দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ভারত সরকার রাতারাতি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার পর চারদিন কেটে গেছে। শুক্রবারেও পুরো কাশ্মীর জুড়েই ছিল কারফিউ, স্তব্ধ হয়ে রয়েছে জনজীবন। রাজধানী শ্রীনগরের পথে পথে শুধু ফৌজি টহল আর তল্লাশি চলছে। বন্ধ হয়ে রয়েছে দোকান-পাট। সাধারণ মানুষ বাইরেও বেরোতে পারছে না। গত সোমবার হঠাৎ করেই সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরের ওপর থাকা দীর্ঘ সাত দশকের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেয়।

ভারতের একমাত্র মুসলিম-গরিষ্ঠ এই প্রদেশটি তাদের সংবিধান প্রদত্ত স্বীকৃতি হারিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে। এটা বুঝতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। তবে এটা কিন্তু শুধু অন্য রাজ্যের লোকেরা এসে এখন কাশ্মীরে জমি বা বাড়ি কিনতে পারবে এজন্য নয়। বরং সেটা ছাড়াও এখন বড় সংকট তৈরি হয়েছে।

কাশ্মীর আর বাকি ভারতের মধ্যে বিশ্বাস বা ভরসার যে নড়বড়ে সেতু এতদিন ছিল, সেটাও এবার ভেঙে গেছে। রাজপুরার ব্যবসায়ী ইরফান জাভিদ বলেন, ভারতই সেই সেতুটা ভেঙে দিয়েছে। তাই এখন কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতৃত্বে বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই হোক বা মূল ধারার ভারতপন্থী রাজনীতিবিদরা - তাদের এখন খুব ভেবেচিন্তে স্থির করতে হবে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ কাদের সঙ্গে হবে।

কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুদাসসর নাজির বলেন, দেশভাগের আগে কাশ্মীর কিন্তু স্বতন্ত্র একটি দেশ ছিল, স্বাধীন মুলুক ছিল। ১৯৪৭ সালের পর সেই দেশকেই ভারত আর পাকিস্তান আধাআধি ভাগ করে নিয়েছে। আর ভারত যে শর্তে কাশ্মীরকে নিয়েছিল তারই ভিত্তি বা আধার ছিল এই ৩৭০ অনুচ্ছেদ।

ইরফান জাভিদ বলেন, ৩৭০ যে শুধু কাশ্মীরের জন্য ছিল তা কিন্তু নয় - জম্মুর হিন্দুরা বা লাদাখের বৌদ্ধরাও এই স্বীকৃতি বা অধিকার ভোগ করে আসছেন গত ৭০ বছর ধরে। আর তা ছাড়া বিশেষ মর্যাদা তো ভারতের আরও নানা রাজ্যেও আছে। কিন্তু এটা শুধু মুসলিম-গরিষ্ঠ প্রদেশ বলেই এই অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো।

তিনি বলেন, আরও একটা কথা মনে রাখবেন, কাশ্মীরিরা নিজের রুটি ভাগ করে নিতে পারে। কিন্তু কে নিজের জমি, নিজের মাকে অন্যের সঙ্গে ভাগ করতে চাইবে, বলুন তো? শ্রীনগরের কিছু কিছু এলাকায় এখনও হাতেগোনা কিছু হিন্দু কাশ্মীরি পন্ডিত পরিবার রয়ে গেছেন।

তারা আবার ৩৭০ ধারা বিলোপের সিদ্ধান্তে তেমন অখুশি মনে হলো না। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময় বেশ সাবধানী শোনায় তাদের গলা। কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সংযোগ মিশ্রা বলেন, কী আর বলব বলুন, পরিস্থিতি তো নিয়ন্ত্রণেই। মানুষ ঠিক সংকটে তা বলা যাবে না। তবে হ্যাঁ, তাদের ওপরও অনেক চাপ যাচ্ছে, কারণ কেউই তো ঠিক এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

তিনি আরও বলেন, আমার স্কুলে ছোট বাচ্চারা ক্লাসে আসতে ভয় পাচ্ছে, এগুলো হওয়া উচিত নয়। সরকার একটা পদক্ষেপ নিয়েছে, এখন পরিস্থিতি যে কোনও দিকেই গড়াতে পারে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাদামিবাগ এলাকা থেকে একটু এগিয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছে ছিলেন ট্যাক্সি ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন নেতা।

তাদের প্রেসিডেন্ট গওহর বাট বলেন, আমরা যেখানে বসে আছি তার ঠিক পেছনের ভবনটাই কাশ্মীরে জাতিসংঘের মনিটরিংয়ের কার্যালয়। তিনি বলেন, আপনি আমাকে বলুন, কাশ্মীর যদি ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গই হয় তাহলে এই জাতিসংঘের ভবনটা এখানে কী করছে? সোজা কথা হল, জাতিসংঘের দৃষ্টিতেও এটা একটা বিতর্কিত ভূখণ্ড।

বিবিসিকে তিনি বলেন, এটা না ভারতের, না পাকিস্তানের, না চীনের। আমাদের তো এরা গোলাম বানিয়ে রেখেছে। গওহর বাটের এই কথায় সমস্বরে গলা মেলান ভিড় করে আসা জনতারাও। আসলে গত সত্তর বছরেও কাশ্মীরের স্বাধীনতা বা আজাদির স্বপ্ন কখনও নিভেছে, তা মোটেই বলা যাবে না।

গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে সরকারের ঘোষণা তাদের সেই আজন্ম-লালিত স্বপ্নের ওপরও একটা আঘাত হেনেছে। মুসলিম-প্রধান এই প্রদেশের বেশির ভাগ মানুষ কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছেন না।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ১০, ২০১৯)