দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আমার ব্যক্তিগত বিষয়টা আমার অনুমতি ছাড়া যদি কেউ প্রকাশ করে দেয় সেটা আমার রাইট টু প্রাইভেসির ওপর আঘাত। আমার গোপনীয়তার যে সুরক্ষা, তার ওপর আঘাত।

অভিনেত্রী মিথিলার সঙ্গে পরিচালক ফাহমির কি সম্পর্ক ছিল এটি তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে তাহসানের ভূমিকা কি ছিল সেটাও তাদের ব্যাপার। কিন্তু গেল কয়েকদিন তাদের ঘনিষ্ঠ ছবিগুলো যেভাবে গণমাধ্যমে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ এই ছবিগুলো থেকে মজা লুটছে। তা কেন হতে দিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী?

বাংলাদেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ তৈরী করা হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, কেউ যদি কুৎসা রটনা করে কেউ যদি অন্যের সম্মানহানি করে ভাবমূর্তি নষ্ট করে বা তার সম্মতি না নিয়ে কোন ছবি প্রকাশ করে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেটাই যদি হয় তাহলে আমরা দেখছি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে ভিক্টিমাইজ করা হচ্ছে। কিন্তু এর কতটা প্রতিকার করা হচ্ছে।

প্রভা তার বয়ফ্রেন্ড রাজিবের সঙ্গে কি করেছেন না করেছেন সেটা তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু যে সেই ভিডিও লিক করেছে সেটা গর্হিত অপরাধ। এটা যে একজন মানুষকে এই সমাজে কোন স্তরে নিয়ে যায় সেটা যারা ভিক্টিম হয় তারাই জানে। যদিও সে সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এতটা শক্তিশালী ছিল না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও ছিল না।

প্রভার ভিডিওর সত্যতা থাকলেও অনেকের ভুয়া ভিডিও বের করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সামাজিকভাবে হেয় করা হয়েছে তারকাদের। যার মধ্যে মাহিয়া মাহি, সাবিলা নূর, মেহজাবিনদের মত তারকারা রয়েছেন।

এই সময়ে এসে মিথিলাকে নিয়ে সেই চর্চা শুরু হয়েছে। মিথিলা ব্যক্তিগত জীবনে কি সেটা আমরা জানতে চাই না। মিথিলাকে আমরা একজন মেধাবী ব্যক্তিত্ব হিসাবে জানি। তিনি যেমন একাডেমিকভাবে মেধাবী ছিলেন তেমনি কর্মক্ষেত্রে সফল একজন নারী। এ যুগে নারীদের সাফল্যে একজন প্রতিকৃতি হলেন মিথিলা। অভিনয় বা নাটকে তিনি কতটা জনপ্রিয় সেটা তো পরের বিষয়।

মিথিলাকে দেখে এ যুগে অনেক মেয়ে উৎসাহিত হয়েছে। পড়াশুনা, কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আগ্রহী হয়েছে মিথিলাকে দেখে। সিঙ্গেল মাদার হিসাবে তিনি ব্রাকের মত একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। যেটা চাট্টিখানি কথা না এই সমাজে।

মিথিলার ঘনিষ্ঠ ছবি ফাহমি প্রকাশ করেছেন কিনা সেটাও তদন্ত করা উচিত। তদন্ত করার পাশাপাশি যারা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। না হলে এই ব্লাকমেইলিংয়ের যে সংস্কৃতি তাতে যেকারো ফেসবুক বা পার্সোনাল জায়গা হ্যাক করে সামাজিকভাবে তাকে ব্রিবতকর অবস্থায় ফেলা হতে পারে। এটা অবশ্যই একটা গর্হিত অপরাধ। এর আগে আরো অনেক তারকার আইডি হ্যাক করা হয়েছে।

শুধু যে তারকা তা নয়, অনেক সাধারণ মেয়ে ও ছেলেই ব্লাকমেইলের শিকার হচ্ছে। অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। অনেকে পালিয়ে গিয়েছে এই সমাজ থেকে। কিন্তু এর প্রতিকার কোথায়? মিথিলার ইস্যু দুদিন পরে এখন অনেকটা থেমে গেছে। কিন্তু মিথিলা যে তার সম্মানটা হারিয়েছে তার কি হবে? এই সমাজে মিথিলাকে যেন প্রকাশ্যে নীপিড়ন করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যাপারে অনেক সমালোচনা করা হয়েছিল। এই আইনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কেউ যেন কুৎসা রটনা, নোংরামি, অশ্লীলতা না করতে পারে সেজন্যই আইনটা করা হয়েছে। এই আইনের পক্ষে সবচেয়ে বড় ঝুক্তি ছিল এগুলোই। এখন এই আইনটা নীরব কেন? আমরা মনে করি না মিথিলা কিংবা ফাহমিকেই এই ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ভিক্টিমাইজ তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে কেন?

তারা ব্যক্তিগতভাবে ভালো নাকি খারাপ করেছে সই বিতর্কে যাওয়ার আগে অনেক কিছু ভাবতে হবে। কিন্তু সে বার্তাটা সকলের কাছে পৌছানো উচিত, যাদের ছবি প্রকাশ হয়েছে তাদের অনুমতি ছাড়া কিভাবে হলো? এটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটা অপরাধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এই অপরাধটাকে উহ্য করে এটা নিয়ে মজা লুটতেছে কারা?

কেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিজ থেকে উদ্যোগ নিচ্ছে না? এটা নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কেন দাখিল করতে হবে? যখন যার এমন ছবি প্রকাশ হয় তখন যে তার কি অবস্থা হয় সেই ধাক্কা সামলে ওঠাও তো একটা সময়ের ব্যাপার। সেজন্য এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে যদি এখনি ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে ভবিষ্যতে আরেকজনের আইডি হ্যাক হবে। আরেকজন বিপদে পড়বে। অথবা নীরবে আরেকজন ব্লাইমেইলিংয়ের শিকার হবে।

কুৎসা রটনার ক্ষেত্রে স্যোশাল মিডিয়াকে ব্যবহার করার যে একটা নোংরা প্রবণতা সেটা আরো বাড়বে যদি এখনি যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘দুজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ছবি ভাইরাল করা তাদের স্বাধীনতাকে অবজ্ঞা করা এবং এটা আইনের ব্যত্যয়ও বটে, যা একান্ত ঘৃণাবোধকেই উসকে দেবে এবং এটা জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান উন্নত বলে প্রমাণ করে না। সম্মানিত নেটিজেনদের আহ্বান জানাব, এটাকে নিয়ে না ঘাটাতে এবং অন্যের ইস্যু নিয়ে কনসার্ন্ড না হয়ে নিজের পরিবারকে সময় দিন। যারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই ঘৃণ্য কাজ করছেন আদতে তারা আইনের লঙ্ঘন করছেন। আমরা নানা সময়ই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তারকাদের থেকেও যে খুব বেশি সহযোগিতা পাই তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় তারা হয়তো এসে অভিযোগ জানায়। কিন্তু তারপরও যে কেসটা রান করাতে কিছু পদক্ষেপ তাদের নিতে হয় সেটা তারা আগ্রহী হয় না। ফলশ্রুতিতে আইনের আওতায় আনলেও হয়তো সে জামিনে বেরিয়ে যায়। আসলে আইনের উর্ধ্বে তো আমরা কেউ না। কিন্তু আমাদের ইউনিট যথেষ্ঠ সচেতন। আমাদের নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। আমাদের পরিবার মা বোনদের কথা চিন্তা করতে হবে। আমরা কি করছি সেটা ভেবে করা উচিত।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ০৯,২০১৯)