এ.কে.এম মহিউদ্দীন

বুধবার ৯ রমজান । আমরা বিভিন্ন পুস্তকাদি পাঠের মাধ্যমে পবিত্র সিয়াম বা রোজার ফজিলত সম্পর্কে জেনেছি। এটা সর্বজনবিদিত- ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের কল্যাণের জন্য রোজার বিধান চালু হয়েছে। এবং এটা হিজরি দ্বিতীয় সনে ফরজ ঘোষণা করে আয়াত নাজিল করা হয়। রোজা ফরজের মহত উদ্দেশ্যের অন্যতম বিষয় হচ্ছে-বান্দা যেন আল্লাহ্র ভয়ে ভীত থাকে সর্বদা। আর এই ভয়টাকে বলে আরবিতে ‘তাকওয়া’। একারণে আয়াতে কারিমায় বলা হচ্ছে‘ হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। সম্ভবত এর ফলে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে।’-সুরা বাকারা:আয়াত-১৮৩।

এ থেকে রোজা ফরজের প্রধান বিষয়টি স্বচ্ছ হয়ে আসে আমাদের সামনে। ‘তাকওয়া’র অভিধানগত অর্থ-বাঁচা, ভয় করা। শরিয়তি পরিভাষায় বলা হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সকল আদেশ মানা ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা। বিশদ ব্যাখ্যায় বলা যাবে- আল্লাহকে ভয় করতে হবে। তাঁর আদেশ নিষেধ মানতে হবে এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভ করার চেষ্টা করতে হবে। সকল ফরজ, ওয়াজিব পালন করে হারাম কাজ থেকে বিরত থাকার নাম ‘তাকওয়া’। প্রখ্যাত সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ [রা.] বলেছেন, তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে-আল্লাহ্‌র আদেশের আনুগত্য করা, তাঁর নাফরমানি না করা ও তাঁর কুফরি না করা।

তাকওয়া নিয়ে মুসলিম স্কলারদের নানা মত রয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় উমর বলে খ্যাতিমান খলিফা উমর বিন আব্দুল আজিজ [রহ.] বলেন, দিনে রোজা রাখা কিংবা রাতে জাগরণ করা অথবা দুটোর আংশিক আমলের নাম তাকওয়া নয়। বরং তাকওয়া হচ্ছে-আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা পালন করা এবং তিনি যা হারাম করেছেন তা থেকে দূরে থাকা। এরপর আল্লাহ যাকে কল্যাণ দান করেন সেটা এক কল্যাণের সাথে অন্য কল্যাণের সম্মিলন। উবাই বিন কাব [রা.] হজরত উমর [রা.] দ্বারা জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেন, আপনি কি কাঁটাযুক্ত পথে চলেছেন ? উমর [রা.] বলেন, হ্যাঁ। উবাই ফের বলেন, কীভাবে চলেছেন ? উমর ফারুক [রা.] বলেন, গায়ে যেন কাঁটা না লাগে সে জন্য চেষ্টা করেছি ও সতর্কভাবে পথ চলেছি। উবাই তখন বলেন, এটাই হচ্ছে তাকওয়ার উদাহরণ।

তাকওয়ার ইহকালীন ও পরকালীন ফল

ইহকালে তাকওয়ার বিষয়গুলো সহজ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করে তাকওয়া অনুসরণ করলে আল্লাহ বান্দার বিভিন্ন বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন। [সুরা তালাক:৪] তার ফলে সঠিক পথে চলতে বান্দার কোন কষ্ট হবে না। দ্বিতীয়ত, ‘তাকওয়ার ফলে মানুষ শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে পারে। আল্লাহ বলেন, যারা তাকওয়া অনুসরণ করে, শয়তান তাদেরকে ক্ষতি করার জন্য স্পর্শ করলে তারা সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন তারা তাদের জন্য সঠিক ও কল্যাণকর পথ সুস্পষ্টভাবে দেখতে পায়।’ তাকওয়ার কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সংকট থেকে উদ্ধার ও এবং অভাবিত রিজক দান করবেন। তিনি বলেন, যে আল্লাহকে ভয় করে তাকওয়া অনুসরণ করে, আল্লাহ তাকে সংকট থেকে উদ্ধার করবেন। এবং তাকে অভাবিত রিজক দান করবেন। [সুরা তালাক:২০]

যিনি তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করে তাদেরকে মুত্তাকি বলা হয়। এব্যাপারে কোরআনের ভাষ্য হলো- আল্লাহ অবশ্যই মোত্তাকীদের আমল কবুল করেন। [সুর মায়েদ:৫৭] অন্য আয়াতে বলা হচ্ছে-যারা তাকওয়া অর্জন করে ও নিজের আচার-আচরণকে সংশোধন করে, তাদের কোন ভয় ভীতি ও পেরেশানি নেই। [সুরা আরাফ:৩৫]

তাকওয়াধারি মূলত আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাধিক প্রিয়, সম্মানিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই আল্লাহ্র কাছে সর্বাধিক সম্মানিত যে অধিকতর তাকওয়া অনুসারী। [সুরা হুজুরাত :১৩] এই প্রকার অসংখ্য ইহকালীন ফল তাকওয়াধারির জন্য রয়েছে। সংপ্তি কলেবরের কারণে এখানে অল্পবিস্তর আলোচনা করা হয়েছে। এবার পারলৌকিক কিছু ফলাফলের উদাহরণ পেশ করা হচ্ছে। মুমিনের একমাত্র মিশন আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি বিধানের মাধ্যমে জান্নাত লাভ করা। পবিত্র কোরআনে অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে মুত্তাকিদের জন্য এ বিষয়ে সংবাদ দেয়া হয়েছে। সুরায়ে দোখানে বলা হচ্ছে-নিশ্চয়ই মুত্তাকিরা জান্নাত ও ঝর্ণধারার মধ্যে বাস করবে। সুরায়ে আলে ইমরানে বলা হচ্ছে- তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুতগামী হও, যার প্রশস্ততা হলো আসমান-জমিনের সমান; এটা তৈরি করা হয়েছে মোত্তাকিদের জন্য।

জান্নাতের সুসংবাদ দেয়ার পাশাপাশি সেখানে কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবে তা বর্ণনা করা হয়েছে কোরআনে পাকের মধ্যে। মোত্তাকিদের বেহেশতের আয়তলোচনা হুরদের সাথে শাদি-মোবারক করানো হবে। আল্লাহ বলছেন, ‘এরূপই এবং আমি তাদেরকে বড় চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের সাথে বিয়ে দেব।’ আরও বিস্তারিতভাবে এই দৃষ্টান্ত থেকে মুত্তাকির জন্য পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়টি পরিস্কার হয়ে আসে মুত্তাকিদের জন্য প্রতিশ্রুত জান্নাতে আছে পরিস্কার ও স্বচ্ছ সুপেয় পানি, অবিকৃত স্বাদের দুধ, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরাব, পরিস্কার মধুর নহরসমূহ এবং তাতে আরো আছে ফল-ফলাদি ও তাদের পালন কর্তার পক্ষ থেকে ক্ষমা।-সুরা মুহাম্মদ-১৫

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ১৫,২০১৯)