বিমুখ প্রান্তর

বলেছিলে, একখণ্ড জমি পেলে
চাষাবাদে মগ্ন হবে;
স্বর্ণে শস্যে ভরে দেবে
বিমুখ প্রান্তর।  

বলেছিলে, কবিতার বিকল্প কবিতা
মানুষের বিকল্প মানুষ।
ধন-মান একহারা নষ্ট আবর্জনা
ও কেবলই দুর্গন্ধ ছড়ায়।

উদ্ভাসিত অহংকারে যে তোমাকে
স্বপ্ন দিয়েছিল
বলেছিল, ভালোবাসি।

বলেছিল, তোমার ছায়ায় প্রচ্ছায়িত হবে তার ছায়া
মুছে দেবে অন্তর্লিন দেহের ক্ষরণ।

দূরতম অভিগমনের
শেষ অভিযাত্রী তুমি।
প্রজ্ঞায়িত লাবণ্যের জলে
দুই পা ছোঁয়ালেই যদি তবে স্থিত হোক
তোমার বরণ।

বলেছিলে, এটুকুই প্রাপ্য তোমার।

দলিত দর্শন

দৃষ্টিহীনতার কোনো দায় নেই
কলা-কৈবল্যবাদ এখানে অচল।
প্রান্তিকের পত্রপুটে দলিত দর্শন
মাটির কাঠিন্য থেকে লগ্ন হয়
দেহের বল্কলে।

বর্ধিত জলের রেখা নিস্তরঙ্গে ছুঁয়ে যায়
নিমগ্ন শকট।
ক্ষণে ক্ষণে ছুটছে ভীষণ সময়ের জ্যোতি
নিষ্কাম দেহের ভাঁজে ব্যর্থতার ক্ষত
শেষ নিঃশ্বাসের মতো মেতে ওঠে
বিভ্রান্ত উল্লাসে।

চৌকাঠের শিথিল পেরেকে মৌনব্রত রাত্রি দিন
কেবল ঠুকছে মাথা!
দেয়ালের ভগ্নস্তূপ থেকে ফণা তোলে
শাপান্ত পানোখি। তবু তুমি
খাদের কিনারে বসে শতচ্ছিন্ন পালে দাও
হাওয়ার প্রলেপ!

নিষিক্ত প্রণালী

তখন নিরব ছিল বিরিঞ্চিত উপত্যকা
বিবর্ণরাজিতে ঢাকা নিথর সন্ধ্যায়
তোমার নিভাঁজ অস্তিত্বকে ঘিরে
কেঁপে ওঠে কতিপয় ছায়ার শরীর।

অন্তিমস্বরের মতো কেঁপে ওঠে মাটি
কেঁপে ওঠে ধুন্ধুমার নিষিক্ত প্রণালী।
তবুও তোমার কণ্ঠ থেকে
একটি শব্দও নিঃসৃত হলো না
তাকালে না একবারও।

সীমান্তবিহীন নির্বিরোধ যাতায়াতে
যে তুমি নির্ভয়ে প্রকম্পিত করো
নিদ্রাহীন রাতের প্রহর।
কিন্তু এই আপতিক শূন্যতায়
অপার শায়িত হলে কেন
কেন তুমি আচ্ছাদিত হলে নিস্তরঙ্গ
জলের শয্যায়?

প্রশ্ন নেই প্রশ্ন নেই, পূবেতে সাগরনিধি
পশ্চিমে পাহাড়।

স্থিরচিত্র

এই রাত দীর্ঘ নয়
তবু দীর্ঘয়িত হয় তোমায় ছায়ায়।
ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতির ভাঁজে ধুন্ধুমার বেজে ওঠে
বোধের নূপুর।

এই রাত মৌনতার নয়
নিস্পৃহ শয্যারও নয়;
কোনো এক কালোত্তীর্ণ শিল্পের মতো ব্যাপকতা নিয়ে
এই রাত অনিমেষ তোমাকে দেখার।

তোমাকে দেখার মানে, প্রাকৃতিক চারুকলা
নৃতত্ত্বের নান্দনিক প্রবাহকে দেখা।
ধিকৃত অন্ধতা আর তিক্ত গ্লানির বিরুদ্ধে
কোমল ধিক্কার।

এই রাত কুসুমিত নয়
তবু বিচ্ছুরিত হয় তোমায় প্রভায়।
স্থির জলে সুদূরের গ্রহণ দেখার মতো

এই রাত নির্ণিমেষ তোমাকে দেখার।

নো-ম্যানস্ ল্যান্ড

আমি তোমাদের কেউ নই, অন্য কেউ
অন্য কোনো কাতারে শামিল।
দৌড়-ঝাঁপ, লম্ফ-ঝম্ফ এসব জানি না
জানি না অচ্ছ্যূত মিথ্যে তুঘলকি।
সাইড লাইনে বসে কেটেছে বিফল রথে
পুরোটা প্রহর।

মাথার ওপরে নেই কোনো পড়শীর ছায়া
গলায় ঝুলানো নেই বিশেষ মাদুলি।
ক্ষিপ্র নিষাদের মতো বিক্ষুব্ধ বিষাণ হাতে
কখনো যাইনি ছুটে।
কেননা আমার কোনো প্রতিপক্ষ নেই
জয়-পরাজয় একমুখি, একলক্ষ্যে স্থির।

নেই প্রান্ত বদলের তাড়া
লাল গালিচার সংবর্ধনা কিংবা
সবিশেষ কোনো গন্তব্যও নেই, আছে আটপৌরে
বিপন্ন কুটির
তাও দেখি বিখণ্ডের নোটিশ পেয়েছে।
মানচিত্র বারবার বদল হলেও
এখনো আমার ভিটে ঘুঘুদের ফাঁদ।

এক পা আমার বিদ্ধ কাঁটাতারে
অন্য পায়ে ধর্তব্যের বেড়ি। গ্রহণ বর্জন শেষে
পড়ে আছি আধাআধি জলে ও ডাঙায়।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/আগস্ট ২৩,২০১৯)