দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: অকালে চিরবিদায় নিয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের চিরসবুজ নায়ক সালমান শাহ। বিনোদন পিপাসুদের মনে তিনি ‘অমর নায়ক’। যে কারণে মৃত্যুর ২৩ বছর পরও ভক্তদের হৃদয়ে তিনি বিরাজমান। নব্বই দশকের গোড়ার দিকে বাংলা সিনেমায় ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব হয়েছিলো

সালমানের। কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মাধ‌্যমে সালমানের প্রথম রুপালি পর্দাভিষেক দর্শক মনে ব‌্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর থেকেই তিনি তরুণ-তরুণীর আইডলে পরিণত হন। কিন্তু মাত্র ৪ বছরে তিনি যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তা এখনো বিরাজমান।

শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন থেকে সালমান শাহ হয়ে যাওয়া মাত্র ২৪ বছর বয়সী এ তারকা ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। তার অস্বাভাবিক মৃত‌্যুর রহস‌্য এখনও উদঘাটিত হয়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সালমান ভক্তদের।

কয়েকজন সালমান ভক্ত বলেন, তিনি আত্মহত্যা করেননি, তাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু ২৩ বছরেও এর কোন সুরাহা হয়নি। বারবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর মামলার তারিখ ধার্য ছিল। এদিন ঢাকার নিম্ন আদালতে ভীড় করেন সালমান ভক্তরা। এ সময় তারা সালমান শাহর খুনীদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সালমান ভক্তদের কয়েকজনের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। বিচার না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

১৯৯৬ সালের এই দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) সালমান শাহের লাশ ১১/বি নিউস্কাটন রোর্ডের স্কাটন প্লাজার বাসার নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সালমানের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই সালমানকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়।

কয়েক দফা তদন্তে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তা এখনো মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও অগনিত ভক্তরা।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের শেষের দিকে পিবিআইকে নতুন করে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় পার হওয়ায় এ মামলার অসংখ্য আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। একই সঙ্গে সম্পৃক্তদের অনেকেরই জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় অধিকতর তদন্তে কতটুকু অগ্রগতি হবে তা নিয়ে খোদ তদন্ত সংশ্লিষ্টরাই সন্দিহান।

মামলার তদন্ত কবে শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কবে নাগাদ মামলার তদন্ত শেষ হবে সেই বিষয়ে এখনও কিছু বলা যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন মামলাটি হওয়ায় অনেক সাক্ষীর মৃত্যু হয়েছে, আবার অনেকের সন্ধান পেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে তদন্ত শেষ হওয়া মাত্রই আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে পারবো।

সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী জানান, আমি আমার ছেলেটাকে হারিয়েছি ২৩ বছর হয়ে গেলো। এখনো বিচার পেলাম না। ২৩ বছর ধরে সালমান শাহ হত্যার বিচারের দাবি চলছে। এ দাবি ৪৬ বছরেও থেমে যাবে না। যতদিন না বিচার শেষ হয়। দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে এটিকে হত্যা বলতে হবে। কাদের স্বার্থে এ মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দিতে এতো দীর্ঘ সময় নেয়া হচ্ছে? আমি নিরব রয়েছি, তার মানে এই নয় যে পিছিয়ে গেছি। আমি তামাশা দেখছি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সালমান শাহ হত্যার বিচার হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন। অথচ বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা করতে সরকারের লোকজনই ইন্দ্রন যোগাচ্ছেন। দেশের আইন অপরাধীদের বিচার না করলেও, আল্লাহ অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছেন। অপরাধীরা কেউই শান্তিতে নেই।

সবশেষে সালমান শাহ’র আত্মার মাগফেরাতের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন নীলা চৌধুরী।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ০৬,২০১৯)