দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার। সাতক্ষীরার ছোট একটি গ্রাম থেকে জাতীয় দলের সুযোগটা মিলেছিল হুট করে। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টির অভিষেক ঘটা মুস্তাফিজুরের প্রথম উইকেটটা ছিল শহীদ আফ্রিদির। তবে নিজের নামের সাথে ‘কাটার মাস্টারে’র ট্যাগলাইনটা বসিয়েছেন ভারত সিরিজে।

২০১৫ সালের জুনে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে ভারতীয় ক্রিকেট দল। সেই ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে রীতিমত নাকানিচুবানি খাওয়ায় এই মুস্তাফিজুর। কখনো কাটার, কখনো সুইং কিংবা কখনো গোড়ালি ভাঙা ইয়োর্কার। প্রথম দুই ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে গড়লেন রেকর্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে মোট ১৩ উইকেট নেয়া ১৯ বছর বয়সী মুস্তাফিজ একা হাতে সিরিজ জিতিয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষে।

এরপর ক্রিকেটবিশ্বে নিজের জাত চিনিয়েছেন কাটার মাস্টার। মুস্তার বলের জবাব দিতে ব্যর্থ ক্রিকেট দুনিয়ার বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা। একটা সময় টাইগার ক্রিকেটের পেস বিভাগের মূল দায়িত্বটা যায় মুস্তাফিজুরের কাঁধে। নতুন বলে আর্লি ব্রেকথ্রু এনে দিতে যেন মুস্তাফিজের বিকল্প নেই। এছাড়া স্লগ ওভারে রান চাপানোর দায়িত্বটাও মুস্তাফিজের।

আইপিলে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলার সময় ভারতে নিজের আলাদা সমর্থকগোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছিলেন মুস্তাফিজ। ২০১৬ আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের ‘ইমার্জিং খেলোয়াড়’। এরপর কাউন্টিতে সাসেক্সের হয়ে চুক্তিবদ্ধ হন দ্যা ফিজ। কাউন্টি খেলার সময় কাঁধের ইনজুরিতে ৬ মাসের জন্য ছিটকে পড়েন মুস্তা।

এই ইনজুরিটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় মুস্তাফিজের জন্য। ইনজুরি থেকে ফেরা মুস্তাফিজের মাঝে সেই আগের গতি, সুইং কিংবা ক্ষীপ্রতা কোনটাই ফিরে আসেনি। এরপর ২০১৭ তে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এবং এ বছরের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি এই বোলার।

সবথেকে বাজে যাচ্ছে টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে। সবশেষ খেলা ১০ টি-টুয়েন্টিতে মুস্তাফিজুরের সংগ্রহ মোটে ১২ উইকেট। ১০ ম্যাচে ৩৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে রান খরচ করেছেন ৩০৪ রান। গড় প্রায় ১০! পরিসংখ্যান দেখলে বোঝার উপায় নেই এটা পাড়ার বোলার নাকি একসময় আলোড়ন সৃষ্টি করা মুস্তাফিজ! ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার ৩ বছর পার হয়ে গেলেও সেই মুস্তাফিজ ফিরতে পারেননি এখনো।

সবশেষ ভারত সফরের প্রথম দুই ম্যাচের একটিতেও সম্পুর্ণ করতে পারেননি নিজের বোলিং কোটা। প্রথম ম্যাচে দুই ওভার এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ ওভার ৪ বল। মুস্তাফিজের বল খেলতে এখন আর ভাবতে হয়না ব্যাটসম্যানদের। সাবলীলভাবে ব্যাটসম্যানরা যেন মুখস্ত পড়ার চর্চা করে কাটার মাস্টারের বলে।

আগামী বছর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ। অতীতের রেকর্ডের কারণে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ স্কোয়াডেও সুযোগ মিলতে পারে মুস্তাফিজের। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যদি বাংলাদেশ মুস্তাফিজকেই প্রধান অস্ত্র বানিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে টাইগার বোলিং ইউনিট ঠিক ততটাই নির্বিষ থাকবে যতটা ছিল ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে।

দলের প্রধান অস্ত্র থেকে বোঝায় পরিণত হওয়া মুস্তাফিজের ছিটকে পড়া এখন সময়ের ব্যাপার। সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত গুণাবলীর সঠিক পরিচর্যা না করতে পারলে নিজের ব্যাক্তিগত ক্যারিয়ারের সাথে হুমকির মুখে পড়বে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত। মুস্তাফিজের কাছে তার নিজের ফিরে আসাটা বা উন্নতি করাটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয় ক্রিকেট বোর্ডের মুস্তার বিকল্প খোঁজা।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ০৯,২০১৯)