বিশেষ প্রতিবেদন, দ্য রিপোর্ট: হঠাৎ কোনো সাংবাদিক যদি ডাক্তারি করার চেষ্টা করেন তখন রোগীর কি ঘটতে পারে অনুমান করা সহজ। কিংবা সাংবাদিক যদি কোনো চার্টাড একাউন্টেন্ট হয়ে অডিট রিপোর্ট তৈরি করেন তবে তার পরিণতিও সহজে অনুমেয়। ঠিক তেমনি কোনো ডাক্তার যদি হঠাৎ সাংবাদিক হওয়ার চেষ্টা করেন সেখানেও ঘটতে পারে বিপত্তি। কোনো চার্টার্ড একাউন্টেন্ট যদি সাংবাদিক হয়ে যান সেক্ষেত্রে হতে পারে ভুল বা মারাত্মক ভুল । সাংবাদিকতার তখন শুরু হয় মরণ দশা। 

দেশে গণমাধ্যমের যে দশা তাতে এখন আর নতুন করে কেউ এই্ পেশায় আসতে সাহস করছেন না। এখানে চাকরির নিরাপত্তা নেই, বেতনের নিরাপত্তা নেই, নেই জীবনের নিরাপত্তা। এমনকি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন সেটা টিকে থাকারও গ্যারান্টি নেই। এই অনিশ্চিত পেশাকেও কেউ কেউ লোভনীয় ও লাভজনক ভেবে এখনো ঝাপিয়ে পড়ছেন। একটা অনলাইন খুলে সরাসরি সম্পাদক বা নির্বাহী সম্পাদক হয়ে উঠছেন। আর এসব অনলাইনের সম্পাদকের কবলে পড়ে মহাবিপদে পড়ে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। নিজের ও প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নিয়ে সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছেন অনেকে। সত্য তথ্য মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে। অস্তিত্ব সম্পন্ন হেভিওয়েট কম্পানিও হয়ে পড়ছে অস্তিত্বহীন।

সম্প্রতি এরকম একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বেশ অবাক হয় দ্য রিপোর্ট কর্তৃপক্ষ। এই ভেবে যে আমাদের সাংবাদিকদের অবস্থান কোথায়? সব পেশার লোক এ পেশায় ঢুকে পড়ছে। যা ইচ্ছা তাই লিখছে। আর সাংবাদিকদের ভিত নাড়িয়ে দিচ্ছে। শেয়ারবাজার প্রতিদিন ডটকম নামের একটি নতুন অনলাইন নিউজ পোর্টালে গত ২০ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেড নামের একটি কম্পানি বেশকিছু অনিয়ম করেছে বলে দাবি করা হয়। প্রতিবেদনের ভাষায় কে্াম্পানিটি আর্থিক বিবরণীতে বড় ধরনের জালিয়াতি করেছে ও তথ্য গোপন করেছে। ফলে রিংসাইন যদি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
‘অস্তিত্বহীন ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নামে রিং সাইন টেক্সাটাইলের প্রায় ২৫ কোটি টাকার শেয়ার’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে এই ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির কোথাও কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার ইউনিভার্স নিটিং টেক্সটাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিস্টার সুং ওয়ে মিন রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। একই ব্যক্তি এ দুটি কোম্পানির একটির চেয়ারম্যান অন্যটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যদি একই ব্যক্তি দুই পদে বহাল থাকেন তবে সে তথ্য পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনকে(বিএসইসি) জানাতে হবে। আইপিওর আবেদনের সময় কমিশনের কাছে যে প্রসপেক্টাস জমা দেওয়া হয়েছে তাতে সে তথ্য উল্লেখ করতে হবে। শেয়ারবাজার প্রতিদিন ডটকমের ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয় এই তথ্য বিএসইসিকে জানানো হয়নি, বিষয়টি রিং সাইন কর্তৃপক্ষ গোপন করেছে। এছাড়া যে ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নামে রিং সাইন টেক্সাটাইল লিমিটেডের ২৫ কোটি টাকার শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে তার কোনো অস্তিত্ব নেই।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে ‘আসুন দেখে আসি সরেজমিনে ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানিতে কি দেখতে পেলোপ্রতিবেদক এবং কোম্পানির সম্পর্কে কি জানা গেলো।জানা যায় -ভাড়ায় চালিত ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টস লিমিটেড কোম্পানিটি কিছুদিন আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোম্পানিটির প্রয়োজনীয় মেশিনারি রিং সাইনে প্রেরণ করা হয়েছে।ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টস লিমিটেড এর জায়গায় জালাল প্লাজায় ১০ বছরের জন্য সুলভ মূল্যে ও সহজশর্তে দোকান বুকিং চলছে। শেয়ারবাজার প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এসব চিত্র উঠে আসে ।’’

এই প্রতিবেদন পড়ে অবাক হয়ে যায় দ্য রিপোর্ট কর্তৃপক্ষ। কি ভাবে এরকম একটা কোম্পানিকে প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের(আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা চাঁদা তোলার অনুমতি দিলো নিয়ন্ত্রকসংস্থা বিএসইসি। এতো বড় দুর্নীতি কিভাবে সরকারি সংস্থা করতে পারলো? সাধারণ মানুষের টাকা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার এতো বড় ছিনিমিনি খেলা ?

নতুন অনলাইন হলেও একটা সমীহ জাগানো প্রতিবেদন এটি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকেনি বিএসইসি। তারা রিং সাইনের কাছে এই রিপোর্টের সত্যতা জানতে চেয়ে চিঠি দেয়। নিজেরাও তদন্ত করে। গত ৫ নভেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থার ৭০৪ তম কমিশন সভা থেকে এই প্রতিবেদন নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত জানার পর নতুন অনলাইনটার ওপর সমীহটা উবে যায় অন্যসব গণ মাধ্যমের মতো দ্য রিপোর্টের । বিএসইসির সিদ্ধান্তে জানানো হয়েছে-প্রকাশিত প্রসপেক্টাসের ১৯৫ নং পাতায় রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক –এর অন্যান্য কোম্পানিতে সম্পৃক্ততার শিরোনামে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে। ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নিয়মিত পরিচালনায় সক্রিয় থাকার প্রমাণাদি রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেড নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠিয়েছে।যথাযথ তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি সম্পন্ন হয়েছে বিধায় আইনের কোনো লঙঘন হয়নি বলে কমিশন মনে করেছে। তারপরও ইউনিভার্স নিটিং টেক্সটাইল কর্তৃপক্ষ রিং সাইনের যে ২৫ কোটি টাকার প্রি আইপিও শেয়ার বা প্লেসমেন্ট শেয়ার ধারণ করেছে তার লক ইন মেয়াদ বা ধারণ কৃত শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা এক বছরের পরিবর্তে বাড়িয়ে তিন বছর করেছে। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর পর এই ২৫ কোটি টাকার শেয়ার তিন বছর বিক্রি করা যাবে না। অর্থাৎ অতিরিক্ত দুই বছর এই টাকাটা আটকে থাকলো। যদিও কমিশনের আইনে অন্য কোম্পানির লকইনের মেয়াদ এক বছর রয়েছে।
কমিশনের সিদ্ধান্ত জানার পর সংশ্লিষ্ট অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক গোলাম সবুরকে এই প্রতিবেদক ফোন দেন। তিনি বলেন ‘আমাদের বক্তব্য ৬ নভেম্বরের প্রকাশিত সংবাদেই আছে।’ কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়ে ৬ নভেম্বর আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রসপেক্টাসের ১৯৫ পাতায় তাদের নজর এড়িয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। তাতে নিজেদের ভুলও স্বীকার করা হয়। তবে ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির যে কোথাও কেনো অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করা হয় তাতে অটুট থাকে অনলাইন পোর্টালটি।
ওই দিনের পোর্টালে লেখা হয়‘‘যারা গতকাল নিউজ করেছেন শেয়ারবাজার প্রতিদিনের বিপক্ষে (রিং সাইন নিয়ে ‘শেয়ারবাজার প্রতিদিন ডটকম’-এ মিথ্যা খবর) -এই শিরোনামটি আপনারা কেউ কি ইউনিভার্স নিটিং লিমিটেড কোথায় আছে তা সরেজমিনে দেখেছেন? কেন চাটুকারিতা করছেন। সংবাদকর্মীর ধর্ম সত্য সংবাদ প্রকাশ করা চাটুকারিতা নয়। আপনারা যারা শেয়ারবাজার প্রতিদিনের বিপক্ষে নিউজ করেছেন তারা কি কেউ দেখেছেন ইউনিভার্স নিটিং লিমিটেড কোথায় আছে ? এই প্রশ্নগুলো আমার ভুল গুলোকে শুধরে নেওয়া জন্যই করেছি।সেই সাথে দুঃখ প্রকাশ করছি রিংসাইন টেক্সটাইলের প্রসপেক্টাসের ১৯৫ পৃ: ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানি সম্পর্কে দেয়া তথ্য আমার নজরে আসেনি বলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তাই বলে পুরো সংবাদটি মিথ্যা হয়ে যাবে ? আসলে ভুল এবং মিথ্যা এক কথা নয়?

আমার সম্মানিত সহকর্মীরা ভুলটাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপন করে আসল সংবাদটি চেপে যাচ্ছেন যা শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী। আপনাদের মধ্যে কেউ কি আছেন যারা কালকে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন তারা ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানিটিকে দেখেছেন? অনেক খোঁজাখুঁজির পর যখন আমি ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানিটি পেলাম না। তখন আপনাদের সাহায্য আমার একান্ত কাম্য। ইউনিভার্স নিটিং রিং সাইনে যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বিনীয়োগ হয়েছে তা অত্যান্ত সন্দেহজনক বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে কারন উক্ত কোম্পানির বর্তমানে কোন কার্যক্রম এবং অফিস বা কারখানা নেই।’’

যদিও বিএসইসির আইনে ওই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব থাকা না থাকার বাধ্যবাধকতা নেই তবুও দুর্নির্বার কৌতুহল বশতঃ দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদক ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাদের অনুমোদন নিয়ে গত ১১ নভেম্বর গাজীপুরের টঙ্গীর সাতাইশ রোডে অবস্থিত তিন তলা ভবনে সরেজমিন পরিদর্শনের যান। দুপুর ২টার দিকে গাজীপুরের সাতাইশ রোডে পৌঁছান। ঢাকা ময়মনসিংহের প্রধান সড়ক থেকে বাঁম দিকে (পশ্চিমে) প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা অতি্ক্রম করলেও এলাকার কোন ব্যাক্তি এই প্রতিবেদককে ইউনিভার্স গার্মেন্টেস ঠিকানা বলতে পারেন নি। পরে একজন দোকানী বললেন, ‘এই নামের একটি গার্মেন্টস রয়েছে, তবে এলাকাবাসী এ নামে চেনেনা । এটা চায়না গার্মেন্টস নামে পরিচিত। আপনারা মেইন রোডের দিকে ফিরে যান। মেইন রোড থেকে ২০০ গজ পশ্চিমেই ইউনিভার্স গার্মেন্টেস। যাকে এলাকাবাসী চায়না গর্মেন্টস নামে চেনে। কেন এই নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘ গার্মেন্টেসের মালিক চায়নিজ নাগরিকতো তাই।’ ওই দোকানীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আবারও পেছনে দিকে গাড়ি ঘুরিয়ে প্রধান সড়কের কাছাকাছি আসতেই এলাকাবাসী চিনিয়ে দিলেন চায়না গার্মেন্টস।
চোখে পড়লো বিশাল গেটের ওপর ইউনিভার্স গার্মেন্টেস সাইন বোর্ড। সরেজমিনে দেখা গেছে প্রায় পাঁচ বিঘা জায়গার ওপর তিনতলা ভবন। এতে রয়েছে ৫৫ হাজার বর্গফুটের মোট তিনটি ফ্লোর। দুটি ফ্লোরে ইউনিভার্স গার্মেন্টেসের ৩১৩ কর্মী কাজ করছেন। নিচের ফ্লোরে মাল রাখা রয়েছে। দুই শিফটে এখানে প্রায় ৭শ কর্মী প্রতিদিন কাজ করেন বলে জানালেন ফ্যক্টরীর মহাব্যবস্থাপক কৃঞ্চ কান্ত দাস। ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে ফ্যক্টরীর একাংশে রাখা সুতা। সম্পূর্ণ কমিউটারা্ইজড পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে সোয়েটারের বিভিন্ন অংশ। সেসব সংগ্রহ তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ সোয়েটার। প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার পিস ফিনিশড সোয়েটার উৎপাদন হয়।
কয়েক ধাপে সুসম্পন্ন এসব সোয়েটার শেষ ধাপে এসে প্যাকটজাত করা হচ্ছে জাপানে রপ্তানীর জন্য। সম্পুর্ণ আন্তজার্তিক মান সম্পন্ন এই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে রয়েছে আলো বাতাসে ভরপুর খোলামেলা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। যা একোর্ডের সনদপ্রাপ্ত। এরকম একটি সোয়েটার ফ্যক্টরীকে অস্তিত্বহীন করে দিলো অনলাইন পত্রিকাটি।
একটি প্রতিবেদনে দুটি ভুল তথ্য: মুলত যে তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে তার প্রধান দুটি তথ্যই ভুল। প্রথমত: রিং সাইন টেক্সাটাইলের প্রায় ২৫ কোটি টাকার শেয়ার ধারণকারী কোম্পানি ইউনিভার্স নিটিং টেক্সটাইল অস্তিত্বহীন কম্পানি নয়। তার সরব অস্তিত্ব রয়েছে। দ্বিতীয়তঃ অনলাইনটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ইউনিভার্স নিটিং টেক্সটাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিস্টার সুং ওয়ে মিন রিং সাইন টেক্সাটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক- এই তথ্য গোপন করা হয় বলে যে দাবি করা হয়েছে সেটাও ভুল বা মিথ্যা। বিএসইসির কাছে যে প্রসপেক্টাস জমা দেওয়া হয়েছে তার ১৯৫ নং পাতায় এ সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
এ হেন সাংবাদিকতায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। সংশ্লিষ্ট কোম্পানী ও শেয়ারবাজার বিভিন্ন অংশীজনদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।

কেন এই সাংবাদিকতা?

শেয়ারবাজার প্রতিদিন ডটকমের প্রতিবেদন নিয়ে বিএসইসি তদন্ত করতে গিয়ে রিংসাইনকে তথ্য প্রদান করতে নির্দেশ দেয়। জবাবে রিং সাইন বিএসইসিকে জানায় ২০ অক্টোবর ওই নিউজ প্রকাশের আগে অনলাইন পোর্টালের নির্বাহী সম্পাদক গোলাম সবুর (এফসিএমএ) প্রতিবছর ২৪ লাখ টাকা করে পাচ বছরের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রস্তাব পত্র বা অফার লেটার পাঠান। রিংসাইন কম্পানি কর্তৃপক্ষ অস্বাভাবিক ও অনৈতিক বলে এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে। তারা ওই নিউজটিকে মিথ্যা উদ্দেশ্যমুলক ও অতিরঞ্জন বলে বলে উল্লেখ করে।

গতানুগতিক ভাবে সংবাদপত্রের নিউজের প্রতিবাদে যেসব শব্দ প্রয়োগ করা হয় এ ক্ষেত্রেও তা প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে দ্য রিপোর্টের এই প্রতিবেদকের কাছে এই শব্দের প্রয়োগ যথাযথ হয়েছে বলে সরেজমিন পরিদর্শনের পর প্রতীয়মান হয়েছে।

রিংসাইন কোম্পানি সংশ্লিষ্ট কোম্পানি সচিব আশরাফ আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, গোলাম সবুর সাহেব বিজ্ঞাপন বাবদ ২৪ লাখ টাকা দাবি করেছেন। মুলত ওই বিজ্ঞাপন না দেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে এই নিউজ।
একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক গোলাম সবুর (এফসিএমএ)একজন কস্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্ট। আগে তিনি দুটি কম্পানির শীর্ষ পদে চাকুরী করেছেন। দুটি কম্পানি থেকে চাকুরী ছেড়েছেন অথবা চাকুরীচ্যুত হয়েছেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত অবস্থায় তিনি উপলব্ধি করেছেন কোম্পানির প্রাইস সেনসেটিভ ইনফরমেশন( পিএসআই) প্রচারের জন্য অনলাইনে যে বিজ্ঞাপন দিতে হয় তার পরিমাণ অনেক। তালিকাভুক্ত প্রায় সাড়ে তিনশ’ কোম্পানির পিএসআই বাবদ প্রতি তিন মাস পরপর আয়ের পরিমাণ অনেক। এছাড়া আইপিওর আগে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অনলাইনগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার একটা অলিখিত নিয়মও চালু রয়েছে, যেখান থেকেও ভালো টাকা মুনাফা করা সম্ভব। এসব বিবেচনায় তিনি নেমে পড়েন আইপিওর আবেদন করা কোম্পানির প্রসপেক্টাসের ফাঁকফোঁকর বের করে মোটা অঙ্কের টাকা বিজ্ঞাপন বাবদ আদায়ে। সে ক্ষেত্রে প্রথম শিকার হয় রিং সাইন তথা ইউনিভার্স নিটিং টেক্সটাইল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম সবুর ১২ নভেম্বর সকালে দ্য রিপোর্টকে বলেন ‘‘ আমার প্রতিবেদক গাজীপুরের সাতাইশ রোডে যেয়ে ইউনিভার্স নিটিং টেক্সটাইল নামের কোনো কম্পানির অস্তিত্ব পাননি।
বিজ্ঞাপন দিতে রাজী না হওয়ায় এমন নিউজ করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আমাকে বিজ্ঞাপন দিতে চেয়েছিলো। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে এই নিউজের কোনো সম্পর্ক নেই্। কোম্পানির প্রসপেক্টাসের ফাঁকফোঁকর বের করে বিজ্ঞাপন বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে এই পেশায় এসেছেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের দাবি অযৌক্তিক। আমি এই পেশায় আসাতে অনেকে ঈর্ষান্বিত। অনেকে আতঙ্কিত। আমি একটি কোম্পানির প্রোসপেক্টাস দেখলেই বলে দিতে পারে কোথায় কোন ঘাপলা আছে। আমি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য এই পেশায় এসেছি। আপনাদের সহযোগিতা দরকার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সাংবাদিকতা কি এতো সহজ । এতটা নৈতিকতাহীন পেশা। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এ পেশায় প্রবেশ করতে পারবে?
নি:সন্দেহে মি. গোলাম সবুর একজন মেধাবী একাউন্টেন্ট। কিন্তু তিনি হঠাৎ করেই সাংবাদিকতায় চলে আসলেন। একটি অনলাইন চালু করে তাতে রিপোর্ট করলেন, তাতে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রিং সাইন কোম্পানির প্রসপেকটাস ঘেটে আরো দুর্বলতা ও ফাঁক-ফোঁকর বের করে আনুক আমরা এটা চাই্। আমরা চাই গোলাম সবুরের মতো মেধাবীরা এ পেশায় আসুক। তবে কোনো সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নিয়ে নয়। পূঁজিবাজারের বিষয়ক রিপোটিং এ গোলাম সবুরের মতো দক্ষ একাউন্টেন্ট দরকার। তবে তার আগে দরকার একজন সৎ ও দক্ষ সাংবাদিক।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/নভেম্বর১২,২০১৯)