মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা ব্যুরো : রপ্তানিযোগ্য এক মণ কাঁচাপাটের মূল্য মাত্র তিনশ’ ৮১ টাকা । খুলনা জোনের সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে নিলামে প্রতিমণ পাট কেনার জন্যে এমনই দরপত্র দাখিল করেছেন আগ্রহী ক্রেতাগণ । অথচ একই ব্যাংকের জামানত হিসেবে এই পাটের দর মনপ্রতি ২ হাজার ১শ’ টাকা দেখিয়ে পাট রপ্তানিকারকরা প্লেজ ঋণ গ্রহণ করেছিলেন। যার পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ যে পাট প্রতিমণ ২ হাজার ১শ' টাকায় কেনা হয়েছে তার বিক্রি মূল্য দাঁড়িয়েছে তিনশ’ ৮১ টাকায়। এই দরে পাট বিক্রি করলে ব্যাংকের ঘাটতি হবে মণ প্রতি ১ হাজার ৭১৯ টাকা।

সোনালী ব্যাংকের খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো: শাহাজাহান আলী শেখ দ্য রিপোর্টকে বলেন, রপ্তানিকারকরা কাচাঁপাট রপ্তানির জন্য মজুদ দেখিয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন রপ্তানি না করায় এবং ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গুদামের পাট নিলাম করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। দুই দফা নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর এই মে মাসে ব্যবসায়ীরা প্রতিমণ পাট সর্বোচ্চ ৩৮১ টাকা দর দাখিল করেছেন । তিনি জানান এই পাট প্লেজ ঋণ হিসাবে ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। প্রতিমণ পাট দুই হাজার ১শ’ টাকা দর দেখিয়ে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এভাবে খুলনা জোনে ঋণের পরিমান তিন হাজার কোটি টাকা ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩৮১ টাকা দর নির্ধারণ করে পাট নিলাম করা হলে তার মূল্য ১ হাজার কোটি টাকারও নিচে হবে। অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের খুলনা জোনে দুই হাজার কোটি টাকারও বেশী ঋণ অনাদায়ী থেকে যাবে।
উল্লেখ্য কোনো ব্যবসায়ী নিজের গুদামে থাকা কোন পণ্য জামানত রেখে ব্যাংক থেকে যে ঋন গ্রহণ করে তাই প্লেজ ঋণ। খুলনার পাট ব্যবসায়ীরা গুদামে থাকা পাটের বিপরীতে প্লেজ ঋণ গ্রহণ করে থাকেন।এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা কাচা পাট ক্রয় ও তা প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রুপান্তরিত করে থাকেন। তারা এভাবে পাটের বিক্রি মূল্য ২৮০০ টাকা নির্ধারণ করে সোনালী ব্যাংকের কাছে ঋণ আবেদন করেন। খুলনা জোন কর্তৃপক্ষ এই দাম ২ হাজার ১০০ টাকা নির্ধারণ করে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী পাট ব্যবসায়ীকে গত তিন বছর ধরে ঋণ প্রদান করে। যার পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এ নিয়ে ২০১৮ সালের জুলাই মাসের দিকে দ্য রিপোর্টে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যাতে প্লেজ ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও তা আদায়ের ব্যর্থতার বিষয় টি উল্লেখ করা হয়। এরপর অনাদায়ী থাকা অবস্থায় ঋণ প্রদান বন্ধ রাখা হয়।

শাহাজাহান আলী শেখ জানান, নিলামে পাটের এত কম দাম হাওয়ায় সিদ্ধান্তের জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।তিনি স্বীকার করেন পাট রপ্তানীকারকদের গুদামে বাস্তবে এই পরিমাণ পাট নেই । তারপরও যা আছে তাই বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা আদায়ের উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে ,কিন্তু দাম কম হওয়াই ব্যাংক বিপাকে পড়েছে। একই ভাবে ঋন সমণ্বয় করতে পারছেন না।

বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলীর সাথে যোগাযোগ করলে দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, ব্যাংক টাকা না দেওয়ায় এবং রপ্তানি প্রায় শূন্য হওয়ায় কেউ পাট কিনছেন না। ফলে পাটের দাম পড়ে গেছে,যা খুব স্বাভাবিক। তিনি জানান কৃষকের কাছ থেকে কাঁচাপাট কিনে তা রপ্তানিযোগ্য করে তুলতে পাটের দাম মণপ্রতি আড়াই হাজার টাকার বেশি পড়ে যায় ।

(দ্য রিপোর্ট/এটি/ টিআইএম/মে ২৮, ২০১৯)