ডক্টর মো. মাহমুদুল হাছান

আধুনিক শিক্ষার প্রসার ও প্রচার নির্ভর করে প্রযুক্তিগত শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়নের উপর।উন্নত বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে  চলেছে প্রযুক্তির গতিময় সিড়ি বেয়ে আমাদের দেশ সে তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে। আমাদের  সরকার এ ব্যাপারে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহন করে এখন অনেকটাই সফলতার দিকে এগিয়ে  যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বইটি আবশ্যিক করে উন্নয়নের আরেক ধাপ অগ্রসর হয়েছে আমাদের দেশ। এছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বেশ কাজ করে যাচ্ছে। তন্মদ্ধে প্রাইভেট স্কুল-কলেজ তাদের পাঠ্যসূচীতে কম্পিউটার বিষয়ক বই তালিকাভুক্ত করে ছাত্র ছাত্রীদেরকে  আরও উন্নত প্রযুক্তির জ্ঞান বিতরনে উদ্যত হয়েছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বাংলাদেশের শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করা ছাড়াও প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যাবহার করে ছাত্র ছাত্রীদেরকে আরও বেশি  বাস্তবমুখী শিক্ষা প্রদান করে চলেছে। অত্র স্কুলটি আই সি টি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে অনেক অগ্রসর যে সম্পর্কে দেশের ছোট বড় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ কম বেশি অবগত।

ঢাকার ধানমণ্ডি, সোবহানবাগ ও উত্তরা সহ এ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সকল শাখা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা বিতরনের মাধ্যমে অনেক প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে। ড্যাফোডিল ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ডক্টর সবুর খান এর নিবিড় তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান নিশ্চিত করনে প্রযুক্তিভিত্তিক অভিজ্ঞতা বাস্তবায়ন করা হয়। নিম্নে তথ্য প্রযুক্তির প্রতিফলন ও শিক্ষার উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়ে থাকে তার একটি সক্ষিপ্ত ধারনা পেশ করা হলোঃ

শ্রেণিভিত্তিক কম্পিউটার শিক্ষা: অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিভিত্তিক মেধা মূল্যায়ন সাপেক্ষে কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান করা হয়। সাপ্তাহিক রুটিন মোতাবেক অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা সুসজ্জিত ল্যাবে ছাত্র ছাত্রীদেরকে কম্পিউটার প্রশিক্ষন দেয়া হয়।

মাই ই-কিডস এর প্রসারঃ মাই ই-কিডস ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। এখানে ছাত্র ছাত্রীদেরকে বয়স ভেদে নানামুখী প্রোগ্রাম শেখানো হয়। তন্মদ্ধে উল্লেখযোগ্য হলো ই- টাইনি টট যা প্রি স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্য প্রযোজ্য । ই- টায়রো যেখানে প্রাথমিক স্তরের প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। ই-প্রাইম প্রাথমিক স্তরের চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়াও ই- ইন্টারমিডিয়ারি ও মাই ই-এক্সপার্ট প্রোগ্রাম সমূহ রয়েছে যেখানে মিড লেভেল ও উচ্চতর লেভেল এর ছাত্র ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারে। ড্যাফোডিল স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা ছাড়াও অন্যান্য স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা ছুটির দিনগুলোতে মাই ই-কিডস প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে কম্পিউটার বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। প্রায় প্রতি বছর ই মাই এ- কিডস এর মাধ্যমে নানাবিধ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ছাত্র ছাত্রীদের মেধা মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদেরকে উচ্চতর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করা হয়ে থাকে।

স্টেম (STEM) শিক্ষা বাস্তবায়ন: স্টেম একটি যুগোপযুগী অত্যাধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষাধারা। সাইন্স বা বিজ্ঞান, টেকনোলজি বা প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল এবং ম্যাথম্যাটিকস বা গণিত এই চারটি বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানের সমন্বয়ে স্টেম শিক্ষা সন্নিবেশিত। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এই শিক্ষাধারা চালু আছে যা বাংলাদেশে প্রথম ল্যাব হিসাবে স্বিকৃত। অত্র স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্টেম ল্যাবের মাধ্যমে নানাবিধ বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে। দৈনন্দিন শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রীরা রুটিন মাফিক স্টেম ল্যাবে গিয়ে তাদের পছন্দমতো ব্যাবহারিক শিক্ষা গ্রহন করে থাকে। কিভাবে একজন ছাত্র বা ছাত্রী বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করে নিজেদের মেধা খাটিয়ে নানাবিধ প্রকৌশলিক কর্মকাণ্ড নিখুঁত ভাবে করে থাকে, তা এ ল্যাবের মাধ্যমে প্রশিক্ষন দেয়া হয়। ফলে, অল্প বয়সেই তারা বিজ্ঞান ধর্মী জ্ঞানের আবহ গ্রহন করতে পারে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ছাত্র ছাত্রীদেরকে পাঠ্যক্রমিক শিক্ষা দান ছাড়াও সহপাঠ্যক্রমিক শিক্ষা দানে এ জাতীয় আধুনিক ল্যাবের স্থাপন করার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সুযোগ করে দিয়ে থাকে।

বিজ্ঞান গবেষণা কার্যক্রমঃ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ছাত্র ছাত্রীদেরকে বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। পদার্থ, রসায়ন ও জীববিদ্যার পৃথক পৃথক ল্যাবে ছাত্র ছাত্রীরা অবসর সময়ে বা রুটিন মোতাবেক নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। বিষয় ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা এ জাতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার অবাধ সুযোগ রয়েছে অত্র স্কুলে। আধুনিক গবেষণার পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি বিজ্ঞানাগার গুলোকে বেশ সমৃদ্ধশালী করে রেখেছে। ছাত্র ছাত্রীরা তাদের পছন্দ মত বিষয়ে চাহিদা মোতাবেক ব্যাবহারিক ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে।

তথ্য প্রযুক্তি ল্যাব: ডিজিটাল বাংলাদেশে আধুনিক চাহিদা বাস্তবায়নে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বিস্তৃত পরিসরে তথ্য প্রযুক্তির চর্চা করে থাকে। পর্যাপ্ত কম্পিউটারের সরবরাহ থাকায় এ স্কুলের আই সি টি ল্যাব বা তথ্য-প্রযুক্তি ল্যাব বেশ সমৃদ্ধশালী। প্রথম শ্রেণি থেকে এ লেভেল ও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সকল ছাত্র ছাত্রীর জন্য কম্পিউটারের জ্ঞানার্জন বাধ্যতামূলক। সাপ্তাহিক পাঠ্যসূচীর মত আই সি টি বিষয়েরও নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচী রয়েছে, যেখানে তারা নিয়মিত ভাবে দক্ষ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে কম্পিউটারের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ সাধন করে থাকে। আই সি টি ল্যাবে জন প্রতি একটি করে কম্পিউটার ব্যাবহারের সুযোগ রয়েছে। ঢাকা শহরে আয়োজিত বিভিন্ন আই সি টি কার্নিভ্যাল এ অংশগ্রহণ করে এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। আই সি টি ল্যাবটি সমৃদ্ধশালী বিধায় ছাত্র ছাত্রীরা অতি আগ্রহ সহকারে সেখানে মেধা ও মনন চর্চা করে থাকে।

অডিও-ভিজুয়াল শিক্ষাদান: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শ্রেনিকক্ষে অডিও-ভিজুয়াল পদ্ধতিতে পাঠদান আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে আরেক ধাপ অগ্রসরমান। ছাত্র ছাত্রীদের পাঠদানকে প্রানবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী করতে এ জাতীয় উদ্যোগ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। পাঠ্যবিষয়ের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকবৃন্দ এ অডিও-ভিডিও পদ্ধতিতে পাঠদান করে থাকে।

স্মার্ট বোর্ড এর মাধ্যমে পাঠদান: শ্রেণি কক্ষে স্মার্ট বোর্ড স্থাপন বাংলাদেশে যেন অনেকটা স্বপ্নের মত। হাতে গোনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা থাকলেও দক্ষ প্রশিক্ষকের অভাবে তার ব্যাবহার একেবারেই ক্ষীণ। এটির দাম ও ব্যাবহারিক মূল্য বেশি হওয়াতে অনেক স্কুল তা সংগ্রহ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এ জাতীয় আধুনিক শিক্ষা উপকরনের সমাহার অনেকটা আবশ্যক। জুনিওর ও সিনিওর ক্লাসে এ স্মার্ট বোর্ড ব্যাবহারের মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীদের পাঠগ্রহণে একঘেয়েমিতা কাটিয়ে তুলতে স্মার্ট বোর্ড ব্যাবহার বেশ কার্যকর। স্মার্ট বোর্ড শুধু একঘেয়েমিতা দুর করেনা বরং এটি পাঠগ্রহণে ছাত্র ছাত্রীদের বেশ প্রাণোচ্ছল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলে এবং শিক্ষকদের পাঠদানেও অনেক সহজ সাবলীল করে তোলে। ফলে শিক্ষক-ছাত্রের মাঝে পাঠোদ্ধারের আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং শ্রেণি কাজ ও বাড়ির কাজ খাতায় তুলতে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্পষ্ট ও সহজ হয়ে যায়।

রোবটিক শিক্ষণ : রোবটিক্স বর্তমানে শিক্ষাধারায় একটি অনন্য সংযোজন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল রোবটিক্স কার্যক্রমে নানাবিধ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। ফলে ছাত্র ছাত্রীরা তাদের বুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে রবোটিক্স এর ওপর বিচক্ষনতা প্রদর্শন করে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ও যন্ত্রাংশের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এমনকি রোবটের মাধ্যমে অত্র স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা মাঝে মধ্যে তাদের পিটি ও অ্যাসেম্বলি সম্পন্ন করে থাকে।

আইওটি শিক্ষা: আইওটি বা ইন্টারনেট অব থিংস ‍যা বর্তমান বিশ্বে আধুনিক শিক্ষাধারার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা এ শিক্ষা ধারার সাথে বেশ পরিচিত। অত্র স্কুলে কারিকুলামের অংশ হিসাবে নিয়মিত আইওটি এর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।

মোটকথা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ধারা প্রবাহে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত। অত্র স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত পাঠগ্রহনের পাশাপাশি তথ্য- প্রযুক্তির শিক্ষা ও তার ব্যবহার তাদের মেধা বিকাশের পথকে আরো ত্বরান্বিত করে। ফলে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে তারা প্রযুক্তির সুষ্ঠ চর্চার মাধ্যমে তাদের জীবন প্রত্যাশায় দ্রুত সফলকাম হতে পারে। উল্লেখ্য যে অল্প বয়সে স্কুল জীবন থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন করতে পারলে পরবর্তিতে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করার ক্ষেত্রে বা কর্মজীবনে প্রাত্যহিক কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে সকল কিছু অনেক সহজ ও সুন্দর হয়। আর সে কাজই করে থাকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (ডি আই এস)।

লেখক: প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা