দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত একই সময়ে ঘটার কারণে এবারও ভয়াবহতার মাত্রা ১৯৯১ সালের মতো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দুর্যোগ গবেষকরা। তবে, আগাম প্রস্তুতি থাকায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা। তারা বলছেন, এখন আগে থেকে বার্তা পাওয়ায় ও উপকূলে বহুমুখী ব্যবস্থা নেওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ আগের যেকোনও ঝড়ের মতো হওয়ার আশঙ্কা নেই।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে ১৯৭০ ও ১৯৯১ সালে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর ২০০৭ সালের সাইক্লোন সিডর বেশ ক্ষতির কারণ হয়েছিল। ১২ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল ঘূর্ণিঝড়টিতে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২২৫ কিলোমিটার। ঝড় আর ভরা জোয়ার একসঙ্গে ছিল ১৯৯১ সালে।

দুর্যোগ গবেষকরা বলছেন, ভরা জোয়ারে এমনিতেই পানি অনেক ওপরে ওঠে। এর সঙ্গে ঝড় যুক্ত হলে আরও শঙ্কার। ঝড় যদি জোয়ারের সঙ্গে হয়, তাহলে জলোচ্ছ্বাস দ্বিগুণ হয়ে যায়।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বঙ্গোপসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, উপকূলে আঘাত করার আগে সাধারণত সেগুলোর শক্তি বেড়ে যায়। যদিও কখনও-কখনও দুর্বল হওয়ার নজিরও আছে। এখন পর্যন্ত পূর্বাভাস যা বলছে, তাতে জোয়ারের সময় ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে অগ্রসর এই ঝড়ের কারণে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, ‘জোয়ারের সময় ঝড়ের আঘাতের পূর্বাভাস দেখে ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতার আশঙ্কা করছি। কারণ, জোয়ারে জলোচ্ছ্বাস দ্বিগুণ হয়ে যায়। এমনিতেই কক্সবাজারে জোয়ারের সময় তীরে পানি বেশি থাকে। যদি সঙ্গে ঝড় থাকে তাহলে তো ওপর দিয়ে চলে যাবে। এটা যদি হয়, তাহলে সামাল দেওয়া মুশকিল। শুঁটকি ক্রীতদাসদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শঙ্কা এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে। বলা হচ্ছে তাদের সংখ্যা ৮ হাজার, কিন্তু আমার হিসাবে তা ১৫ হাজার। এরমধ্যে অনেক কমবয়সী আছে। আবার শরণখোলার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে, মোড়েলগঞ্জের ফেরি পারাপার বন্ধ, মানুষ আসতে চাইলেও পারবে না।’ জমিতে এখন আমন ধান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পানি যদি জমিতে ঢুকে পড়ে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।’

এবারের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলকে ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে মেলাতে চান না আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে সেটা বলতে গেলে পেছনের ডাটা দেখে বলতে হবে। তবে ৯১ সালে জোয়ার থাকার কারণে জলোচ্ছ্বাস বেশি হয়েছে, এবারও সেই আশঙ্কা আছে। ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়টি ছিল সুপার সাইক্লোন। এবারেরটি বর্তমান অবস্থার পরবর্তী ধাপে গেলে সুপার সাইক্লোন হবে।’ এই ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ কখনও বেশি হচ্ছে, কখনও কম হচ্ছে বলেও তিনি মনে করেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ০৯,২০১৯)