সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ৬ বছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যায় তার পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে সোমবার সন্ধ্যায় দিরাই থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘শিশু তুহিন হত্যার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের বাবা আবদুল বাছির, চাচা আবদুল মছব্বির, জমশেদ মিয়া, নাছির ও জাকিরুল, তুহিনের চাচি ও চাচাতো বোনকে থানায় নিয়ে আসা হয়। থানায় প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে পরিবারের তিন সদস্য হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। বিস্তারিত জানার জন্য আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করব।’

নিহত শিশু তুহিনের বাবা এলাকার অন্য একটি হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলার আসামি। মামলার কারণে তাদের পরিবারের লোকজন এমন কাজ করতে পারে বলে জানান পুলিশ সুপার।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি মিজানুর আরও বলেন, আমরা তুহিনের পরিবারের ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছিলাম। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ২/৩ জনের সম্পৃক্ততা আমরা পেয়েছি। যে ২/৩ জন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছে।

পুলিশ সুপার যোগ করেন, ‘প্রতিহিংসাবশত হতে পারে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে হতে পারে, আবার মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে; তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, নিহতের বাবাসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিভিন্ন মামলার আসামি। এলাকায় তাদের একাধিক প্রতিপক্ষ রয়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে চায়।

তবে কারা সরাসরি খুন করেছে তা এড়িয়ে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, সবাইকে আটক দেখানো হচ্ছে না। পুরোপুরি জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে হত্যা মামলা করা হবে।

রোববার রাতের খাবার খেয়ে তুহিনের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে তুহিনের চাচাত বোন সাবিনা বেগম ঘরের দরজা খোলা দেখে চিৎকার শুরু করলে পরিবারের সদস্যরা জেগে উঠে দেখেন তুহিন ঘরে নেই।

খোঁজাখুঁজির পর বাড়ি থেকে কিছু দূরে মসজিদের পাশে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধারের সময় শিশুটির পেটে দুইটি ছুরি গাঁথা ছিল। তার কান ও লিঙ্গও কেটে নেয় হত্যাকারীরা।

নিথর শিশুটির পেটে বিদ্ধ অবস্থায় দুটি ধারালো ছুরিও পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তবে ৪ বছর আগের একটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকায় বিরোধ চলছিল।

ওই বিরোধে শিশুটির বাবা আবদুল বছির মিয়া পক্ষভুক্ত ছিল। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে এই হত্যার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা জানা যায়নি। এ ঘটনায় উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে তোলপাড় শুরু চলছে।

নিহত তুহিনের স্বজনরা জানান, রোববার প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১২টার দিকে শিশু তুহিন প্রকৃতির ডাকে সারা দিয়ে মাকে নিয়ে বাহিরে যান।

তারা পরে ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ৩টার দিকে মা-বাবা হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে ঘুম থেকে জেগে দেখেন তুহিন ঘরে নেই। পরে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে বাড়ির পাশে রক্ত দেখতে পান।

পরে খানিকটা দূরে সুফিয়ান মোল্লার উঠোনে মসজিদের পাশে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তুহিনের গলা কাটা লাশ দেখতে পান। এসআই তাহের জানান, সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জে পাঠানো হয়েছে।

একটি সূত্র জানান, চার বছর আগে গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী নিলুফা হত্যার ঘটনা নিয়ে কেজাউরা গ্রাম দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপক্ষে আছেন এলাকার এলাছ মিয়া, অপর পক্ষে আছেন আনোয়ার মেম্বার।

নিহত শিশুটির পিতা আবদুল বছির এলাছের পক্ষে। সোমবার নিলুফা হত্যা মামলা নিয়ে আপস মীমাংসার কথা ছিল। সূত্র জানায়, শিশুটির পিতা বছির মিয়া আপসের পক্ষে অবস্থান নিলেও এলাছ মিয়াসহ কয়েকজনই আপসের বিপক্ষে অবস্থান নেন।

এলাকাবাসীর অনেকে বলছিলেন, নীলুফার হত্যা নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ অনেকেই জিইয়ে রাখতে চাইছেন। তারাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন। তবে শিশুর দেহে বিদ্ধ ছোরার বাঁটে পেন্সিলে সোলেমান ও সালাতুল নামে দুটি নাম লেখা রয়েছে।

এ দু’জনই আনোয়ার মেম্বারের পক্ষের লোক। শিশুটির বাবা আবদুল বছির মিয়া জানান, গ্রাম্য বিরোধ থাকলেও আমার এই ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে, তা আমি বিশ্বাস করি না।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ১৫,২০১৯)