দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: নগরে এবার আগেভাগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও আগের তুলনায় বেশি। নিয়মিত ওষুধ না ছিটানো এবং ঢাকায় বাসাবাড়িতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জীবাণুবাহী এডিস মশা জন্মের হার বাড়ায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, গেল কয়েক বছরের হিসাব বলছে, জানুয়ারি থেকেই কমবেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তরা হাসপাতালে আসেন। তবে এবার রোগীর সংখ্যা বেশি। গেল বছরের মে মাসে ৫২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার মে মাসে এই সংখ্যা তিন গুণ (১৫৫ জন)। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৮৩৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের এ সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন। এ বছর আক্রান্তদের মধ্যে দুজন এপ্রিলে মারা গেছেন। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন ৭৩৪ জন এবং বর্তমানে ১০৩ জন ভর্তি আছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু রোগী বাড়ার দুটি কারণ চিহ্নিত করছে। প্রথম কারণ ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নির্মাণযজ্ঞ। এখানে বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে, আরও চলছে রাস্তাঘাট নির্মাণ। এ কারণে পুরো ঢাকায় রাস্তাঘাট ও মাটি কেটে রাখা আছে। এসব জায়গায় ও চারপাশে সহজে পানি জমছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মশা বেড়ে গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টি ও তাপমাত্রার পরিবর্তন এডিস মশা জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে।

পুরান ঢাকার কায়েতটুলীর মারুফুল ইসলাম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি আছেন। মহাখালী থেকে আসা শাহাদাত হোসেনও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একই বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আক্রান্ত দুজন জানালেন, তিন-চার দিন জ্বরে ভুগে হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। তাঁরা জানান, বাসার আশপাশটা অপরিচ্ছন্ন। বাসা কিংবা কর্মস্থলের কোথাও মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তেজগাঁও, তুরাগ, পল্লবী, মগবাজারে, উত্তরা, গুলশান, বনানী, কাফরুল, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুর, পীরেরবাগ, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, বনানী, গুলশান, বারিধারায় সবচেয়ে বেশি এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেণ্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকা, দক্ষিণ মুগদাপাড়া, বাসাবো, মানিকনগর বিশ্বরোড, শেরেবাংলা রোড, হাজারীবাগ, মগবাজার ও রমনা, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, হাজারীবাগ, ফরাশগঞ্জ, শ্যামপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ীতে ডেঙ্গুর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন এলাকায় তাঁরা মশা মারার কোনো কাজ দেখছেন না। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত একাধিক ব্যক্তি ও দুই সিটি করপোরেশনের মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, বাড্ডা, খিলগাঁও, লালবাগ এলাকায় ও বাড়িঘর দোকানে দিনে-রাতে মশার উপদ্রব আছে। তাঁরা এসব এলাকায় করপোরেশনের মশা মারার জন্য ওষুধ ছিটানো বা ফগিং দেখেননি।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুন ২৫,২০১৯)