দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ২০০৪ সালের একুশ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় সেই গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে।

এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে গত বছরের ১০ অক্টোবর রায় দেন বিচারিক আদালত।

এই রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল মামলা শুনানির অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে শুনানির জন্য পেপারবুক তৈরির কাজ চলছে।

গ্রেনেড হামলার ওই মামলায় মোট ৪৯ জন আসামী ছিলেন। এদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। এছাড়া তারেক রহমান এবং হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে মামলার নথিতে পলাতক দেখানো হয়েছে। বাকি তিনজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি যারা :
আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম সবুজ, মো. উজ্জ্বল রতন, ডিজিএফআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন—বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

তাদের দণ্ড বিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। এক-এগারোর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন তিনি এবং সেই থেকে সেখানেই আছেন। গ্রেনেড হামালা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে তাকে পলাতক হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বিএনপি সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লুৎফুজ্জামান বাবর এক-এগারোর সরকার ক্ষমতাসীন হবার গ্রেপ্তার হন। সেই থেকে তিনি কারাগারে আছেন। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও বাবরের ফাঁসির রায় হয়েছে।

দণ্ড পাওয়া আরেক আসামী তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ গ্রেনেড হামলা মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসামী। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।

তাজুল ইসলাম বিএনপি সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই। গ্রেনেড হামলার পর থেকে সে বিদেশ। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তাকে।

বিএনপি সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত নয়।

দন্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর তাকে আটক করা হয়। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিমকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও তার ফাঁসির রায় হয়েছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক। এ মামলায় দীর্ঘ সময় তিনি জামিনে থাকলেও এখন তিনি কারাগারে রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশ প্রধান ছিলেন শহিদুল হক। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ বিএনপির প্রতীক নিয়ে কুমিল্লা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। মামলার অভিযোগপত্রে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন এক এগারোর সরকারের সময়ে আমেরিকা চলে যান। মামলার কাগজপত্রে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। গ্রেনেড হামলা মামলার আরেক আসামী হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ পলাতক রয়েছেন। তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ২১, ২০১৯)