দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (একাংশ) কার্যকরী সভাপতি ও সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাদলের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করল। আজকে সকালে যখন তার মৃত্যুর খবরটি পেলাম, এটি সত্যি একটা বিরাট ধাক্কা লেগে গিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বাদলের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবসময় তার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নিতাম। তিনি অসুস্থ ছিলেন। তার স্ত্রী সবসময় আমাকে মেসেজ পাঠাতেন, খবর দিতেন। তিনি কী অবস্থায় আছেন জানতে পারতাম। দুইদিন আগেও তার স্ত্রীর কাছ থেকে মেসেজ পেয়েছিলাম।’

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে আমরা যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছি। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি; এমনকি সেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল।’

সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আমাদের ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি জাসদে যোগ দেন। আমরা যখন আমাদের ঐক্যজোট গঠন করি, আমাদের সঙ্গে তিনি সক্রিয় ছিলেন। কাজেই আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে এবং এই পার্লামেন্টে তার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে এবং রাজনৈতিক চিন্তা চেতনায় প্রজ্ঞায় তিনি যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছেন।’

তার মৃত্যু আজকে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আমি ভাবতেই পারিনি। আজকে তিনি এইভাবে মৃত্যুবরণ করবেন। কারণ পার্লামেন্ট শুরু হবে। তিনি আসবেন পার্লামেন্টে, দ্রুত সুস্থ হতে হবে; এটিই তার মনে ছিল।’

‘আজকেও যখন এই মৃত্যু খবর পেয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি, তখন এ কথাটাই বলছিলেন, ‘বুবু তিনি তো চাচ্ছিলেন, খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে পার্লামেন্টে এসে কথা বলবে। আমাদের সেই দুভার্গ্য, তার সেই বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আমরা আর শুনতে পারব না।’

‘আসলে, আমরা সকলেই শোকাহত, মাত্র দুইদিন আগেও মাননীয় স্পিকার আপনার সঙ্গে যখন কথা হলো পার্লামেন্ট বিষয়ে, এবার অন্তত আমাদের পার্লামেন্টের কেউ মারা যাননি, শোক প্রস্তাবেই চলবে, পার্লামেন্ট বন্ধ করতে হবে না। অথচ কী দুভার্গ্য আমাদের এবং নিয়তির কী নির্মম পরিহাস যে আজ সকালেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।’

প্রধানমন্ত্রী মঈনউদ্দিন খান বাদলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তার মরদেহ ভারত থেকে দেশে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও অবহিত করেন।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চলার পথে অনেক আপনজন হারিয়ে ফেলছি। অনেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। কারণ একদিন যেমন আমাদের জন্মাতে হয়, মৃত্যুর পথও বেঁচে নিতে হয়। এটিই হচ্ছে সত্য। সেই সত্য আসলে মেনে নেওয়া কঠিন কিন্তু মেনে নিতেই হয়।’

সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী বর্তমান সংসদের সদস্য মঈনউদ্দীন খান বাদলের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলের রওশন এরশাদ, সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, জাসদের হাসানুল হক ইনু, আ স ম ফিরোজ, আবুল কালাম আজাদ, শাজাহান খান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

সংসদে মৃত্যুবরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন।

এরপর সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী দিনের অন্যন্য কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদে বৈঠক মুলতবি করা হয়। সংসদ নেতার বক্তব্যের পর স্পিকার শোক প্রস্তাবটি পাসের জন্য উত্থাপন করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি পাস হয়। এরপর সংসদ অধিবেশন মূলতবি ঘোষণা করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ০৭,২০১৯)