দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক সফর, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ কিংবা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলতে অসংখ্যবার বাংলাদেশে এসেছেন জিম্বাবুয়ের সদ্য বিদায়ী অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। এ দেশটি যে তার হৃদয়ের বড় অংশ জুড়ে, তা বেশ কয়েকবারই জানিয়েছেন জিম্বাবুয়ের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এ ক্রিকেটার।

এবার এই বাংলাদেশেই নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলেছেন মাসাকাদজা। আগেই দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, শুক্রবার চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের শেষ ম্যাচটি খেলার মাধ্যমেই অবসরে গেছেন ৩৬ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪২ বলে ৭১ রানের এক অসাধারণ ইনিংসে দলকে জেতানোর মাধ্যমেই নিজের বিদায়কে রাঙিয়েছেন মাসাকাদজা।

তবে তার পরিকল্পনা ছিলো ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে বিদায় জানাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। কিন্তু আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়ার কারণে সেই বিশ্বকাপ তো পরে, চলতি বছরে হতে যাওয়া বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও খেলা হবে না জিম্বাবুয়ের। তাই আগেভাগেই নিজের ক্যারিয়ার গুটিয়ে নিলেন ৩৬ বছর বয়সী মাসাকাদজা।

বিদায় বেলায় মাসাকাদজা জানিয়ে গেছেন, বাংলাদেশ ও দেশের মানুষ তার হৃদয়ের বড় একটি জায়গাজুড়ে অবস্থান করে। এখানে বারবার খেলতে আসার স্মৃতি উদ্বেলিত করতো জিম্বাবুয়ের অধিনায়ককে। যা তিনি অকপটে জানিয়েছেন নিজের বিদায়ী ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে।

বাংলাদেশে খেলতে আসার স্মৃতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাসাকাদজা বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার কাছে দ্বিতীয় বাড়ির মতো, হৃদয়ের বিশেষ একটি জায়গাজুড়ে এর অবস্থান। আমি এখানে অনেক মানুষের সঙ্গে মিশেছি, অনেক বন্ধু বানিয়েছি। এখান থেকে আমি অনেক জিনিস শিখেছি। ক্রিকেট খেলাটা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনা প্রশংসনীয়। এ জিনিসটা খুবই উপভোগ করেছি আমি। ক্লাব ক্রিকেট খেলতে এলেও মানুষ আমাকে চিনতে পারে। আমি একা কোথাও হাঁটতেও পারতাম না, কারণ চারপাশে ভক্ত-সমর্থকরা কথা বলতে চাইত, ছবি তুলতে চাইত। এটা সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে খেলতে আসা, এখানের সংস্কৃতি, মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারা সত্যিই আমার জন্য আশীর্বাদস্বরুপ।’

এতবার এসেছেন বাংলাদেশে, নিশ্চয়ই রয়েছে অনেক সুখস্মৃতি? মাসাকাদজাও উত্তর দিলেন ইতিবাচকভাবে। অনেক সুখস্মৃতির ভিড়ে তার কাছে বিশেষ অভিজ্ঞতা হয়ে আছে বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার সঙ্গে খেলার সময়টা। এছাড়া মাশরাফিকে কাছ থেকে দেখতে ও জানতে পারাটাও দারুণ এক স্মৃতি হিসেবে উল্লেখ করেন মাসাকাদজা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার অনেক ভালো স্মৃতি রয়েছে। ঢাকা লিগে খেলার মাধ্যমে অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে কাছ থেকে পরিচিত হতে পারাটা দারুণ একটা স্মৃতি। এর মধ্যে সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায় ক্লাব ক্রিকেটে মাশরাফির সঙ্গে খেলার (২০১৬ সালের ঢাকা লিগে, কলাবাগানের হয়ে) অভিজ্ঞতা। আমার মনে হয় অনেক মানুষই তার গল্পটা জানে না, অনেকেরই ধারণা নেই মাশরাফি কিসের মধ্য দিয়ে গেছে।’

মাশরাফির জীবনবোধ, খেলার প্রতি ভালোবাসা ও আত্মনিবেদন দেখে, তাকে বই লেখারও পরামর্শ দিয়েছিলেন মাসাকাদজা, ‘আমার মনে আছে, একবার মাশরাফির সঙ্গে কথা বলার সময় আমি তাকে পরামর্শ দিচ্ছিলাম, সে যেনো নিজের জীবন ও অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বই লিখে ফেলে। কারণ এটা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক হবে। আমার মনে হয় মানুষ জানে না সে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কতটা দিয়েছে। তাই তার সঙ্গে ঢাকা লিগে এক দলের হয়ে খেলাটা সত্যিই দারুণ সময় ছিলো।’

এ তো গেলো সুখস্মৃতির কথা, নিশ্চয়ই নেতিবাচক কোনো স্মৃতিও রয়েছে এ দেশে? সেটি কী? মাসাকাদজার জবাব, ‘বাংলাদেশে তেতো স্মৃতির কথা বললে আসবে, প্রথম দল হিসেবে এখানে টেস্ট সিরিজ হেরে যাওয়ার (২০০৫ সালে) ঘটনা। বাংলাদেশ তখনও দল হিসেবে ধুঁকছিল, আমরা তখন সিরিজ হেরে গিয়েছিলাম।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/সেপ্টেম্বর ২১,২০১৯)