দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: শৃঙ্খলাজনিত কারণে এর আগেও বেশ কয়েকবার শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে শাহাদাত হোসেনকে। তবে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেননি বাংলাদেশ দলের এই সিমার।

দেশের ক্রিকেটে ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে পরিচিত এই ডানহাতি পেসারকে এর আগে নিজ বাসার শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে জেলেও যেতে হয়েছিল। একই মামলায় জেলে ছিলেন তার স্ত্রীও। এ কারণে তাকে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে হয়েছে অনেক দিন। পরে জীবন জীবিকার কথা ভেবে তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বিসিবি।

শাহাদাতের বয়স এখন ৩৩। এই বয়সেও মেজাজ এতটুকুও কমেনি বাংলাদেশ দলের এক সময়কার নিয়মিত এই সদস্যের। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে রোববার। এদিন জাতীয় ক্রিকেট লিগের ষষ্ঠ রাউন্ডের ম্যাচে সতীর্থ আরাফাত সানি জুনিয়রকে মাঠের মধ্যেই বেধরক মারধর করেন শাহাদাত। তাও আবার ঠুনকো ‘অপরাধে’।

ম্যাচ চলাকালীন সতীর্থ অফ স্পিনার আরাফাত সানি জুনিয়রকে বল ঘষে দিতে বলেন শাহাদাত। প্রথমে বল ঘষে দিতে অস্বীকৃতি জানান আরাফাত। এর পর হালকা কথা কাটাকাটি শুরু। শাহাদাতের কথায় উত্তর দেন আরাফাতও। এর পরই তাকে চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করেন শাহাদাত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রথমে চড়, পরে আরাফাতকে লাথি মারা শুরু করেন তিনি। আম্পায়ার এসে সরিয়ে দেয়ার পরও শাহাদাত আবার গিয়ে মারতে থাকেন। পরে সতীর্থরা তাকে একরকম জোর করেই নিয়ে যান মাঠের বাইরে। এ ঘটনায় সব ধরনের ক্রিকেট থেকে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ হয়েছেন ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন।সতীর্থের গায়ে হাত তোলার ঘটনায় দুই বছরের স্থগিত নিষেধাজ্ঞাসহ পাঁচ বছরের জন্য তাকে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি তিন লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে এই পেসারকে।

মঙ্গলবার সকালে বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভাশেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। আগামী ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত এই শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পাচ্ছেন শাহাদাত।

ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ ওই দিন ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধানের কাছে। সেই অনুযায়ী বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি আজ সিদ্ধান্ত নিল।

খেলা চলাকালে সতীর্থ বা অন্য কারো গায়ে হাত তোলা আচরণবিধির লেভেল ৪ ভঙ্গ করার অপরাধ। এই ধারা ভঙ্গ করলে সর্বনিম্ন ১ বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। আচরণবিধির লেভেল ফোর অপরাধের দায়ে রোববার ম্যাচের শেষ দুদিন বহিষ্কার করা হয় শাহাদাতকে।

এর আগে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে জেল থেকে ফিরেও সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন শাহাদাত। জেলে যাওয়ার কারণে ওই সময়ে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে তাকে নিষিদ্ধ করেছিল বিসিবি। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জীবিকার কথা ভেবে আবার ক্রিকেটে ফেরার অনুমতি দিয়েছিল বিসিবি।

এদিকে পেসার শাহাদাত এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত। ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। সোমবার এ ঘটনার পর ৩৩ বছর বয়সী এ পেসার বলেন, ‘আমি অনেক বড় ভুল করেছি। ওই কর্মকাণ্ডের জন্য আমি লজ্জিত, দুঃখিত। আমি অনুতপ্ত।’ তিনি বলেন, ‘আমার মাথা ঠিক ছিল না। এখন বুঝতে পারছি কাজটি ভালো হয়নি। আমি বিসিবিতে গিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করব। কৃতকর্মের জন্য বোর্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুতাপ ও দুঃখ প্রকাশ করব।’

বাংলাদেশের হয়ে ৩৮ টেস্ট, ৫১ ওয়ানডে ও ছয়টি টি২০ খেলেছেন শাহাদাত। সবশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন ২০১৫ সালে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/নভেম্বর ১৯,২০১৯)