বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনায় রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় শুরু থেকে আলোচনায় ছিলেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। হত্যাকাণ্ডের সময় স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করায় অনেকেই মিন্নির প্রশংসা করেন। তবে কিছুদিন আগে নতুন এক ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ফের আলোচনায় এসেছেন তিনি। তবে এবার প্রশংসা নয়, তার নিন্দা করছেন লোকজন। অভিযোগ করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে মিন্নির আচরণ অস্বাভাবিক ছিল।

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার এক নম্বর সাক্ষী মিন্নি। ঘটনার পরপরই মিন্নির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তার বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। শুক্রবার থেকে ১০ সদস্যের অস্থায়ী পুলিশ চৌকি বসানো হয়েছে।

গত শনিবার রিফাত হত্যাকাণ্ডের সময়ের সিসি ক্যামেরার দুটি ফুটেজ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিও দেখার পর মিন্নির ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে কলেজের প্রধান ফটক থেকে মিন্নিকে রিফাতসহ বের হতে দেখা যায়। পরে এদিক-ওদিক তাকিয়ে ফের কলেজের ভেতর রিফাত শরীফকে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপরই সন্ত্রসীরা কলেজ গেট থেকে যখন রিফাতকে ধরে সামনের দিকে যায়, তখন মিন্নিকে পেছনে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে দেখা যায়। এর কয়েক সেকেন্ড পরেই নয়ন বন্ড ও অন্যরা যখন রিফাত শরীফকে কিল-ঘুষ-লাথি দিতে শুরু করে তখন মিন্নি তার স্বামীকে রক্ষার চেষ্টা করেন। রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করার সময় কখনো রিফাত ফরাজী, কখনো নয়ন বন্ডকে আটকাতে চেষ্টা করেন। কুপিয়ে যখম করে ফেলে রেখে যাওয়ার পর রিফাত শরীফ হেঁটে রিকশায় ওঠেন। মিন্নি তখন ব্যাগ ও জুতো তুলে রিফাতকে খুঁজতে সামনে এগিয়ে যান।

সিসিটিভি ফুটেজে এমন দৃশ্য দেখার পর লোকজন প্রশ্ন তুলেছেন, মিন্নি কেন রিফাতকে কলেজের ভেতর নিয়ে যাচ্ছিলেন? সন্ত্রাসীরা স্বামীকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় মিন্নি কেন স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিলেন? শেষপর্যায়ে রিফাতের দিকে ছুটে না গিয়ে কেন জুতা ও ব্যাগ তুলতে গিয়েছিলেন? বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মিন্নির সঙ্গে তার বাড়িতে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। মিন্নি বলেন, ‘তখন প্রায় সোয়া ১০টা বাজে। রিফাত আমাকে বলে, আব্বু আসছেন, তোমার সাথে দেখা করবে, চলো। আমি ওরে বলছিলাম, আমার কাজ শেষ করে বের হই? ও আপত্তি করে বলে, বাবা গেটে অপেক্ষা করছে। আমি তখন ওর সাথে বের হই। গেটের বাইরে এসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখি, ওর বাবা (মিন্নির শ্বশুর) কোথাও নেই। তখন আমি বলি, তুমি মিথ্যে বলেছ। চলো রুটিন নিয়ে আসি। আমি ওরে নিয়ে ভেতরে যেতে চাই। ঠিক এ মুহূর্তেই ১০-১২ জন আমাদের ঘিরে ধরে। রিশান ফরাজী ওর (রিফাত শরীফ) পথরোধ করে বলে, তুই আমার বাবা-মা তুলে গালি দিছিস? ও বলে, না। তখন রিফাত ফরাজী এসে বলে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল। ঠিক এ মুহূর্তে অন্য কয়েকজন বলে, ওর কাছে অস্ত্র আছে। ধর ধর বলে সামনে এগুতে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতভম্ব হয়ে ওদের পেছনে হাঁটতে থাকি। পরে যখন আক্রমণ করে, তখন প্রতিরোধে চেষ্টা করি। আমি হেল্প চাই অনেকের কাছে, কেউ আসেনি। ওরা চলে যাবার পর রিফাত নিজেই হেঁটে রিকশায় ওঠে। আমা পায়ের পাতা কেটে যাওয়ায় জুতা ছাড়া হাঁটতে পারছিলাম না। তখন জুতা পায়ে দেই। এ সময় একজন আমার হাতে আমার ব্যাগটি তুলে দেয়। পরে আমি দ্রুত গিয়ে রিফাতের রিকশায় উঠে ওকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যাই।’

মিন্নি আরো বলেন, ‘আমার কাছে ফোন ছিল না। দুজন ছেলে মোটরসাইকেলে আমাদের রিকশা ফলো করে যাচ্ছিল। আমি তাদের হেল্প চাইলে তারাও ধমক দেয়।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক প্রসঙ্গে মিন্নি বলেন, ‘কিছু লোক আছে যারা বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে। আমি সবাইকে বলব, বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করতে দেখেছি। মানসিকভাবে আমি বিধ্বস্ত। আমার অনুরোধ, আমি তো আপনাদের মেয়ে বা বোন হতে পারতাম। আপনারা না জেনে কোনো মন্তব্য কইরেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমি চরম মানসিক নিপীড়নে ভুগছি। কেউ আমাদের পাশে নেই। সবাই শুধু সমালোচনায় মুখর। আমি সবার সহযোগিতা চাই।’

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী মিন্নির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ কি না বা এ বিষয়টি পুলিশের নজরে এসেছে কি না? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, তদন্ত একটি স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি একটি নারকীয় লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড এবং মিন্নি এ মামলার এক নম্বর সাক্ষী। কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে আমরা তদন্ত করছি না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে যতটুকু বিষয় আমাদের সামনে আসছে, আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ০৯,২০১৯)