দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন বলে দাবি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের। 

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপিকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত নেতা ও দলের সঙ্গে চক্রান্ত করে ব্যর্থ কামাল হোসেনকে ভাড়া করে সামনে দাঁড় করালেন। ওরা কামাল হোসেনকে ওদের জন্য ভাড়া করলেন, আর কাজ করলেন আমাদের জন্য। তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে মাঠ খালি করিয়ে দিলেন আর আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। সমস্ত মাঠ খালি হলে গেলো, ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। এই হচ্ছে বিএনপির মুরোদ।

আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে বিএনপি পরাজিত হয়েছে দাবি করে সরকারি দলের সিনিয়র এ সংসদ সদস্য বলেন, রাজনীতি হচ্ছে কৌশল। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। ওরা মাত্র কয়েকজন সংসদে বসে আছে। ওদের জীবনের পাতায় পাতায় ভুল। আমার বিএনপির বন্ধুরা বারবার ভুল করেছেন। ২০১৪ সালে একবার ভুল গোস্যা করে নির্বাচনে এলেন না। অবরোধ করে জ্বালাও পোড়াও করলেন। তখন আমরা যেই ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম, মনে করলেন এটা কী হলো!

তিনি বলেন, ‘আবার ২০১৮ সালে নির্বাচন এলো, লোক ভাড়া করলো। কাকে করলো? আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত নেতা, অত্যন্ত শিক্ষিত ও বিদগ্ধ নেতা। আওয়ামী লীগে চক্রান্ত করে ব্যর্থ হওয়া কামাল হোসেনকে ভাড়া করে সামনে দাঁড় করালেন। তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে মাঠ খালি করিয়ে দিলেন আর আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। সমস্ত মাঠ খালি হলে গেল, আমার নিজের এলাকায় তাদের খুঁজেই পাইনি। খেলা যদি ফাঁকা মাঠে হয় কী করবো? ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। তারা মাঝপথ থেকে পালিয়ে গেলো। এভাবে আমরা বারবার গোল দেবো ইনশাআল্লাহ। এই যে ভুলের রাজনীতি তারা করে, এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা আমাদের কাছে বারবার হেরে গেছেন। ভোটে নেমে মাঠ থেকে পালিয়ে গেলেন। আপনাদের দিয়ে কিছু হবে না। আপনারা খেলতেও জানেন না। খেলা পরিচালনাও করতে জানেন না। আন্দোলন করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। প্রেসব্রিফিংয়ে মধ্যে পড়ে আছেন আপনারা। আপনারা মাঠে নামতে জানেন না। আওয়ামী লীগই জানে কীভাবে মাঠে নামতে হয়।বললেন পার্লামেন্টে আসবেন না। অবৈধ পার্লামেন্ট। অবৈধ পার্লামেন্টে আজ বৈধ হয়ে বসে আছেন।

তারেক রহমান এসে বিএনপির ১২টা থেকে ১৩টা বাজিয়ে দিয়েছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ভুলত্রুটি থাকতে পরে, তবে দেশের রাজনীতিবিদরাই সবচেয়ে দূরদর্শী। রাজনীতিবিদরাই এ দেশ দিয়েছেন। তারা এ দেশ স্বাধীন করেছেন। আমরা প্রতি বছরই বিশাল বাজেট করছি কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। ভারত বা ভিয়েতনামে যদি শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন হয় তাহলে আমাদের এখানে হবে না কেন। বাজেট বাস্তবায়িত না হওয়ার অন্তরায়গুলো বলতে চাই। যে যত বড় আমলা যে তত ফাইল আটকে রাখে। যে যত ফাইল আটকায় যে তত বড় আমলা। এই আমলাতন্ত্র আমাদের জন্য একটা সমস্যা। আমলাদের মধ্যে কিছু আছেন, দীর্ঘদিন ধরে সরকারকে বিব্রত ও ব্যর্থ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর আর সচিবালয় বলেন, সর্বত্রই শেকড় গেড়ে জামাত-শিবির বসে আছে। তারা সব সময় চেয়েছে আওয়ামী লীগ যেন ব্যর্থ হয়। শেখ হাসিনার সরকার যেন ব্যর্থ হয়। একটি ফাইল দিনের পর দিন আটকে রাখা হয়। ফাইল আটকানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট মিটিংয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা হাজার কোটি টাকার বাজেট করবো, লক্ষ কোটি টাকার বাজেট করবো। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়ন হবে না, টাকা ফেরত যাতে, তা হবে না। অবশ্যই বাজেট বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না তাদের জবাবদিহি করতে হবে।

আর্থিক খাতের অনিয়মের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ব্যাংক সেক্টর নিয়ে কথা উঠছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হলো, তাদের কেন ছাড় দেয়া হলো? ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কৃষকরা ১/২ হাজার টাকার জন্য সার্টিফিকেট মামলার আসামি হবে আর ঋণখেলাপিরা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেবে, এটা কেন হবে? কোর্ট এত কথা বলেন, কোর্ট কেন স্থগিতাদেশ দেন। ঋণখেলাপি-লুটেরাদের কাছে ছাড় দেবো, এটা হতে পারে না। এদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, কিছু ব্যবসায়ী আছেন, তারা ব্যাংকের মালিক। গার্মেন্টস, ওষুধ কোম্পানি এমনকি সংবাদপত্রেরও মালিক। এই ধরনের বহুমুখী ব্যবসায়ী বাংলাদেশে আছেন। তারা সব ব্যাপারে এক্সপার্ট। তারা সরকারি দলে ঢুকে আছে। এই সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা আমাদের বন্ধু হতে পারে না। সংসদ হবে রাজনৈতিক নেতাদের। যারা ব্যবসায়ী, কোনও দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। কোনও দিন মাঠের রাজনীতি করেননি। এরা সুখের পায়রা। এদের সবাইকে আমরা চিনি। দুঃসময়ে এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওয়ান ইলেভেনের সময় এরা ভোল-বদল করেছিল। ২০০১ সালের পর এদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরা কী করে পত্রিকার মালিক হয়? আওয়ামী লীগ সরকারের থেকে লাইসেন্স নিয়ে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা সংবাদপত্রের মালিক হয়ে দিনের পর দিন লিখে যাচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। এরা ওদিকেও সুবিধা নেয়, এদিকেও সুবিধা নেয়। এদের চিহ্নিত করার সময় এসে গেছে।

এমপিওভুক্তিতে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ত করার দাবি জানিয়ে সরকার দলের এমপি মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দীর্ঘদিন এমপিওভুক্তি পড়ে আছে। এমপিদের প্রাধান্য দিয়ে এটা করতে হবে।

তিনি বলেন, মোবাইলে কেন কর ধার্য করছি? ১৫ কোটি মোবাইল, রিকশাওয়ালাও ব্যবহার করে। মোবাইলে করারোপ করে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না। এটা যেন প্রত্যাহার করা হয়। সঞ্চয়পত্র সোনার বাটির মতো। এখানে করারোপ করবেন না। অনেক ক্ষেত্রে ভোজ্যতেল, অনেক সাধারণ জিনিসের ওপর কর। গাড়ির ওপর বেশি করারোপ করেন। গাড়ির বিষয়ে উদার হওয়া উচিত নয়। গ্যাসের দামের জন্য ভর্তুকি দেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি দেন, জনগণ খুশি হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুন ২৬, ২০১৯)