দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের জন্মদিন আজ। ‘কিং খান’ নামেও পরিচিত তিনি। ১৯৬৫ সালে জন্ম নেয়া এই প্রতিভাবান অভিনেতার উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। অভিনয় তার প্রথম পছন্দ ছিল না। হতে চেয়েছিলেন আর্মি অফিসার। তার বলিউড বাদশা হওয়ার পেছনে আছে অনেক না বলা কথা, অনেক চড়াই উতরাই।

পাকিস্তানের পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করা শাহরুখের বাবা মীর তেজ মোহাম্মদ খান ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাপন্থী ছিলেন। ভারত ভাগের পর ১৯৪৮ সালে চলে আসেন নয়া দিল্লিতে। সেখানে শাহরুখের মা লতিফ ফাতিমার সাথে পরিচয়ের পর প্রেম ও বিয়ে হয়। শাহরুখের বাবা রেস্টুরেন্ট ব্যবসাসহ বেশ কিছু ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। নয়া দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ। অবশ্য তার জীবনে প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালোরে, নানির বাড়িতে। নানি তার নাম প্রথমে আব্দুর রহমান রাখতে চেয়েছিলেন। পরে বাবা নাম রাখেন শাহরুখ খান।

সেন্ট কলম্বাস স্কুলে লেখাপড়া করেন শাহরুখ। সেখানে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি হকি ও ফুটবলে দুর্দান্ত খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। স্বীকৃতি হিসেবে পান স্কুলের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘সোর্ড অব অনার’। ওই সময় একজন স্পোর্টসম্যান হিসেবেই ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন শাহরুখ। তবে কাঁধে বড় ধরনের আঘাত পাওয়ায় সেই আশা আর পূরণ হয়নি। পরে হংসরাজ কলেজে ইকোনোমিকসে ভর্তি হলেও তার মধ্যে খেলা করছিল অভিনয় প্রতিভা। ছাত্র থাকা অবস্থায় স্টেজে অভিনয় শুরু করেন। সে সময় অমৃতা সিং ছিলেন তার অভিনয় সঙ্গী, যিনি পরে বলিউডের নায়িকা হিসেবে নিজের অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

বলিউডে যোগ দেয়ার আগে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় প্রশিক্ষণ নেন শাহরুখ। এরই মাঝে তার বাবা ক্যানসারে মারা যান। এর ১০ বছর পর ১৯৯১ সালে মারা যান তার মা। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন শাহরুখ। সে সময় তার বড় বোন শাহনাজও একা হয়ে পড়েন। তাই বোনের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। আর মায়ের মৃত্যু শোক ভুলতে অভিনয়েই নিজেকে নিবিষ্ট করেন। তবে অভিনেতা হিসেবে কিন্তু নিজেকে দেখতে চাননি তিনি। ইচ্ছে ছিলো ক্যামেরার পেছনে থেকে সিনেমা পরিচালনা করার। সেই আশা পূরণ না হয়ে হয়তো ভালোই হয়েছে। সে কারণে বলিউড পেয়েছে ইতিহাসের অন্যতম সফল এক নায়ককে।

সিনেমায় অভিনয়ের আগে শাহরুখ প্রথমে টিভিতে (তখন শুধুমাত্র ভারতীয় চ্যানেল দূরদর্শন সম্প্রচার হতো) অভিনয় শুরু করেন। টিভি সিরিজ ‘দিল দরিয়া’য় তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। তবে সিরিজটি সম্প্রচার হওয়ার আগেই ‘ফৌজি’ সিরিজটি টেলিভিশনে প্রচার হতে থাকে। সেখানে তিনি আর্মি ক্যাডেটের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং দর্শকের নজরে পড়েন। এছাড়া টিভি সিরিজ ‘সার্কাস’, ‘ইডিয়ট’, ‘উমিদ’, ‘ওয়াগলে কি দুনিয়া’তে দেখা যায় তাকে। সেই সময় দূরদর্শনে ইংরেজি ভাষার টিভি ফিল্ম ‘ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোজ ওয়ান্স’ –এ একটি চরিত্রেও দেখা গেছে তাকে। এতে বর্তমানে বিশ্বখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় মূল চরিত্রে ছিলেন।

১৯৯১ সালে দিল্লি থেকে মুম্বাই চলে যান ক্যারিয়ার গড়তে। সেই বছর বলিউড স্টার হেমা মালিনীর প্রথম পরিচালিত ‘দিল আশনা হ্যায়’ সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হন। এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম চুক্তি করা সিনেমা। সে বছর একসাথে ৪টি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। তবে তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘দিওয়ানা’। দিব্যা ভারতীর বিপরীতে এই সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৯২ সালে। সেখানে প্রধান নায়ক ছিলেন ঋষি কাপুর। মুক্তির পর সিনেমাটি হিট হয়, বলিউডে যাত্রা শুরু হয় নতুন এক তারকার। নতুন এক ট্রেন্ড নিয়ে আসেন তিনি। হিরো নয়, মূলত অ্যান্টি হিরো হিসেবেই তাকে দেখা যায় ‘ডর’ (১৯৯৩), ‘বাজিগর’ (১৯৯৩) ও ‘আনজাম’ (১৯৯৪) সিনেমাতে। তিনটি সিনেমাই দারুণ হিট হয়। তবে এরই মাঝে স্ক্রিনে নিজের আরেক রূপে নিয়ে আসেন শাহরুখ। ‘করণ অর্জুন’ (১৯৯৫) সিনেমায় প্রথমবারের মতো বলিউডের আরেক স্টার সালমান খানের সঙ্গে পর্দায় হাজির হন তিনি। সিনেমাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সেই বছর মুক্তি পাওয়া রোমান্টিক সিনেমা ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ বলিউডে নতুন এক অধ্যায় তৈরি করে। সুপার ডুপার হিট হওয়ার পাশাপাশি বলিউডের সর্বকালের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমার স্বীকৃতি পায় এটি। এরপর ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ (১৯৯৭), ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ (১৯৯৮), ‘কাভি খুশি কাভি গম’ (২০০১) সিনেমাগুলো সুপার হিট হয়। নায়িকা কাজলের সাথে তার জুটিকে বলিউডের সেরা জুটি হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হয়। এ পর্যন্ত শাহরুখের ১৭টি সিনেমা অন্তত ১০০ কোটি রুপি আয় করেছে। সেরা অভিনেতার ক্যাটাগরিতে আটটিসহ এ পর্যন্ত ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন ১৪ টি। ‘দেবদাস’ (২০০২), ‘স্বদেশ’ (২০০৪), ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘মাই নেম ইজ খান’ শাহরুখের প্রশংসিত ও পুরস্কৃত করেছে।

ব্যক্তি জীবনে প্রেমিকা গৌরী চিবারকে বিয়ে করেন শাহরুখ। গৌরী এক পাঞ্জাবি হিন্দু পরিবারের মেয়ে, শাহরুখ মুসলিম। তবে ধর্ম বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। তাদের সুখের পরিবারে এখন দুই ছেলে এক মেয়ে। তরুণ আরিয়ানের জন্ম ১৯৯৭ সালে, তরুণী সুহানা ২০০০ সালে। আর ২০১৩ সালে সারোগেট মাদারের সহায়তায় শাহরুখ-গৌড়ীর পরিবারে আসে আরেক ছেলে সন্তান আব্রাম। শাহরুখ প্রায়ই বলেন, তার পরিবারের সদস্যরা একাধারে হিন্দু ও ইসলাম দুই ধর্মের উৎসবই সমানভাবে পালন করে।

মুম্বাইয়ের অন্যতম বিলাসবহুল বাড়ি আছে শাহরুখের। ‘মান্নাত’ নামের এই বাড়িটির দাম প্রায় ২০০ কোটি রুপি। আর কিং খানের মোট সম্পদের মূল্য ৭৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম ধনী অভিনেতা তিনি।

ক্রিকেটের খুব ভক্ত শাহরুখ। তাই অভিনেত্রী জুহি চাওলার সাথে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের টিম কলকাতা নাইট রাইডার্স কিনে নেন ২০০৮ সালে। এছাড়া ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল ট্রিনবাগো নাইট রাইডার্স ও গ্লোবাল লিগের দল কেপ টাউন নাইট রাইডার্সেরও মালিক তিনি। স্ত্রী গৌড়ী খানকে সাথে নিয়ে ১৬ বছর আগে গড়ে তোলেন প্রোডাকশন হাউস ‘রেড চিলিস এন্টারটেইনমেন্ট’। এখান থেকেও বেশ কিছু ব্যবসাসফল সিনেমা করেছেন দুজন।

প্রায় তিন দশক ধরে বলিউড শাসন করে চলেছেন শাহরুখ। ক্যারিয়ার কিছুটা পড়তির দিকে এখন। তবে যেসব হৃদয় কাড়া সিনেমা তিনি উপহার দিয়েছেন, সেগুলো তাকে ‘কিং খান’ হিসেবেই অমর করে রাখবে আরো বহু যুগ।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ০২,২০১৯)