দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: বিশ্বের ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকটগুলোর একটি হলো এইডস। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটিরও বেশি। এছাড়াও বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৪ কোটি। বিশ্বব্যাপী আজ নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এইডস দিবস। বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। কিন্তু তবুও এই রোগটি নিয়ে রয়ে গেছে বেশকিছু ভ্রান্ত ধারণা।

মশার মাধ্যমে এইডস ছড়ায়
অনেকেই মনে করেন, মশার কামড়ে এইডস ছড়িয়ে পড়ে। কারন মশা একই ঘরে থাকা মানুষজনকে কামড়াতে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ে যদি সুস্থ কাউকে কামড়ায় তাহলে তার মধ্যেও এইডস চলে যায়। এটা ভুল ধারণা।

যদিও রক্তদ্বারা এই ভাইরাস ছড়ায় কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে মশা বা রক্ত খায় এমন কিট দ্বারা আপনি আক্রান্ত হবেন না। তার দুটি কারণ। একটি হল একজনের শরীর থেকে রক্ত খেয়ে সে সেই রক্ত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তির শরীরে ইনজেকশন দেয়ার মতো করে রক্ত ঢুকিয়ে দেয়না। আর মশা বা অন্য কিটের শরীরে এই জীবাণু খুব সামান্য সময় বেঁচে থাকে।

এইচআইভিতে আক্রান্তরা খুব তাড়াতাড়িই মারা যায়
কম বেশি আমাদের সবার ধারণা হলো, এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষ আর বেশিদিন বাচে না। কিন্তু এই ধারনা ভুল। ইদানীং নানা ধরনের চিকিৎসার জন্য এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তিও দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারছেন। জাতিসংঘের এইডস বিষয়ক সংস্থা বলছে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৭ শতাংশের ক্ষেত্রে এইচআইভি জীবাণুর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ তারা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে দীর্ঘদিন স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন।

এইডস আক্রান্ত মায়ের সন্তান এইডস আক্রান্তই হবে
প্রচলিত ধারণা হচ্ছে আক্রান্ত নারী সন্তান জন্ম দিলে তার শিশুরও শরীরে এই জীবাণু চলে যাবে। কিন্তু সবসময় সেটি নাও হতে পারে। আক্রান্ত মায়ের শরীরের জীবাণুর মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে সন্তান জন্মদানের সময় সে শিশুকে আক্রান্ত নাও করতে পারে।

এইডসে আক্রান্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই মানুষ শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে
অনেকেই মনে করেন, এইডসে আক্রান্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই মানুষ তার স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। এই জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার পরও একজন ব্যক্তির শরীরে দীর্ঘ দিন কোন রকমের লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে। এভাবে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি দশ থেকে পনেরো বছরও বেঁচে থাকতে পারেন। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর শুরুর কয়েকটি সপ্তাহের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাব দেখা দিতে পারে, হালকা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীরে র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা দেবে যখন ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করাই এইচআইভির মুল বিপদ। আক্রান্ত প্রতি চারজনের একজন ব্যক্তি জানে না যে সে এইডস আক্রান্ত। প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকলে কাশি, ডায়রিয়া, লিম্ফ নোড বা চামড়ার নিচে ফুলে যাওয়া গোটার মতো দেখা দেবে, ওজন কমে যাবে। চিকিৎসার অভাবে আরও ভয়াবহ অসুখও হতে পারে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে সামান্য অসুখেও মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয় যদি তার চিকিৎসা না নেয়া হয় কারণ শরীর তার স্বাভাবিক নিয়ে আর অসুখের সাথে লড়াই করতে পারে না।

আক্রান্তদের সাথে সাধারণ মেলামেশায় এইডস ছড়ায়
২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করতো যে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্পর্শ করলে বা তার ত্বক ও মুখের লালা দ্বারা যে কেউ এইডস আক্রান্ত হয়ে পড়বেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। একই বাতাসে নিশ্বাস নিলে, হাত মেলালে, জড়িয়ে ধরলে, চুমু খেলে, একই পাত্রে খাবার খেলে, পানি খেলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত ব্যক্তিগত সামগ্রী ব্যবহার করলে, তার ব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার করলে আপনিও এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/ডিসেম্বর ০১,২০১৯)