, Sauerkraut, দধি, Mangosteen, কেল্প্, তরমুজ, শাক, বাঁধাকপি, প্রাণী হার্ট, বিছুটি রুটস, মধু, কিশমিশ, কাজুবাদাম, উচ্চমানের লবণ বা হিমালয় ক্রিস্টাল লবণ, স্যামন, টুনা। বর্তমানে পুরুষ হরমোনের মাত্রা ক্রমান্নয়ে কমে যাওয়াতে এর চিকিৎসা অতিব জরুরি।

এটা মানুষের স্বাভাকি জীবন যাত্রাকে স্থবির করে দিচ্ছে। কৃত্রিম হরমোন গ্রহণ করা কোন ভাবেই নিরাপদ বা স্থায়ী নয়। এবং এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। হোমিওপ্যাথি ওষুধের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে এই হরমোন হ্রাসের সমস্যা সমাধান সম্ভব।


লেখক: ডা. মো. শাহিনুর রহমান, (বিএঅনার্স, এমএ,ডিএইচএমএস-ঢাকা) শেখ বদরুদ্দীন হোমিও চেম্বার ৪২/২ ঢালকানগর লেন-গেণ্ডারিয়া ঢাকা-১২০৪; মোবাইল-০১৭১১-১৩৮-১৩৫।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ০১,২০১৯)