মুহাম্মদ শরীফ উল ইসলাম

মামাদের  বাড়ি গ্রামের সর্ব দক্ষিণে। বাড়ির দক্ষিণ ঘরের ৫০০ গজ দূরে প্রকাণ্ড এক পাকড় গাছ তারপর প্রায় ১০ মাইল জুড়ে ধান পাটের ক্ষেত এরই পরে শুরু হয় অন্য গ্রাম।পাকড় তলায় বসলে দূরের গাঁয়ের বাতাস সরাসরি পাওয়া যায়। পাকড় গাছের নিচে কয়েকটা হিন্দু দেবীর আসন, ফলে জায়গাটা সব সময় পরিষ্কার  পরিচছন্ন থাকে। গরমের সময়ে পাটি বিছায়ে দুপুর বেলা পড়ার স্থান ছিল আমার।

আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট পড়ি , আমার এক মামাও ছিল আমার সহপাঠী। এক গরমের দুপুরে মামা ভাগ্নে এক ই পাঠিতে শুয়ে o henrys Gift of MAGI পড়তে ছিলাম। পূর্বেই বলেছি পাকড় তলা হাওয়ার মেলা, আশে পাশের বাড়ির বধূরা এখানে ধান উড়াতে আসে। সেদিন আমার আন্না মামী সেখানে ধান উরাচ্ছিল। আন্না মামী ও আমার সহপাঠী মামা দেবর ভাবী হলেও তাদের সম্পর্ক ছিল সাপে নেউলে।

একজন অপরজনকে সহ্য করতে পারে না। যা বলছিলাম মামা ভাগ্নে ইংরেজি পড়ছি। মামা জোরে জোরে পড়া শুরু করল-‘ গিফট অফ মাগী বাই ওহেনরি।’

-মামা ওটা মাগী নয় হবে মেজাই,- গিফট অফ মেজাই বাই ওহেনরি।

-হেই গর্দভ আমাকে বোকা বানাও, go যেমন গো হয় তেমনি gi গি একত্রে ma মা gi গি Magi মাগি

-মামা দেখো নোট বইয়ে বাংলা উচ্চারণ গিফট অফ মেজাই লেখা আছে আর স্যার ও গত ক্লাসে গিফট অফ মেজাই বলেছেন।

'শোন বোকা বোজাবি না। আমার ঘুষির জোর বুঝিস, ভাগ্নে বলে এতক্ষণ ঘুষি খাস নাই' বলেই জোরে জোরে পড়তে লাগল-

‘গিফট অফ মাগী বাই ও হেনরি

গিফট অফ মাগি

গিফট অফ মাগী

গিফট অফ মাগী বাই ও হেনরি’।

আন্না মামী ধান উড়ান বাদ দিয়ে কাপড় কোমরে পেচিয়ে হাতে ঝাড়ন নিয়ে মামার কাছে এসে রাগী গলায় বলল-

‘আমাকে শুনাইয়া শুনাইয়া মাগী বলছিস। তুই আমাকে মাগী বলছিস কেন?’

‘তোমাকে মাগী বলব কেন? দেখছ না আমি পড়ছি’

ভাগ্নে বলল মেজাঈ, তুই ইচ্ছা করে পড়ার নামে আমাকে মাগী বলছিস।

মামা কিছু বলার আগেই আন্না মামী ঝাড়ন দিয়ে কয়েক ঘা বসিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির

ভিতর চলে গেল।

মামাত হতভম্ব, আমিও তথৈবচ।

শুনেছি অনেকে মেরেও জেতে আবার কেঁদেও জেতে, আজ তা বাস্তবে দেখলাম।

ভাবলাম মামী বাড়িতে যেয়ে শান্ত হয়েছেন। না তা নয় একেবারে উচ্চ আদালতে মানে নানী জানের কাছে বিচার দিয়েছেন। এক নম্বর সাক্ষী আমি। বাড়িতে যাওয়ামাত্র নানিজান বিচার সভা বসালেন, এক নম্বর সাক্ষী হিসাবে আমাকে বিচারক নিজেই জেরা শুরু করলেন-

‘বল তোমার মামা তোমার মামীকে মাগী বলেছে কিনা?’

মহা মুশকিল মামীর সামনে মিথ্যা বলি কিভাবে? আবার বন্ধু কাম মামাকে বিপদে ফেলি কিভাবে! মামার আবার হাতে জোর বেশী, ঘুষি মারাতে এলাকায় নামযশ আছে। আমতা আমতা করে বললাম-‘ মামা বই পড়তে ছিল, বইতে লেখা গিফট অফ মাগী’।

‘মামা ভাগ্নে দুজনেই সমান সমান। আমাকে বোকা বুঝাও, বইতে লেখা মাগী! বইতে আবার মাগী লেখা থাকে? আমি সব বুঝে গেছি। আজ রাতে দুজনেই খাবার পাবি না। এটাই তোদের শাস্তি।’

রাত ১০টা বেজে গেল। পেটে খুবই ক্ষুধা, খাবার ঘরে আলো জ্বলছে না। বুঝলাম আদালতের রায় পূর্ণ ভাবে কার্যকর হচ্ছে। উঠান থেকে জানালা দিয়ে ঘরের ভিতর মামীকে দেখা যাচ্ছে। চুপি চুপি ঘরে ঢুকে মামীর পাশে বসলাম।

আমি যে পাশে বসে আছি মামী তা টের পেল না, মামী কি রাত কানা?

বললাম- ‘ মামী কী করছ?’ কোন জবাব এল না। মামী যে কানে কম শোনে তাও আমার জানা ছিল না।আবারও বললাম- ‘মামী খুবই ক্ষুধা পেয়েছে।’

এবার জবাব এল- ‘ক্ষুধা লাগলে আমি কি করব বাপ, তোমার নানী রাতে খাবার বন্ধ করেছে, আমি খাবার দিয়ে শাশুড়ির গাল মন্দ শুনব!’

বাহ মামী যে এত শাশুড়ির বাধ্যগত তা আমার জানা ছিল না।

-‘মামী সত্যিই খুব ক্ষুধা লেগেছে।’

-‘আমি কী করব , যাও মামার চামচামি কর’-বলল মামী এতক্ষণে অরিন্দম।

পাঠ্য পুস্তক পড়ে কী লাভ তা যদি বাস্তব জীবনে কাজে না লাগে।

হর প্রসাদ শাস্ত্রীর তৈল প্রবন্ধ পড়েছি, দেখি মামীকে তৈল দিয়ে, কাজ হয় কিনা? পাঠ্য বিদ্যা মামীর উপর প্রয়োগের উদ্যোগ।

-‘মামী আজ বাজারে প্রচুর কুল দেখলাম, লোভ সামলাতে পারলাম না। কিনতে গেলাম, কেনার আগে একটা খেলাম। দেখলাম স্বাদ তত ভাল নয়। তাই কিনলাম না। ওহ কুলের স্বাদ তোমার বাবার বাড়ির কুলের অমন স্বাদের কুল আর কোথায়ও নাই।

কাল কলেজ থেকে সোজা তোমার বাপের বাড়ি যাব। কুল শেষ হবার আগেই যেতে হবে।’

মামী হাসি মুখে বলল, ‘সত্যিই যাবি বাপ?

‘মামী আমি তোমার মাথা ছুঁয়ে বলছি , কালই যাব, তোমার যদি সংবাদ থাকে আমার কাছে দিতে পার।’

মামী দাঁড়িয়ে বলল, ‘রান্না ঘরে আয় আব্বূ খাবার দিচ্ছি।’

মামী দুই প্লেটে ভাত বেড়ে ডাক দিল- ‘আনিস আয় খাবার দিছি , খেয়ে যা’-

মামা যেভাবে ঘরে ঠুকল মনে হল এই ডাকটার অপেক্ষায় ছিল।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/জুলাই ০৭,২০১৯)