দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: সংখ্যালঘুদের নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে করা অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে বাংলাদেশি নারী প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে শনিবার (২০ জুলাই) সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভদ্রমহিলার নাম হলো প্রিয়া সাহা। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে যেভাবে বলেছেন সারা বাংলাদেশ আজ বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এ ধরনের ঘটনা আমি তো বটেই...আমি আজকে সাড়ে পাঁচ বছর হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের কোনো ঘটনা আমরা কিন্তু জানি না।’

তিনি বলেন, ‘কোন জায়গাটিতে এ ঘটনা ঘটেছে, কে কে ভিকটিম হয়েছে এ সম্বন্ধে আমাদের কোনো আইডিয়া নেই। কেন তিনি এ ধরনের অসত্য বক্তব্য দিলেন এটা আমাদের জানা নেই। তিনি আসলে নিশ্চয়ই আমরা জিজ্ঞাসা করব- কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে, কার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, আমরা সঠিক তদন্ত করি নাই কিংবা করেছি। সেটা আমরা অবশ্যই দেখব।’

‘আমার মনে হয় এ ধরনের অসত্য খবর দেয়ার পেছনে নিশ্চয়ই একটা কারণ থাকতে পারে। তার একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেই উদ্দেশ্যটা কী সেটাও দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব- কখন কোথায় কীভাবে হলো এটা? নিশ্চয়ই তিনি একটা উত্তর দেবেন, সেই অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব,’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তিনি (প্রিয়া দাস) বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্তের স্টেটমেন্টটা নিশ্চয়ই আপনারা দেখেছেন, আমি সেটা দেখেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের স্টেটমেন্টও আমি দেখেছি। আমি নিজে যেটা জানি সেটা আপনাদের সামনে বললাম।’

‘গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগে বাংলাদেশে হিন্দুদের হার ছিল এইট প্লাস (৮ শতাংশের বেশি)। ২০১৭ সালের জরিপ অনুযায়ী সেটা টেন প্লাস হয়েছে। এর মানে হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন বিনির্মাণে আমরা সফল হয়েছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আস্থা আসছে, সে জন্য তাদের সংখ্যা এখন বেড়েছে,’ যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এইট প্লাস থেকে টেন প্লাস হয়েছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে আর সরকার চুপ করে বসে থাকবে, জনগণ জানবে না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর পেছনে হয়তো তার ব্যক্তিগত কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে সেই ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যটা আমাদের জানতে হবে।’

রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন বাইরে। তিনি আসুক। এখন আমরা যেটা করব, সে (প্রিয়া দাস) আসলে তাকে আমরা জিজ্ঞাসা করব কোন জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে। তার ঘটনা অনুযায়ী আমরা পরীক্ষা করব, এরপর যদি তার ঘটনা সত্যি না হয় আইন অনুযায়ী যে সিদ্ধান্ত নেয়ার আমরা সেটা নেব। আসুক সে ফিরে আসুক।’

‘আমরা মনে করি তিনি ফিরে আসবেন। আমাদের প্রত্যাশা- এসে তিনি যেটা বলেছেন সেটা প্রমাণ করবেন। আমি সেটাই বিশ্বাস করি’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত ১৬ জুলাই ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬ দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’

প্রিয়া সাহার এ বক্তব্য নিয়ে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/জুলাই ২০,২০১৯)