দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশে অস্বাভাবিক হারে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত ১০ বছরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫৭ হাজার। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা ছিলো ১৯ হাজার। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৬ জন।

দশ বছরে ৫৭ হাজারেরও বেশি মানুষ কোটিপতির তালিকায় নাম লেখানোকে বৈষম্যের উন্নয়ন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘দেশে কিছু মানুষ লুটপাট করার মধ্য দিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। সংবিধান পরিপন্থী ও কল্যাণ অর্থনীতির নীতি থেকে সরে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। বর্তমান অর্থনীতি জোর-জুলুমের নীতিতে চলছে। এর ফলে টাকাওয়ালাদের কাছে ব্যাংকিং খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দশ বছরে এক কোটি টাকার ওপরে কিন্তু ৫ কোটি টাকার নিচে এমন ব্যক্তি নতুন করে তালিকায় নাম লেখিয়েছেন ৪৩ হাজার ৫৯৫ জন। ২০০৯ সালে এক কোটি টাকা আমানত রাখা ব্যক্তি ছিল ১৬ হাজার ৩৮৫ জন। আর ২০১৯ সালে এই সংখ্যা হয়েছে ৫৯ হাজার ৯৮০ জন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচজন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন দুই হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ১৯ হাজার ১৬৩ জন।

এ দিকে, কোটিপতি অ্যাকাউন্ট ও তাদের টাকার পরিমাণ বাড়লেও ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকার পরিমাণ বাড়েনি বরং তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। ২০১৮ সালের জুন শেষে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অ্যাকাউন্টে টাকার পরিমাণ রয়েছে মোট আমানতের পৌনে ৬ শতাংশ, যা ২০০৮ সাল শেষে ছিল ৩৬ শতাংশ।

ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা তাদের আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে পারছেন না। সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সেই সাথে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। এর পাশাপাশি বেড়েছে বাসা ভাড়াসহ বিদ্যুতের দাম। সব মিলে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এর ফলে আগে একই আয় দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য পাওয়া যেত, এখন তা দিয়ে কম পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হচ্ছে রেশনিং করে অর্থাৎ, কম ব্যয় করে। আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে না পারায় তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এতে গরির আরো গরিব হয়ে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সংখ্যা তুলনামূলক না বাড়ায় সম্পদের বণ্টন ঠিকভাবে হচ্ছে না। এতে গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। পাশাপাশি এক শ্রেণীর মানুষ সম্পদশালী হচ্ছে। এর ফলে সমাজে ধনী গরিবের বৈষম্য বেড়ে চলছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, বিগত দুই বছরে ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মানুষ আয়ের সাথে ব্যয় মেলাতে পারছে না। যে পরিমাণ আয় করছে সংসারের ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষ তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ০৩,২০১৯)