দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: রামপুরার ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে গত ১৩ জুন রাত ১১টা ২১ মিনিটে উবারে কল পান চালক আরমান। কল পেয়ে যাত্রীর দেয়া ঠিকানায় উপস্থিত হন তিনি। কিন্তু উবারের ওই প্রাইভেটকারে সেদিন মূল যাত্রীর পরিবর্তে চড়েন অন্য যাত্রী। গন্তব্য উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর। কিন্তু উত্তরা থেকে আর ফেরা হয়নি আরমানের।

স্থানীয়দের খবরে গাড়ির মালিক জানতে পারেন আরমান মারা গেছেন। খবর দেয়া হয় পুলিশকে। উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের ৫২ নম্বর বাড়ির সামনে ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৪৫৪৫ নম্বর গাড়ির ভেতর থেকে উবার চালক মো. আরমানের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় নিহতের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন একটি হত্যা মামলা করেন।

ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পারেন, ওই রাতে চালকের কাছে উবারের একটি কল এসেছিল। যে নম্বর থেকে কলটি এসেছিল তার অবস্থান ছিল উত্তরায়। কিন্তু ওই কলে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে যাত্রী হিসেবে ওঠেন অন্য ব্যক্তি, তারা এক বা একাধিক হতে পারেন। পরে কল দেয়া নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে কলারকে ট্রেস করা যাচ্ছে না।

সুপরিকল্পিতভাবে উবার চালককে পেছন থেকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে গলা কাটা হয়। গলা কাটার পর গাড়ি ছিনতাই না করে অথবা অন্য কোনো করণে কিংবা ধরা পড়ার ভয়ে গাড়ি না নিয়েই সটকে পড়ে দুর্বৃত্তরা।

চালক আরমান ওরফে আমান (৩৭) পাবনার ঈশ্বরদীর ফতেহ মোহাম্মদপুরের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে। তিনি মিরপুর ১১ নম্বরের ১২ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর লেনের ১৬ নম্বর বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন।

ঘটনার পর উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই ফারুক আহমেদ বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে তারা অবগত হন। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেটকারের ড্রাইভিং সিট থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে নিহতের পরিচয় মেলে।

ঘটনার পর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আরমানের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন। মামলা নং- ১৬। মামলাটি এখন তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তর বিভাগ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডিবি কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা উবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা যে তথ্য দিয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট হয় না যে, কতজন যাত্রী সেদিন গাড়িতে উঠেছিল। আবার যে নম্বর থেকে কল এসেছিল সেই কলার যাত্রী হিসেবেও ওঠেননি। এখানেই সন্দেহের অবতারণা। কারণ কলারের অবস্থান তখন রামপুরা এলাকায় ছিল না। অ্যাপসভিত্তিক পরিবহনসেবা উবারে কলার অন্য স্থানে থাকলেও তিনি কল দিয়ে অন্য যে কোনো স্থানের ঠিকানা দিয়ে সেখান থেকে যাত্রী তোলার অনুরোধ জানাতে পারেন। উবারচালক মনে করলে সেই ঠিকানা থেকে যাত্রী তুলে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারেন। আরমানের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে।’

এ ব্যাপারে ডিএমপির উত্তরের এডিসি (ডিবি) কাজী শফিকুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ওই ঘটনায় উত্তরা ১৪নং সেক্টরের সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে স্পষ্ট কিছু মেলেনি। আবার যে নম্বর থেকে উবারের গাড়ির জন্য কল দেয়া হয়েছিল সেটিও বন্ধ।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কোনো ছিনতাইকারী যাত্রী হিসেবে গাড়িতে উঠেছিল। গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পেছন থেকে তার গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে কোনো কারণে গাড়িটি না নিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

‘তদন্ত চলছে। তদন্তের অগ্রগতির ভিত্তিতে নেপথ্যের কারণ জানা যাবে’- যোগ করেন তিনি।

তবে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে উবার অ্যাপসের কিছু দুর্বলতা তাদের পর্যবেক্ষণে এসেছে। প্রথমত, কলার ব্যতীত অন্য কোনো যাত্রী তোলার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থাকার প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে সেটি নেই। দ্বিতীয়ত, উবারে যে যাত্রীই উঠুক তার ছবি সংরক্ষণের ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল। সেটিও রাখা হয়নি। তৃতীয়ত, উবারে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে শুধু নাম, কন্ট্রাক্ট নম্বর ও মেইল অ্যাড্রেস হলেই হয়। এক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা ভুয়া নাম, কন্ট্রাক্ট নম্বর ও মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করতে পারে। এ বিষয়েও তাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল।

নিহত আরমানের খালাতো ভাই আরিফ হোসেন বলেন, আরমানের হঠাৎ মৃত্যুতে পুরো পরিবার এখন হতাশায় নিমজ্জিত। রাতারাতি পরিবারটির রাস্তায় বসার দশা। নয় বছরের ছেলে নাঈম আর এক বছরের শিশুকন্যা আফরিনকে নিয়ে স্ত্রী রাবেয়া বেগম এখন পাগলপ্রায়। তাদের একটাই আশা, আরমান হত্যার সঠিক বিচার যেন হয়। এছাড়া উবার কর্তৃপক্ষ যেন আরমানের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেন- এমন দাবিও তাদের।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ২৪, ২০১৯)